Sunday, December 27, 2020

 

আজকের বিষয়

২৮/১২/২০২০

আমি ইদানীং অনেক ওয়াজ দেখছি ইউটিউবে গবেষণা পারপাসে। ছোটবেলা থেকে বিশেষ বিশেষ রাতে ওয়াজে কে যায়নি। সত্যি বলতে কী মাঝে মাঝে ভালো লাগতো। কিন্তু এ যুগের ওয়াজে একটা পরিবর্তন এসেছে। এ যুগের ওয়াজে প্রাণ কই? এ যুগের ওয়াজ থেকে কি কেউ চোখ মুছতে মুছতে বাড়ি ফেরে? এ যুগের ওয়াজ থেকে কি কেউ বুক হালকা হয়েছে এমন অনুভূতি নিয়ে বাড়ি ফেরে? ওয়াহাবীদের ওয়াজে তো কোনো প্রাণ নেই। তারা করে কমেডি শো আর সার্কাস, আর করে একে ওকে গালাগালি। এ যুগের ওয়াজ থেকে মানুষ কি নিয়ে বাড়ি ফেরে? বুকভর্তি ঘৃণা ছাড়া অন্য কিছু নেওয়ার সুযোগ তো দেখি না। তারা তো দেখি মিলাদ কিয়াম মোনাজাতও করে না। যাইহোক, একটা বিশেষ পার্থক্য লক্ষ করলাম। সুন্নী হুজুরদের জামা কাপড় সস্তা, তাদের শ্রোতারাও গরিব, তাদের মঞ্চ ছোট, তাদের মঞ্চের আলো কম। ক্যামেরাও নেই চৌদ্দটা। কিছু সুন্নী হুজুর দেখলাম গাড়ি ভর্তি কিতাব নিয়ে যায় ওয়াজে, কথা বলে দামি, কিন্তু শ্রোতা কম। তারা প্রায়ই বাহাসে ডাকে, সেই ডাকে ওয়াহাবীরা সাড়া দেয় না। সাড়া দেওয়ার মতো মুখও নেই, কেন নেই সেটা বলি। দেওবন্দী ঘরানার যেসব মোল্লারা এক দুই পুরুষ আগে সৌদি টাকা পেয়ে ওয়াহাবী হয়েছে তাদের আগের ঘরানার সব মুরুব্বী ছিলেন সুফীবাদের অনুসারী, তাদের সবার পীর ছিল, তারা নবীকেও সম্মান করতো। তাদের উত্তরসূরীরা এখন দুইদিনের ওয়াহাবী হয়ে ভাতকে বলছে অন্ন। সবই টাকার খেল। ওয়াহাবীদের ওয়াজে তাই মিথ্যার ফুলঝুরি। জিকির জিনিসটা স্পিরিচুয়াল। এই জিকির ওয়াহাবীদের সংবিধানে নেই। তাই তাদের ওয়াজে প্রাণও নেই। তাদের ওয়াজে শ্রোতাদের দেখলেই বুঝা যায় তাদের আত্মা মৃত, তাদের হৃদয় ভর্তি ঘৃণার চাষবাস। যাইহোক, আমি আমেরিকায় রুট লেভেলে কিছুকাল চলার সুবাদে বলতে পারি আমেরিকায় স্পিরিচুয়ালিটি অনেক জনপ্রিয়। এজন্যেই ক্ষেত্র বিশেষে এখানে ইয়োগা, সুফীজম, কিংবা বৈষ্ণবদের অনেক জনপ্রিয়তা দেখেছি। আমেরিকার অনেকেই নিজেদের রিলিজিয়াস না বলে প্রোফাইলে লিখে ‘স্পিরিচুয়াল’, কারণ এতে আত্নার খোরাক পাওয়া যায়। এজন্যেই আমেরিকায় সর্বাধিক বিক্রিত কবিতার বই হচ্ছে জালালুদ্দিন রুমির কবিতা। আমি যখন উফিং করতে যেতাম তখন দেখেছি এইসব মামালোকেরা প্রায় সবাই স্পিরিচুয়াল! এই জন্যেই এই মানুষগুলার মন মানসিকতা এতো সুন্দর হতো। তার মানে স্পিরিচুয়াল বিষয়গুলা মানুষের অন্তরে প্রভাব ফেলেই। যে কারণে সুন্নী ওয়াজ শুনলে সেই ফিলিংস নিয়ে বাড়ি ফেরা যেতো।

ওয়াহাবীদের সব তেল চকচকা। বুঝা যায় সৌদি টাকার জেল্লা এগুলা। তাদের ওয়াজে মানুষ বেশি হওয়ার একটা কারণ হচ্ছে দেশে কওমি মাদ্রাসা অনেক, আশেপাশের মাদ্রাসা ছাত্র এসেই কাতার ভরে ফেলে। এজন্যেই আসলে পশ্চিমারা সফট পাওয়ার এক্সারসাইজ করার জন্য সৌদিকে বেছে নিয়েছিল। এক সৌদির মাধ্যমে মাদ্রাসাকে টাকা দিতে থাকলেই সব হুজুরেরা লাইনে থাকবে। বাস্তবেও তাই হয়েছে। হুজুরেরা আবার নিমক হারাম না, যার নুন খায় তার গুণ গায়। ওয়াহাবীদের টাকা নেয় তাই কোরান বিরুদ্ধ হলেও তাদের পক্ষেই সহিংস ওয়াজ করে। তারা যে কি পরিমাণ বেয়াদবী করে নবীর সাথে তা কল্পনাতীত। এজন্যেই যারা বুঝে তারা ওয়াহাবীদের ‘গুস্তাকে রাসূল’ বলে। তারা নবীর কোনো পরিচিতি এই পৃথিবীতে রাখতে চায় না। সব সাহাবীর কবরস্থান, বিবি খাদিজার কবস্থান ভেঙ্গে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে। তাদের এক প্রিয় ইমাম নাসিরউদ্দিন আলবানী প্রস্তাব দিয়েছিল নবীর লাশ বা হাড়গোর যাই পাওয়া যায় তা মসজিদে নববী থেকে তুলে নিয়ে অজ্ঞাতস্থানে ফেলে দেওয়ার। সেই আলবানীর বংশধররা এখনও সৌদি ফান্ডে চলে যদিও জনগণের প্রতিবাদের মুখে তাকে সৌদি সরকার দেশ থেকে বের করে দিয়েছিল। যাইহোক তারাই এখন পৃথিবীজুড়ে সহিংসতা উস্কে দিয়ে মুসলমানদের দুর্নাম করার ঠিকা নিয়েছে আর নবীকে যতোটা সম্ভব মানুষের মন থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় আছে। তারাই মিলাদ কিয়াম যেসবে নবীকে স্মরণ করা হয় তাতে বাধা দেয়। জিকির নেই, মিলাদ কিয়াম নেই, তাহলে কি করার আছে? তারা সেই পলিটিক্সের কথাই বলে আর পরচর্চাই করে! আর হিন্দি গান গায়। যাইহোক এসব ওয়াজ শুনতে শুনতে হঠাৎ কোন সুন্নী ওয়াজিয়ান সেই মাদকতাপূর্ণ কণ্ঠে গেয়ে উঠে সেই অনেক কালের পুরনো ফেলে আসা সুর, তখন সত্যি সত্যিই হৃদয় ছলকে উঠে। নবীর শানে গাওয়া সেই চির পরিচিত সালাম…। আহা কি তার সুর…মোস্তফা জানে রহমত পে লাখো সালাম…। শাম এ বাজ মে হেদায়েত পে লাখো সালাম…। মেহরে চারকে নুবুওয়াত পে রওশনও দুরুদ গুলে বাগে রিসালাত পে লাখো সালাম…। সেহরে ইয়ারে ইরাম তাজদারে হারাম… নাও বাহার এ শাফায়াত পে লাখো সালাম…। ফেসবুক থেকে

No comments:

Post a Comment