১৩/৪/২০২৩

বাংলা বছরের শেষ দিন,
অর্থাৎ আজ চৈত্র সংক্রান্তি।
চৈত্র মাসের শেষ দিনকে বলা হয় চৈত্র সংক্রান্তি।
কোনো ইতিহাসবিদের মতে, চৈত্র সংক্রান্তি মানুষের শরীর ও প্রকৃতির মধ্যে একটি যোগসূত্র ঘটাবার জন্য জন্য পালন করা হয়। প্রকৃতি থেকে কুড়িয়ে আনা শাক, চৈতালি মৌসুমের সবজি, পাতা, মুড়া ইত্যাদি খেয়ে চৈত্র সংক্রান্তি পালন করার রীতি এখনো কোনো এলাকায় লক্ষ করা যায়।

লোকপ্রথা অনুযায়ী, চৈত্র সংক্রান্তিতে বিশেষ খাবার ছাতু, চিড়া, দই, মুড়ি, খই, তিল ও নারিকেলের নাড়ু ইত্যাদি খেতে হবে। তার সঙ্গে দুপুর বেলার খাবারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ‘চৌদ্দ’ রকমের শাক খাওয়া। এর মধ্যে অন্তত একটি তিতা স্বাদের হতে হবে। যেমন গিমা শাক। চৈত্র মাসে গিমা শাক খেতেই হবে। গিমা শাক পাওয়া না গেলে বুঝতে হবে এখানে প্রকৃতি থেকে জরুরি কিছু হারিয়ে গেছে। একটু টক কিছু থাকাও দরকার। কাঁচা আম তো আছে। অসুবিধা নেই। মাছ–মাংস খাওয়া চলবে না।
চৈত্র সংক্রান্তিতে শাকান্ন উৎসবের প্রচলন ছিল। দিবসটিতে গ্রাম-বাংলার নারীরা ঝোপ-জঙ্গল থেকে প্রথা মেনে ১৪ রকমের শাক তুলে আনতেন। সেই শাক একসঙ্গে রান্না করে এই দিনে খাওয়া হয়।

চৈত্র সংক্রান্তি মানেই বাঙালির ঘরে ঘরে পাঁচন৷ টক, ঝাল, নোনতা, মিষ্টি, তেতো সব রকম স্বাদ মিলিয়ে তৈরি হয় পাঁচন৷ সব রকম সব্জি, শাক, বীজ, ডাল দিয়ে রান্না সুস্বাদু পাঁচন খাওয়ার কারণটাও খুব সুন্দর৷ একদিকে যেমন সবরকম দুঃখ-দুর্দশা বছরের শেষ দিনে পিছনে ফেলে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়া, তেমনই জীবনের চলার পথে মিষ্টি-টক-তেতো সবরকম অভিজ্ঞতাকে গ্রহণ করে নেওয়ার রূপক হল পাঁচন খাওয়ার রীতি৷ আবার চৈত্র মাসের গরমে শরীর সুস্থ রাখতে, রোগভোগ দূর করতেও সাহায্য করে সব স্বাদের মিশেলে তৈরি পাঁচন৷
পাঁচন
কী কী লাগবে
এঁচোড়-৫০০ গ্রামকুমড়ো, ঝিঙে, বিন, গাজর, বেগুন, আলু, কাঁচকলা, রাঙাআলু, উচ্ছে, সজনে ডাঁটা, মুলো-সব ১টা করে ডুমো করে কাটাশাক-যা যা পাওয়া যায়
ছোলার ডালের বড়াসিম বিচিকাঁচালঙ্কা-২,৩টেতেজপাতা-১টাশুকনো লঙ্কা-১টাপাঁচ ফোড়ন-আধ চা চামচআদা বাটা-আধ চা চামচহলুদ গুঁড়ো-আধ চা চামচজিরে গুঁড়ো-আধ চা চামচধনে গুঁড়ো-আধ চা চামচনুন-স্বাদ মতোচিনি-আধ চা চামচঘি-সামান্যসর্ষের তেল-প্রয়োজন মতো
কীভাবে বানাবেন
এঁচোড় ডুমো করে কেটে সামান্য নুন ও গুঁড়ো হলুদ দিয়ে সিদ্ধ করে নিন ৷
পানি ঝরিয়ে সরিয়ে রাখুন৷
সিম বিচি শুকনো খোলায় নেড়ে নিয়ে সিদ্ধ করে নরম করে নিন৷ খোসা ছাড়িয়ে রাখুন৷
ছোলার ডালের বড়া ৩-৪ মিনিট জলে ভিজিয়ে রেখে নরম করে নিন৷
এবার কড়াইতে তেল গরম করুন৷ শুকনো লঙ্কা, তেজপাতা ও পাঁচ ফোড়ন দিন৷ সুন্দর গন্ধ বেরোলে সব সব্জি ও কাঁচা লঙ্কা দিয়ে দিন৷ নুন, হলুদ দিয়ে ভাল করে নেড়ে চাপা দিয়ে মাঝারি আঁচে ১২-১৫ মিনিট সিদ্ধ হতে দিন৷ মাঝে মাঝে নাড়বেন যাতে ধরে না যায়৷
সব্জি কিছুটা সিদ্ধ হলে এঁচোড় দিয়ে সব মশলা দিয়ে দিন৷ ভাল করে মিশিয়ে ৪-৫ মিনিট নেড়ে আধ গ্লাস পানি দিন।
বেশ ঘন সব্জি তৈরি হলে সিম বিচি ও ছোলার ডালের বড়া দিন৷
নুন, মিষ্টি, ঝাল চেখে দেখুন৷
সব শেষে আধ চা চামচ ঘি ও গরম মশলা গুঁড়ো ছড়িয়ে নামিয়ে নিন৷