Thursday, December 10, 2020

 

অধরা

শুধু চান্স কাছে এল না। সময় এবং চান্স মানুষকে অনেক কিছুই পাইয়ে দেয়, আবার অনেক কিছু হারায়ও। এত কাছে এসেও প্রফেসর কিছুই পেলেন না। নোবেলটা অধরা রয়ে গেল!


-সুকুমার বারিক / Date : Sunday, July 26 , 2020



২০১৯ সালের ১১ জানুয়ারি। কনকনে ঠান্ডা পড়েছে বেঙ্গালুরুতে।
এবছরের স্ত্রীরোগ এবং প্রসূতিবিদ্যার অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস হচ্ছে সেখানে। সুকোমল আগের বেশ কয়েকবারের মতোই ফ্যাকাল্টি। একটা লেকচার, একটা সেশন জাজ করার আছে।
সকালবেলা একটা বড় হলে প্রথম সারিতে বসেছিল সুকোমল। তখনও সেশনটা শুরুই হয়নি। এত সকালবেলা ওর বন্ধুরা কেউ রাজি হয়নি।
‘‘তুমি কী যে বারবার শুনতে চাও, বুঝি না। কত কিছু তো শুনেছ আজ পর্যন্ত। কেন যে এত পড়াশোনা করতে হবে সেটাই 
তো বুঝতে পারি না। এইটুকু ছোট্ট জীবনে পড়াশোনা তো থাকবে, নিশ্চয়ই থাকবে, কিন্তু জীবনটা কি শুধু পড়াশোনা করার 
জন্যই নাকি? আরও তো অনেক কিছু এ জীবনেই...’’ কথাটা শেষ করতে দেয় না সুকোমল । 
‘‘বুঝতে পেরেছি তোরা কেউ আসবি না এই সাতসকালে, এই তো?’’
 
হলে লোকজন এসেছে গোনাগুনতি। উদ্যোক্তাদের একজন এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। ঠিক এমন সময়ই ওর ওই ডেলিগেটদের ক্লাসিফিকেশনের কথা মনে পড়ল। ‘হলমার্ক’, ‘আউটস্ট্যান্ডিং’, ‘স্টলওয়ার্থ’। যেই বার করুক না কেন, তার মাথায় যথেষ্ট বুদ্ধি আছে। 
নির্ধারিত সময়ের মিনিট পনেরো পরে একজন চেয়ারপার্সন হন্তদন্ত হয়ে আবির্ভূত হলেন। বক্তাদের সবাই হাজির। সেশন শুরু হল।
মন দিয়ে শুনছিল সুকোমল। দ্বিতীয় বক্তাকে দেখে খুব অবাক হল। দেখে তো মনে হচ্ছে বিল।
উইলিয়াম বিল টাইডি। ঘোষণা হতেই কনফার্ম হওয়া গেল যে বিদেশ থেকে এসেছেন উল্লেখযোগ্য বক্তা। ইংল্যান্ডের শেফিল্ডে কাজ করা প্রফেসর উইলিয়াম টাইডি। বিলকে প্রায় কুড়ি বছর পরে দেখে মনে খুব আনন্দ হল সুকোমলের। সুকোমল যখন ইউনিভার্সিটি অফ শেফিল্ডের মেন হাসপাতালে কাজ করছিল তখন সিনিয়র লেকচারার হিসেবে যোগ দিয়েছিল বিল। প্রফেসর পিটার শার্প, বিলের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন।  
‘‘সুকি, বিল নতুন জয়েন করছে সিনিয়র লেকচারার হিসাবে। তোমার সঙ্গে ও কাজ করবে। খুবই ভাল ছেলে। টাইডি বাই নেম অ্যান্ড টাইডি বাই ওয়ার্ক,’’ সুকোমলের মনে পড়ে গেল, প্রফেসর ওকে ছোট করে ‘সুকি’ ডাকতেন। দীর্ঘদেহী বিল একটু মৃদু হেসে হ্যান্ডশেক করেছিল। তারপর বহুদিন একসঙ্গে ক্লিনিক করেছে। অপারেশন করেছে, ওয়র্কশপ করেছে, কিছু গবেষণাতেও একসঙ্গে কাজ করেছে। বিলের সঙ্গে এক অদ্ভুত সখ্য তৈরি হয়েছিল সেই সময়। একটা পারস্পরিক আদাপ্রদান আর শ্রদ্ধার সম্পর্ক। তাই সুকোমল যখন দেশে ফিরে আসার কথা সবাইকে জানাল, তখন বিল খুব বিস্মিত হয়েছিল, বলেছিল, ‘‘সত্যিই কি তোমাকে চলে যেতে হবে? তুমি এখানে থেকে যাও না। আমরা দু’জনে অনেক কিছু করতে পারব সুকি। ভাল ভাল কাজ...’’
সুকোমল বুঝিয়ে বলেছিল যে কী কারণে ও ফিরে যেতে চায়।
বিলের উদ্যোগে একটা বড় ফেয়ারওয়েল পার্টি হয়েছিল। ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র, জুনিয়র, মাঝারি অনেকেই গিয়েছিল একটা বাইরের রেস্তরাঁয়। মন উজাড় করা কথা বলেছিলে সুকোমলের সম্পর্কে। গিফ্টও দিয়েছিল। তার মধ্যে খুব একটা মজার জিনিস পেয়েছিল যেটা সুকোমল চিরকাল মনে রাখে। শেফিল্ড ইউনিভারসিটির একটা শিল্ড। 
বিল বলেছিল, ‘‘তুমি অত্যন্ত প্রতিভাবান সিনসিয়র অ্যাকাডেমিক। ছাত্র পড়িয়েছ, ওয়র্কশপে হাতে ধরে শিখিয়েছ, গবেষণা করেছ। সেজন্যই তোমাকে এই শিল্ড উপহার দিলাম।’’
সেদিন খুব বেশি কিছু বলতে পারেনি ধন্যবাদ দেওয়া ছাড়া। 
*
এ সেই বিল টাইডি। সেশন শেষ হওয়ার পরে ভাবল একবার দেখা করলে ভাল হত মনে হয়। তবে মনে একটা বিরাট সংশয় ছিল। বিল কি চিনতে পারবে? কুড়ি বছরের আগের সুকোমলের ঝাঁকড়া চুল, লম্বা গোঁফ হাওয়া। অনেকটা টাক, অর্ধেকেরও বেশি চুলে পাক। চেনা সহজ নয়। এর মাঝে কোনও যোগাযোগও নেই। একটু এগিয়ে গিয়ে বিলের সামনে দাঁড়াল।
বিল একবার চোখের দিকে তাকাল এবং সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল, ‘‘সুকি!’’  
তারপর দু’জনের কত কথা। বিভিন্ন লোকে ছবি তুলছিল ওদের। সেদিকে কোনও নজর ছিল না ওদের। কে কোথায় আছে জেনে নেওয়ার পরে বিল বলল, ‘‘কয়েকটা ভাল খবর আছে আর কয়েকটা খারাপ খবর আছে। তুমি প্রথমে কোনটা শুনতে চাও?’’
‘‘ভালটা আগে বল।’’
‘‘আমি এখন প্রফেসর হয়েছি। শেফিল্ডের দুটো হাসপাতাল এখন এক হয়ে একটা বড় হাসপাতালের রূপান্তরিত হয়েছে। বেশ কিছু গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। আর শরীরের দিক থেকে মোটামুটি ঠিকই আছি। সো ফার ওকে।’’ 
‘‘কনগ্র্যাচুলেশনস।’’
‘‘থ্যাকংস।’’ 
‘‘খারাপ খবর হচ্ছে গত অক্টোবরে প্রফেসর পিটার শার্প আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন।’’  
সুকোমল এক লহমায় কেমন যেন আনমনা হয়ে গেল। 
দু’জনে দু’জনের ফোন নম্বর, ইমেল আইডি ইত্যাদি একে অপরকে দিল। সুকোমলের মনটা কিন্তু কেমন যেন পড়েছিল ওই খবরটায়, ‘প্রফেসর নেই’। তারপর থেকে আর কিছুই ভাল লাগছিল না সুকোমলের। বাইরে বেরিয়ে একটা জায়গায় চুপ করে বসেছিল। তখন শীতের রোদ্দুর। সেই মিঠে রোদ্দুরে নানা রকম শীতের সাজে হেঁটে যাচ্ছিল ডেলিগেটরা। আকাশে কয়েকটা চিল পাক খাচ্ছিল সোনালি ডানা মেলে। এ সব কিছুই ওর মন ছুঁচ্ছিল না। হঠাৎ মনে পড়ে গেল প্রফেসরের কথাগুলো...। 
*
একটা শনিবার কাজ শেষের পরে প্রফেসর সুকোমলকে বললেন, ‘‘তুমি কি আমার ঘরে একবার আসতে পারবে? একসঙ্গে বসে একটু কফি খাব। তোমার সঙ্গে কতগুলো কথা ছিল।’’  
সুকোমল খুব অবাক হল। কাজের কথা তো সামনাসামনিও বলা যায় এবং চিরকাল তাই-ই হয়ে এসেছে। কী এমন কথা যেটা আলাদা করে বলতে হবে! কোনও ভাল খবর নাকি খারাপ? কাজ শেষ করে প্রফেসরের ঘরে গিয়ে হাজির হল সুকোমল। প্রফেসর ওকে বসতে বললেন।
‘‘আমি তোমাকে কফি বানিয়ে খাওয়ালে আপত্তি নেই তো?’’   
তারপর একটু করে চুপ করে থেকে বললেন, ‘‘তোমাকে কতগুলো কথা বলব বলে ভাবছিলাম অনেকদিন। যে কথাগুলো বলব সেগুলো ভাল লাগলে মনে রেখো। তা না হলে অন্য অনেক জিনিসের মতো ভুলে যেও।’’ 
সুকোমল খুব চিন্তিত হল। 
প্রফেসর বুঝতে পেরে বললেন, “রিল্যাক্স মাই বয়, এটা কোন ভয় পাওয়ার কথাই নয়। চাকরিটা নিয়ে তো নয়ই। বাই দ্য ওয়ে, কফিটা কেমন হয়েছে?’’
‘‘খুব ভাল। সত্যিই ভাল।’’
‘‘থ্যাংকস।’’
কফিতে এক চুমক দিয়ে বললেন, ‘‘প্রথম কথাটি হচ্ছে, নিজেকে এমন ভাবে অ্যাকাডেমিক্যালি তৈরি করবে যে যেকোনও আলোচনায়, মিটিংয়ে বা কনফারেন্সে তোমার নিজেকে যদি সবচেয়ে বড় মনে নাও হয়, কখনও যেন মনে না হয় যে সবচেয়ে ছোট। অর্থাৎ তুমি সব সময়ই এতটাই আপডেটেড থাকবে, যেন তৈরি। নিজের সাবজেক্টের যে কোনও ব্যাপারে কিছুটা অন্তত কথা বলার জন্য। তার জন্য সারা জীবন, লাগাতার সাবজেক্টের পড়াশোনা চালিয়ে যেও। তুমি এটা করো, আমি দেখেছি। এটা তোমার একটা বিশেষ সম্পদ, এটা চালিয়ে যেও।’’
সুকোমল মাথা নাড়িয়ে বলল, ‘‘চেষ্টা করব প্রফ।’’ প্রফেসরকে ছোট করে, আদর করে ‘প্রফ’ বলত ও।
‘‘কোনও পেশায় কেউ শুধু কাজ করে, আর কেউ কেউ কাজের সঙ্গে ভাবে। তোমার ‘ভাবা’র ক্ষমতা আছে। সেটা তুমি সেটা নিজে বোঝো কিনা আমি ঠিক জানি না। কিন্তু এটুকু মনে রেখো যে সবার এই ক্ষমতা নেই। এই ক্ষমতাকে লালন করবে নিজের মধ্যে।’’ 
‘‘তুমি জানো সারভ্যাইক্যাল ক্যানসারের উপর আমি বহুদিন ধরে গবেষণা করে চলেছি।’’ 
সুকোমল বলল, ‘হ্যাঁ, আমি জানি। আমরাই তো স্যাম্পল কালেকশন করছি।’’ 
‘হ্যাঁ, তুমি ঠিকই বলেছ। তবে একটা প্রশ্ন তোমাকে করতে চাই। তোমার কি মনে হয় যে সারভ্যাইকাল ক্যানসার কোনও ভাইরাস তৈরি করছে? তার মানে কোনও ভাইরাস কি এর মূল কারণ? হোয়াট ইজ ইয়োর গাট ফিলিংস?’’  
একটু চুপ থেকে সুকোমল বলল, ‘‘ঠিক বুঝতে পারি না। হলেও হতে পারে।’’ 
প্রফেসর বললেন, ‘‘আমার কোনও সন্দেহ নেই যে ভাইরাসই এই কাজটি করছে। কিন্তু আমি ঠিক বুঝতে পারছি না কোন ভাইরাসটা করছে? তুমি দ্বিধাগ্রস্ত, আমি কিন্তু নই। তুমি নিজের মনে ভেবে বলো তো তোমার কি মনে হয়, যে এটা এপস্টেন বার ভাইরাস নাকি অন্য কোনও ভাইরাস?’’
সুকোমল অদ্ভুতভাবে প্রফেসরের এই ছটফটানি বুঝতে পারছিল। কিন্তু এ ব্যাপারে এখনও ঠিক বলার মতো জায়গায় পৌঁছয়নি বলে বলল, ‘‘আমার মনে হয় না। কারণ তাহলে আমরা অনেক বেশি ভাইরাস পেতাম টিসুগুলোতে।’’ 
প্রফেসর বললেন, ‘‘ঠিক বলেছ তো। তাহলে কোনও ভাইরাস তোমার মাথায় ঘুরছে? তুমি কিন্তু একটু ভেবে দেখো। স্যাম্পেলগুলো তো রয়েইছে। আমরা কিন্তু সহজেই টেস্ট করতে পারব। তুমি কিন্তু এটাকে ছেড়ে দিও না। চিন্তা করে আমাকে বোলো।’’
আলোচনা শেষ হয়েছিল এভাবেই। তারপরে কয়েকটা মাস কেটে গিয়েছে কাজের চাপে। এ নিয়ে আর তেমন করে ভাবা হয়ে ওঠেনি সুকোমলের। দেখতে দেখতে ফিরে আসার সময় হয়ে আসছিল। প্রফেসরের সঙ্গে আর এব্যাপারে কোনও আলোচনাই হয়ে ওঠেনি।
*
২০০৯ সালের ৩ ডিসেম্বর কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে এক মিটিং। বাইরে শত শত লোক। সবাই প্রবেশপত্র পাননি। এক বিশেষ পরিচিতের কল্যাণে প্রবেশপত্র পেয়েছিল সুকোমল। বক্তব্য রাখবেন হেরাল্ড আর হাউসেন। নোবেল প্রাইজ় পেয়েছেন ফিজিওলজি বা মেডিসিনে ২০০৮ সালে। একে নোবেল প্রাইজ পাওয়া বিজ্ঞানী, তায় এক যুগান্তকারী আবিষ্কার। তিল ধারণের স্থান ছিল না প্রেক্ষাগৃহে। সোমনাথ নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেছিল এমন একটা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারার জন্য। একদম কাঁটায় কাঁটায় পাঁচটায় শুরু হল অনুষ্ঠান। প্রথমেই সংবর্ধনা দেওয়া হল। স্ট্যান্ডিং ওভেশন। গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল।
বলতে উঠে উনি যা বলতে শুরু করলেন তাতে হঠাৎ করে সুকোমল কোথায় যেন হারিয়ে গেল।
‘‘আসলে আমি যে ডাক্তারি পড়ব, সেটাই ভাবিনি। কী করে জানি না সেটাই হয়ে গেল। গাইনিকোলজি ভাল লাগতে শুরু করল। কিন্তু কাজের প্রচুর চাপ। জীবন সামলাতে পারছিলাম না। ছেড়ে দিলাম। একটু একটু করে জড়িয়ে পড়লাম গবেষণার দিকে। তারপর জার্মানি থেকে আমেরিকা, আবার জার্মানিতে ফিরে আসা। গবেষণা চলেছিল এপস্টেন বার ভাইরাস নিয়ে...’’ 
এপস্টেন বার ভাইরাস!
সুকল্যাণ নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিল না। ওর প্রফেসার তো এই ভাইরাসকে নিয়েই...।
‘‘তারপর প্রায় দশ বছর পর গবেষণার দিক পাল্টালাম। বেশ কয়েক বছর ক্যানসারের কারণ খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম। অনেক লোকই যেমন খোঁজেন তেমন করেই। অনেক লোকই ভাবছিলেন, ক্যানসার কি কোনও জীবাণুর কারণে হতে পারে? সুতরাং প্রশ্ন ছিল তিনটি। প্রথম প্রশ্ন, কোনও জীবাণুর কারণেই কি জরায়ুর মুখের বা সারভাইক্যাল ক্যানসার হয়? দ্বিতীয় প্রশ্ন, যদি হয়, তাহলে সেটা কি ব্যাকটেরিয়া, প্রোটোজোয়া, ফাংগাস নাকি ভাইরাসের কারণে? যদি ভাইরাসের কারণেই হয়, তাহলে কোন ভাইরাস? এই প্রশ্নগুলো শুধু আমার মাথাতেই ঘুরছিল তা নয়। সারা পৃথিবীতে বহু ঘুরছিলেন এই প্রশ্নের পিছনে। বিশেষ করে ষাটের দশক এবং সত্তরের দশকে।’’
‘প্রশ্ন’ কথাটা শুনেই সুকোমল আবার হারিয়ে গেল। ভীষণ করে মনে পড়তে শুরু করল প্রফেসরের কথা। প্রফেসর বলেছিলেন, ‘‘সত্যি কথা বলতে কী, একটা ভাল উত্তরের থেকে সারা জীবনে একটা ‘ভাল প্রশ্ন’ পাওয়া কিন্তু কম মূল্যবান নয়। হয়তো কখনও কখনও সঠিক উত্তরের চেয়ে অনেক বেশি দামি। কারণ তা এক অন্য দিগন্ত খুলে দিতে পারে। আবার মনে পড়ে সেই প্রশ্ন, ‘তোমার কী মনে হয়...।’’ 
ঠিক এই প্রশ্নগুলোই তো করেছিলেন। এখন বুঝতে পারে ‘প্রশ্ন করা’ সহজ নয়।  
তারপরে উনি বললেন, ‘‘হঠাৎ করে কেমন করে জানি না মনে এসেছিল হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের কথা। সহযোগীরা কাজ শুরু করলেন। এটা ওটা করে, কিছুটা পাওয়া যাচ্ছিল। তারপর এই ব্যাপারটা লেগে গেল। আপনারা হয়তো ভাবছেন এটা একটা সাংঘাতিক কিছু কাজ। কিন্তু আমার মনে হয় জাস্ট এটা ‘লেগে গিয়েছে’। জাস্ট আ চান্স ফ্যাক্টর। আমার ডেস্টিনি। তাই আজ আমি আপনাদের সামনে, পৃথিবীর সামনে।’’ 
হাততালির ঝড়। ভেসে আসছিল হাজারও প্রশংসা। 
খানিকটা ঘোরে ছিল সুকোমল। সবাই হল ছাড়তে শুরু করায় সংবিৎ ফিরল ওর। ভাবল হ্যাঁ সত্যিই তো ‘চান্স’। কত কাছে ছিল জিনিসটা। প্রফেসর এত করে উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন সকলকে। অনেক ভাবে বোঝাতে চেয়েছিলেন যে, তিনি একটা উত্তরের খুব কাছাকাছি। শুধু চান্স কাছে এল না। সময় এবং চান্স মানুষকে অনেক কিছুই পাইয়ে দেয়, আবার অনেক কিছু হারায়ও। এত কাছে এসেও প্রফেসর কিছুই পেলেন না। নোবেলটা অধরা রয়ে গেল!

No comments:

Post a Comment