Sunday, January 17, 2021

 

কাজী রাফির গল্প: প্রতারক

তারকা এক হোটেলে সারাদিন অতিথিদের অভ্যর্থনা এবং রুম পর্যন্ত লাগেজ পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকতে থাকতে, দেশী-বিদেশি মানুষগুলোর আনাগোনা দেখতে দেখতে গাজী নাহিদ কিছুদিনের মধ্যে যেন পুরো ঢাকা শহরটাকেই চিনে ফেলল। কাছ থেকে দেখা তরুণ-তরুণী, অথবা সুন্দরী নারীকে বগলদাবা করা মধ্যবয়সী পুরুষের নিত্যনতুন জীবনের রঙিন অংশটুকু তাকে জীবন-ধারণের গোপন এক সূত্র শেখাল। এই চেনা আর শেখাটুকুর আত্মবিশ্বাসে সে অদ্ভুত এক সিদ্ধান্ত নিয়ে বসল। মোবাইলে ফোনে সংরক্ষিত হোটেলের নিয়মিত কিছু কাস্টমারের মোবাইল নাম্বার সে নোট বইয়ে টুকে নিল। তারপর কর্তব্য শেষে হোটেল কর্তৃপক্ষকে কিছুই না জানিয়ে সে পালিয়ে গেল।

তার সেই অদ্ভুত খেয়াল চরিতার্থের জন্য প্রথমেই সে ঢাকার অভিজাত পল্লিতে এক বাসা ভাড়ার নেওয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু বাসা ভাড়া নেওয়ার আগেই অগ্রিম টাকার অঙ্ক শুনে তার চোখ কপালে উঠল। তবু দমাবার পাত্র সে নয়। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে সে আপাতত টিনের চালা দেওয়া দুই রুমের এক বাসা ভাড়া করে তবেই গ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করল। বাড়ি ফিরে রাতের খাবার খেতে খেতে যেন সোনার খনির সন্ধান পেয়েছে এমন ভংগিতে স্ত্রী তাঞ্জিলাকে বলল,
‘বুঝলে বউ, ঢাকায় পাকাপোক্তভাবে বসবাসের জন্য বন্দোবস্ত করে এসেছি। এবার তোমাদের সবাইকে নিয়ে তবে ঢাকায় ফিরব।’ তাঞ্জিলা অবাক হয়ে অবিশ্বাসের ভঙিতে বলল,
‘কী বলো? তোমার বেতনে তো সংসার চলে না। গ্রামে সামান্য আবাদী জমি আমাদের সংসারের লক্ষ্মী। ঢাকায় গেলে ঐটুকু জমি আবাদ হবে কীভাবে?’ নাহিদ স্ত্রীর কথায় মিটমিট করে হাসে। যেসব স্বপ্ন ঢাকা থেকে সে থলেতে ভরে এনেছে তাই-ই একে একে বের করে তাঞ্জিলার অন্তরে স্থায়ী হয়ে বাস করা স্বপ্নকে কাঁপিয়ে দেয়। স্বামীর ভয়ংকর পরিকল্পনা শুনে সে বলে,
‘বুঝলাম জমি বেঁচে তুমি দুইমাসের অগ্রিম বাসা ভাড়া দেবে, কিন্তু প্রতিমাসে এত বাসা ভাড়া, মেয়েকে ভালো স্কুলে পড়ানো –এত টাকা পাবে কোথায়?’ নাহিদ ইশারায় স্ত্রীকে কাছে ডাকে। কানে কানে ফিসফিস করে তার পরবর্তী জীবন ধারণের পরিকল্পনার কথা বলে যায়। তাঞ্জিলা যেন ভুল শুনছে; চোখ কপালে তুলে, মাথার ঘোমটার একাংশ কামড়ে ধরে, ভাষাহীন অভিব্যক্তিতে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে সে। তারপর চোখে টলটল জল এনে বলে,
‘ছিঃ ছিঃ! জ্বিনা করতে আসা লোকজনের টাকায় আমাদের সংসার চলবে? পাপ দিয়ে স্বপ্ন পূরণ করার ইচ্ছা খুব খারাপ, তমার বাপ! তুমি যাও, তোমার সাথে আমরা ঢাকা যেতে চাই না।’ স্ত্রীর কথায় গাজী নাহিদের মাথায় আগুন জ্বলে উঠল। হঠাৎই চুলার আগুন ধরানো কাঠ দিয়ে সে স্ত্রীকে বেদম প্রহার করতে করতে বলল,
‘হারামজাদী! তোর ভাতার তো এতদিন ওদের পাপ কামের পাহারাদার ছিল। সেই কামাইয়ের পয়সা খেতে পারিস আর এখন তুই আমার সাথে যাবি না? এদেশে যারা তোর বড় বড় বাপ তারা এই কাম করে সমাজে মানি লোক হতে পারলে, আমি সামান্য সংসার চালাতে পারি না?’
মধ্যরাতে তাঞ্জিলার ঘর্মাক্ত নগ্ন শরীরে স্পষ্ট হয়ে ওঠা প্রহারের চিহ্নে আদর বুলাতে বুলাতে নাহিদ গাজী আবেগী কন্ঠে বলে, ‘বউ, বুড়া বয়সে গ্রামে এসে জমি চাষ করে খাই, তুমি তাই চাও? তার চেয়ে তো মরা ভালো।’
‘কিন্তু তোমার মেয়ে যদি জেনে যায়…’
‘স্কুল, প্রাইভেট এসবে ব্যস্ত থাকবে মেয়ে। সেই সময়টুকু এসব তুমি সামলাবে।’
‘আমি কেন?’
‘বাড়ির ছেলেমানুষ এগুলো করছে জানলে মেয়েগুলো প্রেমিকদের অন্য কোথাও ‘ডেটিং’ করার কথা বলবে। ডেটিং মানে বোঝো? তাছাড়া আমি বাসায় থাকলে, মেয়েকে কী জবাব দেবে? ডাকাতি করে পয়সা কামাই করি?’
‘বাইরে সারাদিন কী করবা?’
‘জমি কেনা বেচার কৌশল শিখব। শুনেছি, টাকা ছাড়াই থার্ড পার্টিকে জমি দেখিয়ে অগ্রিম নিয়ে প্রথম পার্টিকে পেমেন্ট করা যায়… যাহোক, এসব তুমি বুঝবা না।’

২.
জমি,বাড়ি সবই বিক্রি করে দেয় নাহিদ। চোখের জলে বুক ভাসিয়ে, সংসারের টুকিটাকি জিনিসপত্র ছোট্ট এক ট্রাকে ভরিয়ে মেয়েকে পাশে বসিয়ে ঢাকা নামের এক জগতের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায় তারা। ঢাকা পৌঁছে বেদনাবিধূর চোখে তাঞ্জিলা স্বামীর মুখপানে তাকাল। গ্রাম থেকে অপরিচিত এই ঢাকা শহরে এসে তার মাথা ভোঁ ভোঁ করছে। হাজার হাজার দালান-কোঠা আর অযুত জনস্রোতের ভিড়ে তাঞ্জিলার দম বন্ধ হয়ে আসে। বস্তির পাশে টিনের চালা দেওয়া বাসাটায় ঢুকে, গ্রামের ফেলে আসা বাড়িটার জন্য তার কান্নার ঢেউ উথলে উঠছে।

বাসা ভাড়া নিতে গিয়ে অগ্রিম টাকা দিতে চাইলেও কয়েকজন বাড়িওয়ালা নাহিদের সামাজিক অবস্থান সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না পাওয়ায় তাকে ফিরিয়ে দিল। সুতরাং সে নিজের সামাজিক অবস্থান তৈরির অংশ হিসেবে নিজেকে অলীক এক কোম্পানীর এক্সিকিউটিভ অফিসার দেখিয়ে ভিজিটিং কার্ড বানিয়ে নিল। নীলক্ষেত থেকে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় হতে ব্যবসায় প্রশাসনে মাস্টার্স পাশের নকল সনদপত্র বানিয়ে নিল।
এবার অভিজাত পাড়ায় নাহিদ সহজেই বাসা ভাড়া পেল। সমাজের নামী দামী লোকদের সাথে বানোয়াট দহরম-মহরম সম্পর্কের কথা বলে উল্টা বাড়িওয়ালার মনোযোগ আকর্ষণ করল।

রাজধানীর ঝকঝকে তকতকে বাড়িতে উঠে তাঞ্জিলা এবার সত্যিই স্বামীর মেধার প্রতি অনুরক্ত হয়ে উঠল। তারকা হোটেলে চাকরির সুবাদে তাস খেলতে আসা এক নেতাকে মাঝে মাঝে মদ সরবরাহ করত নাহিদ। নেতার দুর্বল মুহূর্তটুকু কাজে লাগিয়ে মেয়েকে ভর্তি করাল ভালো স্কুলে। তারপর দুজন মিলে ভাড়া নেওয়া বাসাটার এক কক্ষকে গোছানোর কাজে মনোযোগ দিল। দামি পর্দা, ছোট একটা ফ্রিজ, বিছানার মখমলে চাদর, অ্যাটাচ বাথরুমে বিদেশি টয়লেট্রিজ দিয়ে সাজাল সেই ঘর। ততদিনে তাদের বাস্তুভিটা, আবাদী জমি বিক্রির টাকা প্রায় নিঃশেষ হয় হয়। একদিন দুরু দুরু বুকে সে এক ধনীর নষ্ট দুলালকে ফোন করল,
‘পাপ্পু ভাই, আমি নাহিদ গাজী। ঐ যে…। ম্যাডামদের নিয়ে হোটেলে গিয়ে আপনাকে আর অত পয়সা খরচ করতে হবে না। বাড়ি ভাড়া নিয়েছি। হোটেলের মতো সুন্দর করে গোছানো এক ঘরে আপনি নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন।’

মেয়ে তমার স্কুল সময়টুকুতে প্রতিঘন্টা হাজার টাকায় ভাড়া দেওয়া ঘরটা প্রেমিক-প্রেমিকা,কলগার্ল বগলদাবা করা পুরুষের কাছে মহার্ঘ্য হয়ে উঠল। আর অবিশ্বাস্য দ্রুততায় হাতে কাঁচা পয়সা পেয়ে তাঞ্জিলাও বদলে যেতে থাকল। অনেক যুগল দুই/তিন ঘন্টার জন্য রুম ভাড়া নিয়ে তাঞ্জিলার কাছে টাকার বিনিময়ে খাবার চেয়ে বসে। নতুন এই সেবাতে অর্থের সমাগমটুকু তাঞ্জিলা স্বামীর কাছ থেকে গোপন করল। নাহিদ নিজেকে এই জগৎ থেকে দূরে রাখতে ভ্যাগাবন্ডের মতো সারাদিন এদিক-সেদিক নতুন নতুন অর্থ উপার্জনের পথ খুঁজে বেড়ায়। একসময় নাহিদের ফোন ছেড়ে তাঞ্জিলার সাথে ফোনে কন্টাক্ট করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে কাস্টমাররা।

আয়ের সাথে বেড়ে যাচ্ছে তাদের লাগামহীন খরচ। বাসার দারোয়ান, কেয়ারটেকার এমনকি সিঁড়িঘর ঝাড়ু দেওয়া বুয়াটা নাহিদের অপকর্ম গোপন রাখার শর্তে প্রত্যেক মাসে টাকা দাবি করে বসছে। বেড়ে যাচ্ছে মেয়ের খরচ। ল্যাপটপ, মোবাইল থেকে শুরু করে নিত্যনতুন চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হলেই তমা স্কুলে না যাওয়ার হুমকি দিয়ে বসে।

দিন দিন নাহিদের অতিথিশালার চাহিদা বাড়তে থাকে। কাস্টমারের চাহিদা মেটাতে তারা গোপনে কখনো কখনো রাতেও কক্ষটি ভাড়া দেওয়া আরম্ভ করল এবং তাঞ্জিলার পরামর্শে নাহিদ একনাগাড়ে এক বাসায় না থাকার সিদ্ধান্তে দুই/তিন মাস পর পর বাসা বদলাতে থাকল। বাসা বদলেই স্বামী-স্ত্রী দুজনেই বদলে ফেলে তাদের মোবাইল সিম। পুলিশি ঝামেলা এড়াতে এই মোবাইল সিম তারা ভিক্ষুকদের পাঁচশ টাকা ঘুষ দিয়ে সহজেই সংগ্রহ করে। আর টাকা নিয়ে ঝামেলা পাকানো লোকগুলোকে তাঞ্জিলা প্রতিবার সযত্নে তার ডায়েরি-তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেয়। ঝামেলা পাকানো কাস্টমার জনবহুল ঢাকা শহরে তাঞ্জিলার আর সন্ধান পায় না।

বাসায় এখন সব পরিচিত বাঁধা কাস্টমার আসে। প্রতি যুগল অতিথিকক্ষে ঢুকে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেওয়ার পর তাঞ্জিলার হার্ট-বিট তার অজান্তেই বেড়ে যায়। বাড়তেই থাকে। মাঝে মাঝে দরজায় কান লাগিয়ে সে ঘরের ভিতরের শব্দ শোনার চেষ্টা করতে গিয়ে সেই হৃদস্পন্দনে আনল অস্বাভাবিক গতি।

একদিন ঘটল অদ্ভুত এক ঘটনা। একজন কাস্টমার তার সঙ্গিনী ছাড়াই এসে হাজির! ঘরে ঢুকে তাঞ্জিলাকে সে কাছে ডাকল। তাঞ্জিলা ঢিপ ঢিপ বুকে তার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। যুবকের চোখে কামনার লেলিহান শিখা। তাঞ্জিলাকে সে বলল,
আজ সাথী পাইনি। আপনি সংগীনি হলে ঘন্টায় পাঁচ হাজার…
তাঞ্জিলা অর্থের চেয়েও তার বুকের মাঝে দিন দিন জেগে ওঠা এক অদম্য কৌতূহলের নেশা আর অতিক্রম করতে পারল না। সুতরাং তারপর থেকে মাঝে মাঝে কৌতূহলের এই রহস্যময় জগতে অবগাহন-আনন্দে ডুবতে ডুবতে তাঞ্জিলা ভুলেই গেল তার সবুজ-শ্যামল গ্রামটির কথা। যেখানে সে ফেলে এসেছে চন্দ্রমুখি এক ছাগলছানা। ছানাটি জন্ম দিয়ে মা ছাগল মারা গিয়েছিল বলে প্রবল বৃষ্টির দিনে ছানাটিকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে ফিডারে গরুর দুধ ভরিয়ে নিয়ে সে খাওয়াত। কৌতূহলের ঘোর লাগা এই জগতে ডুবতে ডুবতে তাঞ্জিলা আরো ভুলে গেল, রিমঝিম রিমঝিম বৃষ্টির ক্ষণে উদাস ভঙিতে প্রায় ডুবে যাওয়া সবুজ মাঠটার পানে তাকিয়ে স্বর্গীয় এক অনুভূতিতে সে ভেসে যেত।

৩.
বড় হতে হতে, বাসায় ভিন্ন ভিন্ন যুগলদের আসা-যাওয়া দেখতে দেখতে তমা তাদের চোখ নামের জিহবায় জেগে থাকা ভাষাটা চিনতে শিখল। এক মধ্যরাতে চুপি চুপি অতিথিকক্ষের দরজায় কান রাখার পর, ঘরের ভেতর থেকে ভেসে আসা নেশা জাগানো শব্দগুলো তমার মনে কেমন এক নেশা ধরানো অশান্ততা তৈরি করল। তারপর থেকে তার রাতের ঘুম এলোমেলো হয়ে গেল। রাত জেগে ফেসবুকে ছেলেদের প্রোফাইল ঘাটতে ঘাটতে সুদর্শন এক যুবকের ইনবক্সে তমা লিখল— ‘হ্যেই, হ্যান্ডসাম!’ তারপর থেকেই কলেজে অনিয়মিত হয়ে গেল তমা। তার চেয়ে বসুন্ধরার সিনে কমপ্লেক্স, কেএফসি হয়ে গোপন কোনো আড্ডাস্থলে সে নিয়মিত হতে থাকল।

অন্যদিকে পাঁচ তারকা হোটেলের ছায়াজীবনে অভ্যস্ত নাহিদ সূর্য নামের একটি তারকার প্রচণ্ড খরতাপেও টাকার নেশায় ঢাকা শহরে টো টো ঘুরতে ঘুরতে মেয়ের রঙিন এই জীবনের সন্ধান পেল না। আর তার স্ত্রীর জীবনে মহামারি হয়ে আসা টাকা নামের বস্তুটাকে লুকানোর নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা তাঞ্জিলাও মেয়ের অধঃপতন ঘুণাক্ষরেও আঁচ করতে পারল না। তবে মায়ের অধঃপতন মেয়ে নিজের স্বার্থেই খুঁজে বের করল। দিন দিন টাকার প্রয়োজন বাড়তে থাকায় তমা মায়ের দুর্বলতম এই স্থানটির যথোপযুক্ত ব্যবহার করা শুরু করল। বাবার কাছে প্রয়োজনীয় টাকা না পেলেই মাকে জিম্মি করে সে ইচ্ছেমতন টাকা খসানোর অভ্যাসে অভিযোজিত হয়ে গেল। জামা বদলানোর মতো ছেলেবন্ধু বদলানো তমার জন্য আজকাল আর কোনো ব্যপার নয়।

এক বিকেলে তমা এসে তাঞ্জিলাকে বলল, ‘বাবাকে নিয়ে আগামী শুক্র-শনিবার দূরে কোথাও বেড়াতে যাও।’
‘কেন? তুমি যাবে আমাদের সাথে?’
‘না, ঐ দুইদিন বন্ধুদের নিয়ে বাসায় পার্টি করব।’
‘আমরা বাসায় থাকলে সমস্যা কী?’
‘অনেক সমস্যা। বাইরে ভালো কাপড় পড়েও আমার বন্ধুদের কাছে যদি তোমাদের ভেতরের খবর যদি বের হয়ে পড়ে !’
সুতরাং একটা গাড়ি ভাড়া করে তাঞ্জিলা স্বামীকে বুঝিয়ে গাজীপুরের এক বাংলো বুকিং দিল। ভাড়া করা ট্যাক্সি ক্যাব নিয়ে সেখানে যাত্রা করল শুক্রবার ভোরে। পথিমধ্যে দূর্ঘটনায় পতিত হয়ে মাথায় জখম হলো নাহিদের। তমাকে তাঞ্জিলা কিছুই জানাল না। হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর আহত স্বামীকে নিয়ে বাসায় ফিরে অনেকক্ষণ কলিং বেল চেপে ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে তমার মোবাইলে ফোন করল। মোবাইল বন্ধ। অবশেষে তমা দরজা খুলল। বাসার ভেতরে পাঁচজন ছেলে এবং তিনজন মেয়ের বেশভূষা আর চোখ-মুখের চাউনিতে কী যেন লুকানোর প্রবণতা। অতিথি কক্ষে দুটা ক্যামেরা-স্ট্যান্ড তখনো দাঁড় করিয়ে রাখা। সবকিছু দেখে হতভম্ব ভঙিতে তাঞ্জিলা প্রশ্ন করল,
‘তোর অসুস্থ্য বাবাকে নিয়ে কখন থেকে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছি। এতক্ষণ লাগে দরজা খুলতে?’ বাবার মাথায় ব্যান্ডেজ দেখেও বিকার নেই তমার। বিরক্ত আর কর্কশ স্বরে সে প্রত্যুত্তর করল,
‘অসুস্থ্য হলে তো হাসপাতাল আছে। তোমাদের বলেছিলাম দুইদিন বাসায় আসবে না। তোমাদের জন্য বন্ধুদের কাছে আমি ‘ছোট’ হয়ে গেলাম!’

মেয়ের আচরণে শঙ্কিত নাহিদ কোনো কথা না বলে ধীরপায়ে তালাবদ্ধ স্টোররুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করল। মাত্র কয়েকদিন আগে অতিরিক্ত আয়ের উৎস তৈরি করতে গিয়ে সে অতিথি কক্ষে তাঞ্জিলার অজান্তে গোপন-ক্যামেরা বসিয়েছিল। আজ প্রথম গোপন ক্যামেরায় ধারণ করা দৃশ্য দেখতে গিয়ে সে কম্পিউটারে চোখ রাখল। কম্পিউটারে যে দৃশ্য এখন সে দেখছে তা বিশ্বাস করতে নাহিদের কষ্ট হচ্ছে। তার মেয়ে ভিডিও করার আগে পয়সা নিয়ে লম্বা চুলওয়ালা ছেলেটার সাথে দর কষাকষি করছে!

নাহিদের জীবন থেকে ‘লজ্জা’ নামক বস্তুটা কবে চিরবিদায় নিয়েছিল! সেই ‘লজ্জা’ই আজ ফিরে এসে তাকে দু’চোখ ঢাকতে বলছে। কোন এক দূর অতীতে মিলিয়ে যাওয়া তার ছোট্টবেলার শিক্ষকের মুখটা ভেসে উঠছে। নাহিদ তখন তার গ্রামের স্কুলের অষ্টম শ্রেণিতে। আষাঢ়ের তুমুল বৃষ্টির এক দিনে তার শিক্ষক বলছেন— ‘শোন রে গাধার দল! মগ্নতা ছাড়া ভালোবাসা, সাধনা ছাড়া সফলতা, পরিশ্রম ছাড়া অর্থ উপার্জন, বই ছাড়া আত্মার পরিশুদ্ধি হয় না।’ মেয়ে আর স্ত্রীর প্রতি চিৎকার করে সে বলতে চাইল—’প্রতারক!’ কিন্তু তার আগেই চেয়ার থেকে ঢলে পড়ল তার শরীর। দূরে, অনেক দূরে, এক পাতাঝরা গ্রীষ্মের বিকেলে, তার গ্রামে কাটানো আষাঢ়ি বর্ষার মেঘলা দিনে তার শরীর যেন ভেসে ভেসে যাচ্ছে। এক অদ্ভুত দৃশ্য ভাসছে তার চোখের সামনে তার বাবা নজিবরের শরীরের নিচে তমার বয়সী এক তরুণীর নগ্ন শরীর। হাত-পা ছুড়ে সে তরুণী তার বাবাকে চিৎকার করে বলছে— ‘প্রতারক’।

৪.
নাহিদ তখন সাত/আট বছরের এক শিশু। মাথার উপর দিয়ে মাঝে মাঝে যুদ্ধবিমানগুলো উড়ে যায়। গোলাগুলির শব্দ অনেকটাই কমে এসেছে। যুদ্ধের শেষ দিনগুলোর এক মেঘলা বিকেলে তার বাবা গাজী নজিবর এসে তাকে বলল,
‘তাড়াতাড়ি পাজামা-পাঞ্জাবিটা পড়ে নে।’ পাজামা-পাঞ্জাবি পরা হলে নাহিদকে সে আবার বলল,
‘শোন, দস্তগীর বাড়ির সবাইকে পাকিস্তানিরা গুলি করে মেরেছে। তার মেয়ে মেহেরুনকে আমি ময়েনুদ্দিনের বাড়িতে লুকিয়ে রেখেছি। সে আমার সাথে একা যেতে চায় না। তুই বলবি, ওর সাথে তোকেও আমি নিরাপদ জায়গায় রাখতে যাচ্ছি। ঠিক আছে?’
বাবার কথায় ‘হ্যাঁ’ সূচক মাথা দুলায় নাহিদ। এই দস্তগীরের বাড়িতে ছোটবেলা থেকে বড় হয়েছে নজিবর। দস্তগীরদের জোত-জমি সে-ই দেখাশুনা করে। মেহেরুন নামের দস্তগীরের রূপসী কন্যা যত বড় হতে থাকল নজিবরের লোলুপ দৃষ্টি তার মেঘবরণ কেশগুচ্ছ হয়ে, দুধে আলতায় মেশানো তার গায়ের রঙের প্রতিটি কোণায় তত বিস্তৃত হতে থাকল। যুদ্ধ যেন অষ্টাদশি মনিব-কন্যার স্নিগ্ধ হাসি আর লকলকে শরীরটার প্রতি নজিবরের আজীবন লুকানো কামনা উসকে দিল। তাকে পাওয়ার প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে সে পাকিস্তানি আর্মি দিয়ে যেদিন দস্তগীর পরিবারকে খুন করাল সেদিনই সে মেহেরুনের কাছে ভালো মানুষ সেজে তাকে পাশের গ্রামের ময়েনুদ্দিনের বাড়িতে লুকিয়ে রাখল।
আজ মেহেরুন ছোট্ট নাহিদের হাত শক্ত করে চেপে ধরে নজিবরের পিছু পিছু হাঁটছে। সূর্য প্রায় অস্তমিত। হঠাৎ নজিবর থেমে গেল। সামনে পাকিস্তান আর্মির ক্যাম্প। পুকুর পাড়ে ঘাসে ঢাকা এক চত্বরে অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে আছে এক সৈনিক। নজিবর দ্রুত পরিত্যক্ত এক বাড়ির ভেতর প্রবেশ করল। সবাই চিড়া কলা খেয়ে নেওয়ার পর নাহিদকে সে পাশের পরিত্যক্ত ঘরে যেতে বলল। নাহিদের হাত শক্ত করে ধরে মেহেরুন বলল,
‘তোমার সাথে আমিও যাব।’ মেহেরুনের হাত এক ঝটকায় সরিয়ে নজিবর পুত্রের চোখে রোষানলভরা দৃষ্টি হানল। নাহিদ ভয়ে পাশের ঘরে ঢোকামাত্র নজিবর দ্রুত ঘরের দরজা ভেতর থেকে আঁটকে দিল। ঘনিয়ে আসা আঁধারে অবুঝ নাহিদের দু’চোখ বেয়ে কেন এত অশ্রু ঝরছিল তা সেদিনের ছোট্ট নাহিদ বুঝতে শিখেনি।

আকুল কান্নায় ভেঙে পড়া মেহেরুনের কন্ঠ নিঃসৃত সেদিনের হাহাকার ‘প্রতারক’, ‘প্রতারক’ শব্দে আজো ছড়িয়ে পড়ছে আকাশে-বাতাসে। ছোট্ট নাহিদের চোখের সামনে যে ঘটনা ঘটেছিল তা আজ দৃশ্যকল্প হয়ে নাহিদের চোখের সামনে দুলছে—
মেহেরুনকে ধর্ষণ শেষে তার বাবা তাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তানি ক্যাম্পের দিকে। বোমা এবং গোলার আঘাতে দেওয়াল থেকে খসে পড়া চুন সুড়কি আর ভাঙা জানালার গ্রিল ধরে সেই দৃশ্যের পানে আজ অবধি সে তাকিয়ে আছে।
প্রতারক, প্রতারক। সবাই প্রতারক!

সমাজের সাথে তার প্রতারণা কখন তাকেই জড়িয়ে নিয়েছে আষ্টেপৃষ্টে। বর্ষাস্নাত আষাঢ়ে তার শিক্ষক তাকে শেখাতে ভুলে গিয়েছিলেন- ‘প্রতারক শব্দটি ‘প্রতারণা’ হয়ে প্রবাহিত হয় রক্তধারায়— বংশ হতে প্রজন্ম পরম্পরায়।’ তবে শেষ নিশ্বাস ত্যাগের সময় নাহিদ গাজীর একটা কথা মনে পড়ল। কার যেন বুকের হাহাকার বিদীর্ণ করেছিল আকাশ-বাতাস। বাতাস থেকে সেই আর্তনাদ আজ সংগীতের মতো তার কানে অনুরণন তুলছে,
হায়! জগতে কোনো কিছুই অপ্রাপ্য থেকে যায় না। প্রতিটি মানুষকে তার কাজের প্রতিদান একদিন কড়ায়-গণ্ডায় বুঝে নিতে হয়, বুঝে দিতেও হয়।

Friday, January 15, 2021

 

রিজিক বাড়ে যেসব কাজে

 মো. তামিম সিফাতুল্লাহ 
 ১৫ জানুয়ারি ২০২১, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ
62Shares
facebook sharing button
messenger sharing button
twitter sharing button
pinterest sharing button
linkedin sharing button
print sharing button
বান্দার জন্য আল্লাহতায়ালার মহান অনুগ্রহ হালাল রিজিক। তিনি বান্দাকে বিভিন্ন উপায়ে রিজিক দিয়ে থাকেন।

বান্দার জন্য আল্লাহতায়ালার মহান অনুগ্রহ হালাল রিজিক। তিনি বান্দাকে বিভিন্ন উপায়ে রিজিক দিয়ে থাকেন।

যারা আল্লাহর হুকুম ও নবীর তরিকায় জীবন পরিচালনা করে তাদের জন্য হালাল রিজিকের আলৌকিক দরজা খুলে যায়। কুরআন-সুন্নায় বর্ণিত হালাল রিজিক লাভের ৬টি উপায়-

-তাকওয়া বা আল্লাহকে ভয় করা

আল্লাহকে যে যত বেশি ভয় করবে আল্লাহতায়ালা ওই ব্যক্তির তত সহায় হবেন এবং তাকে কল্পনাতীতভাবে রিজিক দান করবেন। আল্লাহ বলেন- ‘আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য নিষ্কৃতির পথ করে দেবেন। আর তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিজিক দেবেন’ (সূরা তালাক : আয়াত ২-৩)।

-তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর ওপর ভরসা করা

আল্লাহর প্রতি একান্তভাবে ভরসা করলে শুধু রিজিকই নয় বরং মহান আল্লাহ ওই বান্দার সবকিছুর ব্যাপারে যথেষ্ট হয়ে যান। আল্লাহ বলেন- ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে তার জন্য তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন। আল্লাহ সবকিছুর জন্য একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন’ (সূরা তালাক : আয়াত ৩)।

-শুকরিয়া বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা

সুখে-দুঃখে সব সময় আল্লাহর শুকরিয়া বা কৃতজ্ঞতা আদায় করলে বান্দার প্রাপ্তি ও চাহিদাকে আল্লাহ পূরণ করে দেবেন। আল্লাহ বলেন- ‘আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের আরও বাড়িয়ে দেব। আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয় আমার আজাব বড়ই কঠিন’ (সূরা ইবরাহিম : আয়াত ৭)।

-করজে হাসানা বা সদকা করা

যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর পথে খরচ করবে, দান-সদকা করবে কিংবা অন্যকে উত্তম ঋণ দান করবে, তখন আল্লাহতায়ালা ওই বান্দার রিজিক অনেকগুণ বাড়িয়ে দেবেন। আল্লাহ বলেন- এমন কে আছে যে, আল্লাহকে ঋণ দেবে, উত্তম ঋণ; অতঃপর আল্লাহ তাকে দ্বিগুণ-বহু গুণ বৃদ্ধি করে দেবেন। আল্লাহই সংকোচিত করেন এবং তিনিই প্রশস্ততা দান করেন এবং তাঁরই কাছে তোমরা সবাই ফিরে যাবে’ (সূরা বাকারা : আয়াত ২৪৫)।

-ইসতেগফার তথা ক্ষমা প্রার্থনা করা

আল্লাহ ক্ষমাশীল। তিনি ক্ষমাকারীকে ভালোবাসেন। আর ক্ষমা প্রার্থনায় যেসব নেয়ামত লাভ হয়, এর মধ্যে রিজিকের প্রাধান্যই বেশি। আল্লাহতায়ালা হজরত নুহ আলাইহিস সালামকে দেওয়া নসিহতে তাই বলেছেন- ‘অতঃপর (আমি নুহকে) বলেছি, তোমরা তোমাদের পালন কর্তার ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ওপর অজস্র (রিজিক উৎপাদনে) বৃষ্টিধারা ছেড়ে দেবেন, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দেবেন, তোমাদের জন্য উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্য নদী-নালা প্রবাহিত করবেন’ (সূরা নুহ : আয়াত ১০-১২)।

-আত্মীয় সম্পর্ক ঠিক রাখা

আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক রাখা মহান আল্লাহর অন্যতম ইবাদত। এ ইবাদতে শুধু রিজিক বাড়ে এমন নয়, বরং হায়াতও বাড়ে বলে উল্লেখ করেছেন বিশ্বনবী। হাদিসে এসেছে-

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে কামনা করে যে তার রিজিক বেড়ে যাক এবং হায়াত (জীবন) দীর্ঘায়িত হোক; সে যেন আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করে’ (বুখারি)।

আমাদের উচিত, কুরআন-সুন্নায় ঘোষিত নসিহত মোতাবেক জীবন পরিচালনা করা। হালাল ও উত্তম রিজিক লাভে আল্লাহর সেখানো পদ্ধতিতে চেষ্টা করা।

লেখক : শিক্ষার্থী, মদিনাতুল উলুম কামিল মাদ্রাসা, রাজশাহী সদর

Wednesday, January 13, 2021

 

পেঁপে দিয়ে রূপ চর্চা





ত্বকের সূক্ষ্ম রেখা ও বলিরেখাকে না

আধকাপ পাকা পেঁপে চটকে তাতে এক টেবিল চামচ দুধ আর অল্প মধু ভালো করে মিশিয়ে মুখে ও গলায় লেপে দিন। প্রায় বিশ মিনিটের মতো রাখার পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।


গায়ের রং প্রাকৃতিকভাবেই উজ্জ্বল হয়ে উঠবে

আধকাপ পাকা পেঁপে চটকে তাতে এক টেবিল চামচ দুধ আর অল্প মধু ভালো করে মিশিয়ে মুখে ও গলায় লেপে দিন। প্রায় বিশ মিনিটের মতো রাখার পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এভাবে সপ্তাহে দু’বার ব্যবহার করলে নিজেই ফলাফল বুঝতে পারবেন।

মুখে ব্রণের দাগ থেকে শুরু করে হাঁটু বা কনুইয়ের কালচেভাব- এসকল সমস্যার সমাধানে

কাঁচা পেঁপে  ব্লেন্ডারে দিয়ে  ভালো করে থেঁতো করুন, এরপর এতে এক চা চামচ পাতিলেবুর রস মেশান।

শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।


Tuesday, January 12, 2021

 


বিটরুট লিপবাম



১/

 লিপবামের জন্য এক টুকরো বিটরুটকে পেস্ট করে নিয়ে তাতে বাটার এবং গোলাপজল মিশিয়ে নিতে হবে। 


২/

একটা ছোট জারে স্টোর করতে হবে


৩/

 ফ্রিজে জমিয়ে নিতে হবে আধা ঘণ্টার জন্য। তারপর, বাইরেই রেখে দিতে হবে। 


Sunday, January 10, 2021

 


আজকের ভাবনা

১১/১/২০২১


পাপকে পাপ বলার সাহস, অপরাধকে অপরাধ ভাববার মানসিকতা, প্রতারককে ঘৃণা করবার শক্তি, ভুল মানুষকে ছেড়ে আসবার ক্ষমতা থাকাটা জরুরী!'

✨
কখনো কখনো নিজের ব্যক্তিত্ব, সততা, আত্মসম্মানবোধ ও নিজস্বতাকে শ্রদ্ধা করবার জন্য হলেও হৃদপিন্ডকে কষ্ট দিতে হয়!🙂

Friday, January 8, 2021

 



আজকের ভাবনা
৯।১/২০২১
১।
নুতন একটা বৎসর শুরু হল। আগের বৎসর কি তাড়াতাড়ি চলে গেল। আমরা সবাই একসাথে যুদ্ধ করছি। কি থম্থমে প রিবেশ।
কি অজানা এই জগত। আমার জগত। আমি এম্ ন পৃথিবী চাইনি ক খনো ই।
২/
ফেসবুকে সবাই নিজের ছবি পোষ্ট করতেই থাকে। তার এবং তার পরিবারের ছবি।
আমার কাছে ম নে হ ল, এই সমস্ত ছবি তার কাছে যত না মুল্যবান। অন্যের কাছে তার কোন মুল্য নেই। মানুষ প্রথম কিছু দিন গুরুত্ব দিয়ে দেখে তারপর ভাব হীন দেখা আর লাইক দিয়ে এক টা দায়সারা গোছের কমেন্ট করা ।
আমার একটা ই প্রশ্ন মানুষ তার মুল্যবান কিছুকে এম ন করে ছোট ক রে কেন?


Thursday, January 7, 2021

 

যৌতুক

   যৌতুক একটি অভিশাপ’ বটে, কিন্তু কন্যাসন্তান তার নিজ পরিবার থিকা কোন ঘোড়ার আণ্ডাটি পাইয়া থাকে যৌতুকহীন বিয়া ব্যবস্থায়? মেয়েদের আপনারা অবশ্যই যৌতুক ছাড়াই বিয়া দেবেন কিন্তু উত্তরাধিকারক্রমে প্রাপ্য সম্পত্তির ভোগদখল থিকা যে সে বঞ্চিত হইতেছে তার সমাধান কী? পরাধীন নারীর স্বামীগৃহের অন্নগ্রহণ যদি শাস্ত্রসম্মত হয়, যৌতুক কেন অশাস্ত্রীয়? যৌতুকের প্রাপ্য আইন্না দেওনের জন্য বউরে পিটায়, মাইরা ফেলায় এগুলা অপরাধ। কিন্তু এই যে বাপ-মা-ভাইয়েরা মেয়ে বা বোনরে কোনো খরচা দিতেই রাজি হয় না যৌতুক নিষিদ্ধ হওয়ার আনন্দে এরে কেবল পরবর্তীকালীন পাষণ্ড স্বামীর অত্যাচারের মইধ্যে না দেইখা কন্যাসন্তানের প্রাপ্য বিষয়ে পরিবারের দুই নাম্বারী হিসেবেও দেখা যাইতে পারে। যৌতুকলোভী স্বামী ও তার আত্মীয়স্বজনের লোভের শাস্তি ‘যৌতুক নিষিদ্ধকরণ আইন’ মারফতে বেশ সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা কায়েম হইল বুঝলাম… কিন্তু এই নিষিদ্ধ যৌতুকের ফাঁকে কতো নারীর বাপের বাড়ির সম্পত্তি যে তার ভাইয়েরা মাইরা দিতেছে তার কোনো ইয়ত্তা আছে কি? ফলে দুইটা ব্যবস্থা দরকার : [ক] যৌতুক নিষিদ্ধকরণ আইন-এর যথাপ্রয়োগ। [খ] নারীর বিবাহের সময়ই তার বাপের মায়ের ভাইয়ের বাড়ির পাওনাদেনার লিগ্যাল সমাধান।

[২] উত্তরাধিকার আইনের মইধ্যে কোথাও ঘাপলা আছে নিশ্চয়ই। যে কারণে যৌতুকের আগমন। নারী যেহেতু পিতামূলক সম্পত্তির অধিকারী সচরাচর বিয়ের সময়টায় বা আগে আগে হয় না, তাই তার স্বাধীনতাও আসে না। বরং নারী যাতে স্বেচ্ছাচারী। অর্থাৎ স্বাধীন বা বহুগামী না হইয়া ওঠে তার জন্যই তারে সম্পত্তি দেওয়া হয় না তখন ও যোগ্য এবং একটিমাত্র পাত্রে তাকে বন্দোবস্ত করে পরিবার। দেখবেন নারীকে পরিবার কখনো একসঙ্গে একাধিক পাত্রে পাত্রস্থ করে না।
বিপরীত ক্রমে পুরুষের স্বাভাবিকতা যে সে বহু নারীকে বিয়ে করতে পারবে। আইন কইরা সেই সুযোগ সীমিত করা হইছে বটে, তার মানেই সমাজে এই ব্যাপারের স্বীকৃতি আছে। দেখা যায় পাত্রমহোদয় নারীর ভরণ পোষণ ও পাহারার বিনিময়ে যৌতুক দাবি কইরা বসে। আমি বলতে চাইতেছি লিগ্যালি, নারীর ভরণপোষণ নারীর নিজের ব্যাপারই যদি না হয় তাইলে তো পাহারাদার বা দেখনেঅলা স্বামী এই কার্যক্রমের বিনিময় দাবি করবেই। যারা করতেছে না তারা সেই না করারে ভালোমানুষী বা শ্রেয় জ্ঞানে করতেছে না। অর্থাৎ ব্যাপারটা সাধারণ গুণ না, নরদের বা বরদের অর্জিত অবস্থান। যদি আমরা যৌতুক বন্ধ করতে চাই তাইলে অগ্রে নারীকে বিয়ের বিনিময়ে ভোগ করতে দেওয়ার যে রীতি তা বরবাদ করতে হয়। আমরা বিয়ের মতো পশ্চাৎপদ যৌনচুক্তির কাছ থিকা লিভ টুগেদারের স্বাস্থ্য আশা করতে পারি না। বিয়েকে আধ্যাত্মিক জ্ঞান না করলে যৌতুক এতো নোংরা লাগতে পারে না। বস্তুত বিয়ের ব্যবসা রূপটি যৌতুকের মধ্য দিয়া স্বচ্ছ রূপ লাভ করে। কিন্তু যেই বিয়ে থিকা সন্তান জন্মের মতো একটা ‘পবিত্র’ সামাজিক কাণ্ড ঘটতে পারে তারে ব্যবসা ভাবতে নারাজ সুপাত্র ও সুপাত্রী সন্ধানরত মধ্যবিত্ত সমাজ। ফেসবুক থেকে

Tuesday, January 5, 2021

 

মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরণে নির্মিত জাতীয় স্মৃতিসৌধ
মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরণে নির্মিত জাতীয় স্মৃতিসৌধ
ফাইল ছবি: দীপু মালাকার

সিস্টেম ভালো মানে দেশ উন্নত। একটি দেশের উন্নতি কিংবা জীবনব্যবস্থার উন্নয়নের ভিত্তি নির্ভর করে রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকের দ্বারা নির্ধারিত সিস্টেমের ভিত্তিতে। তাই লিখতে বসলাম ভুল সিস্টেমের বিরুদ্ধে। প্রথমে আসি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে।

শিক্ষাব্যবস্থায় বড় গলদ আমার কাছে মনে হয় শিক্ষার্থীদের মুখস্থ করানোর ব্যাপারটি। কম্পিউটার কত সালে আবিষ্কৃত হয়েছিল ধরনের প্রশ্ন আমরা পড়ি। একই সময়ে ইউরোপ,আমেরিকা, চীনের শিক্ষার্থীদের শেখানো হয় প্রোগ্রামিং। চাকরির আশায় অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে আমরা আবার নবম-দশম শ্রেণির সিলেবাস মুখস্থ শুরু করি। আর তারা অনার্স-মাস্টার্সে অধ্যয়নের সময় স্ব-স্ব কর্মমুখী করে, নিজ বিষয়ে চাকরির উপযুক্ত করে তোলে। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা হলো এলোমেলো। পড়ালেখার সঙ্গে কর্মক্ষেত্রের কোনো মিল নেই। এই শিক্ষাব্যবস্থা দিয়ে দেশের টেকসই উন্নয়ন কিংবা রাষ্ট্রব্যবস্থা নির্মাণ সম্ভব নয়। প্রতিটি ক্ষেত্রে আনতে হবে ব্যাপক পরিবর্তন। রাষ্ট্রীয় খরচে প্রতিটি কাজের জন্য, প্রতিটি বিভাগের জন্য দক্ষ লোক তৈরি করতে বিদেশে টিমভিত্তিক পড়াশোনা কিংবা প্রশিক্ষণ নিতে পাঠাতে হবে, পরে তাঁরা ফিরে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে স্বদেশিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে রাষ্ট্রব্যবস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন, যেটি চীন করে।

কিছুদিন আগে আলু চাষ দেখতে, পুকুর খনন দেখতে কিছু কর্মকর্তার বিদেশ ভ্রমণে আসতে দেখে মানুষ হাসত। কিন্তু আসল কথা হলো, ইউরোপ-আমেরিকার এই কাজগুলো আমাদের মতো সনাতন পদ্ধতির নয়। আমি মনে করি, তাই তাদের এগুলো দেখতে আসা উচিত। অন্তত প্রযুক্তির ব্যবহার শিখতে পারবে। তবে রাষ্ট্রের উচিত তরুণ মেধাবীদের পাঠানো।

এবার আসি দেশের আইনের শাসনব্যবস্থা নিয়ে। খবরের কাগজ খুলেই দেখি ধারাবাহিক অশান্তির খবর। দেশে আইনের শাসন নিশ্চিত করতে না পারলে আপনি বা আপনারা আক্রান্ত হবেনই। জার্মানিতে একজন মেয়র কিংবা মন্ত্রী নিজ দায়িত্ব পালন শেষে সাধারণ মানুষের সঙ্গেই তাঁর চলাফেরা। দেখা যায়, রাষ্ট্রের যত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিই হোন না কেন, জীবন-চলাচল সাধারণ মানুষের মতোই। সবার সঙ্গে লোকাল ট্রেনে, বাসে, ট্রামে বা সাইকেলে চলাচল করেন। নেই কোনো নিরাপত্তার প্রটোকল, খাচ্ছেন মন যেখানে চায় সেখানে, অবাধে ঘুরছেন মার্কেটসহ সব জায়গায়। কিন্তু আমাদের দেশে কি তা সম্ভব? একজন মন্ত্রী, এমপি কিংবা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কি নিয়ম করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে চলাফেরা করতে পারছেন? উত্তর হলো, না। কিন্তু, কেন না? কারণ, আইনের শাসনের অভাব। নিজেরা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেননি, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেননি, তাই নিজেরা অনিরাপদ। আর এখানে রাষ্ট্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন আর জনগণই নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন। আইনের শাসন, জবাবদিহি, স্বচ্ছতা ছাড়া কখনো একটি রাষ্ট্রের উন্নয়ন সম্ভব নয়। আর এগুলো সবটারই অভাব আমাদের। আমাদের যেমন আইন রয়েছে, তেমনি তাদেরও আইন রয়েছে। পার্থক্য হলো, ইউরোপিয়ানরা আইন মানতে বাধ্য, কারণ সঙ্গে সঙ্গেই আইনের প্রয়োগ হয়। এখানে আইন অমান্য করে কেউই পার পায় না। মুহূর্তের মধ্যেই অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসে। আর আমাদের মধ্যে রয়েছে বিলম্বিত করার অভ্যাস এবং আইনের  অপপ্রয়োগসহ স্বজনপ্রীতি। যার কারণে রাষ্ট্রের সবাই ভুগছে। মোটকথায় এখনই সময় সিস্টেম বদলানোর, সিস্টেম বদলানো গেলে রাষ্ট্র বদলাতে বাধ্য। প্রতিটি জায়গায়, প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বড় ভূমিকা রাখবে।

নিয়োগপ্রক্রিয়ায় পরিবর্তন কেন আনতে হবে

পতাকা হাতে শহীদ মিনারে এসেছে শিশুটি। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, সিলেট, ১৬ ডিসেম্বর। ছবি: আনিস মাহমুদ
পতাকা হাতে শহীদ মিনারে এসেছে শিশুটি। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, সিলেট, ১৬ ডিসেম্বর। ছবি: আনিস মাহমুদ

পৃথিবীর প্রায় দেশে সরকারি কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয় স্ব-স্ব পদের যোগ্য, দক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের। যেমন ধরুন একজন ব্যাংকার নিয়োগ দেবেন, তাঁকে হতে হবে ওই বিষয়ের পড়াশোনা ও কর্ম অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা নিয়োগে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে অবশ্যই ওই বিষয়ের ওপর পড়াশোনা থাকতে হবে, আর আমাদের দেশে দেওয়া হচ্ছে বাংলা, সাধারণ জ্ঞান, অঙ্ক—এই টাইপের ওপর অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। এখন কথা হচ্ছে, এভাবে অনাড়ি লোকদের স্ব স্ব কাজের বিষয়ে পড়াশোনা বা অভিজ্ঞতা না নিয়ে যদি নিয়োগ দেওয়া হয়, তাহলে রাষ্ট্র কীভাবে সামনে যাবে? রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের এখনই ভাবতে হবে। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে। একজন চিকিৎসককে তাঁর নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে কেন মুখস্থ করতে হবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘হৈমন্তী’ গল্পের গৌরীশংকর বাবু কোথায় বাস করেছিলেন? ঠিক একইভাবে একজন ইংরেজির শিক্ষককে কেন মুখস্থ করতে হবে বিদ্যা+ আলয় মিলে বিদ্যালয় হয়। এখন এটি তো উদাহরণমাত্র। সাহিত্যে পড়াশোনা করা ব্যক্তি কেন অডিটে চাকরি করবেন? বা চিকিৎসক বা প্রকৌশলী হয়ে তিনি কেন কাস্টমসে চাকরি করবেন? এই রকম সব অনিয়ম দূর করতে হবে, অন্যথায় রাষ্ট্রের অপমৃত্যু হবে। এখনই সময় ভাবার, বোঝার।

চিন্তা করতে হবে সুদূরপ্রসারী। ভাবতে হবে আগামী ৫০ বছর পর রাষ্ট্র কোথায় যাবে। একটু ভেবে দেখুন, ইউরোপের কথা বাদই দিলাম। মালয়েশিয়া-সিঙ্গাপুরের অর্থনীতি কোথায় আর আমরা কোথায়? কেন আমরা পেছনে? কারণটা সিস্টেমের ভুল, অনিয়ম বা দুর্নীতি। সিস্টেম বদলালে দুর্নীতি ও অনিয়ম পালাবে। যেমন আমি জার্মানির উদাহরণই দিই। এখানে মানুষ রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হতে পারে না। কারও সম্পদ বেড়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে উপযুক্ত কারণ দেখানোর নোটিশ দেওয়া হয়। প্রতিটি বিষয় অনলাইনে মনিটরিং করা হয়। প্রতিটি ক্ষেত্রে রয়েছে প্রযুক্তির ব্যবহার। নেই কোনো প্রশাসনিক জটিলতা। ধরুন, আপনি ব্যবসা করতে চান। আপনার যে প্রয়োজনীয় লাইসেন্স বা ডকুমেন্ট দরকার, তা কত দিনের মধ্যে পাবেন, তা বিস্তারিত অনলাইনে দেওয়া আছে। নেই কোনো বাধা। আইন হলো সবার জন্য সমান।

ডাক বিভাগ নিয়ে পরিকল্পনা

আর একটি বিষয় নিয়ে লিখতে মন চায়, সেটি হলো আমার ডাক বিভাগ। যেটি আজ মৃতপ্রায়। অথচ জার্মানির ডাক বিভাগ পৃথিবীবিখ্যাত। কারণ কী? স্বচ্ছতা এবং সেবার মান। আমাদের ডাক বিভাগকে প্রাণ ফিরে ফেতে হবে। প্রথমে যে কথাটি বলব সেটি হলো, রাষ্ট্রের ডাক বিভাগের প্রাণ ফিরে পেতে ডাক বিভাগকে চিঠি পাঠানোর পাশাপাশি কুরিয়ার সেবা চালু করতে হবে। তাহলে ডাক বিভাগ একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের রূপ নেবে। পৃথিবীর প্রতিটি দেশের ডাক বিভাগে কুরিয়ার সেবা চালু আছে, আমাদেরও যদি থাকে, তাহলে একে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রাণ দিতে হবে প্রচার চালিয়ে— কুরিয়ার সেবায় মানুষ যেন অধিক সেবা নেন। উদাহরণ হিসেবে আমি জার্মানির ডিএইচএলের (DHL) মডেল অনুসরণ করার কথাই বলব।

রেলের টিকিট নিয়ে পরিকল্পনা

 কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার
ছবি: হাসান রাজা

এবার একটু বাংলাদেশের রেলওয়ের কথা বলি। প্রায় দেখা যায় মানুষ টিকিট পায় না। যার কারণ হিসেবে দেখানো হয়, অসাধু কর্মকর্তাদের সহায়তায় টিকিট কালোবাজারিদের হাতে চলে যায়। একটু ভেবে দেখুন, একটু সিস্টেমের পরিবর্তন করলে এটি সহজেই বন্ধ করা যাবে। এই সিস্টেম বদলাতে ইউরোপ আসতে হবে না। সিঙ্গাপুর কিংবা ব্যাংককের দিকে খেয়াল করুন, প্রতিটি রেলস্টেশনে রয়েছে টিকিট কাটার জন্য ভেন্ডারিং মেশিন, দেখতে হুবহু ব্যাংকের এটিএম মেশিনের মতো। ভিসা কার্ড কিংবা টাকা মেশিনে ঢুকিয়ে দেবেন, অটো যার টিকিট সে কেটে নেবে। দরকার হবে না লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিটের জন্য হাহাকার করার। কালোবাজারি থেকে টিকিট কাটার জন্য এনআইডি নম্বর ব্যবহার বাধ্যতামূলক করলেও যার টিকিট সে কাটতে পারবে,শিশুদের ক্ষেত্রে জন্মনিবন্ধন নম্বর দিয়েও টিকিট কাটার সিস্টেম করা যেতে পারে, তাহলে কালোবাজারিদের হাত থেকে রক্ষা পাবে।
আমাদের দেশে রাস্তায় দেখবেন যেখানে-সেখানে ময়লা। আর ইউরোপের রাস্তাঘাট আয়নার মতো পরিষ্কার। আমাদের নয় কেন? আমি বলব এটি সিস্টেমের সমস্যা। বিভিন্ন সেন্টারে কিছু দূর পরপর বড় বড় ময়লা সংগ্রহের বক্স বসিয়ে দেন, যেখানে একসঙ্গে তিনটি পার্ট থাকবে—একটিতে কাগজ, অন্যটিতে ব্যবহৃত বোতল এবং আর একটিতে খাবারের বর্জ্য। মানুষ বক্স দেখে রাস্তাঘাটে আর ময়লা ফেলবে না এবং নির্দিষ্ট সময় পরপর তা পরিবহন করতে হবে এবং ময়লা নিয়ে নতুন পলিব্যাগ বসিয়ে দিতে হবে। দেখবেন মানুষের মধ্যে পরিবর্তন আসবেই। এখন কথা হলো, আমরা ময়লা ফেলা বক্স দিয়েছি অর্ধকিলোমিটার পরপর, আবার দেখা যায় প্রায় শহরেই ময়লা ফেলার বাক্স নাই। তাহলে মানুষ তো ময়লা রাস্তায় ফেলবেই। সঙ্গে রাস্তা পরিষ্কারের জন্য আধুনিক মেশিন ব্যবহার করতে হবে। রাস্তায় যে ঝাড়ু দিয়ে বাপ-দাদার আমলের নিয়মে রাস্তা পরিষ্কার করেন, এই প্রথা বাদ দিন। গাড়ি নিয়ে ডিজিটাল মেশিনের সাহায্যে খুব অল্প সময়ে তা পরিষ্কার করুন।

রাষ্ট্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি চলাকালে ব্যক্তিগত মোবাইল ব্যবহার নিষিদ্ধ করুন। চাকরি মানে চাকরি। ইউরোপের কোনো দেশে চাকরি চলাকালে মোবাইল, ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কেউ ব্যবহার করতে পারে না। চাকরি মানে সর্বাধিক সেবা নিশ্চিত করা। আর আমাদের দেশে দেখা যায়, চাকরি চলাকালে দায়িত্বে অবহেলা করা। এমনকি আপনি দেখবেন ইউরোপ-আমেরিকার প্রায় দেশে ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি চলাকালে বসার নিয়ম নেই। সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেবা দেন।
চীন তার অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য প্রায় ১ যুগ তাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ রেখেছিল। চীন সরকার মনে করেছিল, এত ছেলেমেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে কী করবে? কোথায় চাকরি পাবে? কেই-বা চাকরি দেবে??? এত হাজারো বেকারকে চাকরি দেওয়ার মতো প্রতিষ্ঠান চীনে নেই। তাই তারা ভাবা শুরু করল বিকল্প পদ্ধতি। ওই সময়টায় চীন ছাত্রছাত্রীদের আধুনিক প্রশিক্ষণ দিয়েছিল নানা ধরনের ট্রেড কোর্সে, কর্মমুখী শিক্ষা ও প্রযুক্তিগত বিভিন্ন কোর্সে। স্বল্পমেয়াদি এই কোর্স শিখে চীনের ছেলেমেয়েরা স্বাবলম্বী হওয়া শুরু করল। প্রতিটি বাড়ি গড়ে উঠল একটা করে ছোট কারখানায়। পরিবারের সবাই সেখানে কাজ করত। বড় ফ্যাক্টরি করার আলাদা খরচ নেই। ফলে পণ্যের উৎপাদন খরচ কমে গেল। বর্তমানে যেকোনো পণ্য সস্তায় উৎপাদন করার সক্ষমতায় তাদের ধারেকাছে কেউ নেই।

পৃথিবীর প্রতিটি অঞ্চলে চাইনিজ পণ্যের প্রসার বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে তারা বিশ্ববাণিজ্যের এক অপ্রতিরোধ্য পরাশক্তি। উপযুক্ত মূল্য দিলে তারা এমন জিনিস বানিয়ে দেবে, যার গ্যারান্টি আপনি চাইলে ১০০ বছরও দিতে পারবেন। অপর দিকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতিনিয়ত গড়ে উঠছে বেকার বানানোর কারখানায়। প্রতিবছরই দু-একটা নতুন বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হচ্ছে আর বের হচ্ছে কয়েক হাজার বেকার। দল বেঁধে পড়ানো হচ্ছে, যার সঙ্গে বাস্তবিক কর্মক্ষেত্রের কোনো মিল নেই। এত বেকারের ভিড়ে চাকরি বাংলাদেশে একটি সোনার হরিণ। কোম্পানিরাও এটা বোঝে। তাই এই দেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রত্যাশা অনুযায়ী বেতন পায় না, চাকরি পায় না। আর পেলেও সহ্য করতে হয় মালিক অথবা বসের নানাবিধ অদ্ভুত পরীক্ষা ও অপেশাদার আচরণ।

অবশ্য, দীর্ঘদিন বিভিন্ন জাতির শোষণের জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে আমাদের জাতির জীবনে প্রবেশ করেছে এক ধরনের প্রভুভক্ত মানসিকতা। আমরা মনে করি স্যুট, টাই পরে কোনো কাজ করতে পারলেই বুঝি সেখানেই জাতির সফলতা। এটা আসলে একটি অপ্রকাশ্য দীনতা, যা কেউ স্বীকার করছেন না। এই দেশের অর্থনীতির জন্য সামনে খুব ভয়াবহ দিন অপেক্ষা করছে। তাই, বাংলাদেশের উচিত চীনের মতো একটা পদক্ষেপ নেওয়া। চাকরি করে দেশের উন্নতি হয় না, আমাদের উদ্যোক্তা প্রয়োজন। তাই শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন, গুরুত্ব দেওয়া উচিত কর্মমুখী শিক্ষায়।

  • লেখক: এম এ হাসান, শিক্ষার্থী, পিলিপস ইউনিভার্সিটি, জার্মানি।

 


Sunday, January 3, 2021

 



তেজপাতায় সৌন্দর্য চর্চা



ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে

অধ্যাপক ডা. আশরাফ চৌধুরী জানাচ্ছেন, তেজপাতার উদ্ভিজ্জ উপাদান ত্বকে বলিরেখা সৃষ্টির জন্য দায়ী ফ্রি র‌্যাডিক্যাল নিষ্ক্রিয় করে দেয়। এর জন্য তিনি মুখে তেজপাতা সেদ্ধ করা পানির ভাপ দিতে বলেছেন। তেজপাতা সেদ্ধ করা পানির ভাপ অ্যান্টি এইজিং সলিউশন হিসেবে কাজ করে বলে জানিয়েছেন তিনি।


ত্বক উজ্জ্বল করতে


বিউটি ক্রিমের দৌরাত্ম্য শেষ হয়নি আমাদের জীবনে। কিন্তু ইতিমধ্যেই আমরা সৌন্দর্য চর্চায় ভেষজে উপাদানের সহায়তা নিচ্ছি ত্বক উজ্জ্বল করতে। অধ্যাপক ডা. আশরাফ চৌধুরী জানাচ্ছেন, তেজপাতা আপনার ত্বক উজ্জ্বল করতে সহায়তা করতে পারে। কীভাবে? বেশি পানিতে তেজপাতা সেদ্ধ করুন। সেদ্ধ পানি ঠান্ডা করুন। তারপর সে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। তেজপাতা সেদ্ধ ঠান্ডা পানি দিয়ে নিয়মিত মুখ ধোয়ায় ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ার পাশাপাশি ব্রণের জন্যও এটি উপকার করবে।



খুশকি দূর করতে

আপনার প্রিয় ব্র্যান্ডের শ্যাম্পু ব্যবহার করুন, তাতে কোনো সমস্যা নেই। শুধু মাঝে মাঝে শ্যাম্পুর জায়গায় তেজপাতা সেদ্ধ করা ঠান্ডা পানি দিয়ে মাথা ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। এতে খুশকি দূর হওয়ার পাশাপাশি চুল পড়াও কমে যাবে। চুল পড়ে যাওয়া জায়গাগুলোতে তেজপাতার এসেনশিয়াল ওয়েল ব্যবহার করুন। তাতে চুল আর উঠবে না।

Saturday, January 2, 2021

 মুখের কালো দাগ দূর করতে ৪টি জাদুকরি উপায় 



১. এক চা চামচ কমলার খোসার সঙ্গে আধা চা চামচ মধু মিশিয়ে নিন। এবার দাগের ওপর লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। টানা চার থেকে পাঁচ দিন এই মিশ্রণটি লাগালে দূর হবে ত্বকের দাগ।

২. আধা চা চামচ মসুর ডালের বেসনের সঙ্গে ডিমের কুসুম ও কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে নিন। পুরো মুখে ১৫ মিনিট লাগিয়ে অপেক্ষা করুন। এতে মুখের ছোপ ছোপ দাগ দূর হবে।

৩. ডাবের পানি ফ্রিজে রেখে বরফ করে নিন। এবার ঘুমানোর আগে দাগের ওপর সেই বরফের টুকরো ঘষে নিন। পাকা পেঁপে ত্বকের দাগ দূর করতে বেশ কার্যকর। এর সঙ্গে দুধ ও মধু মিশিয়ে নিন।

৪. পুদিনাপাতার পেস্ট দাগের ওপর লাগিয়ে রাখলে মুখের দাগ দ্রুত দূর হবে।