Wednesday, November 25, 2020

 

এই ঘৃণার শেষ কবে?

অনলাইন ডেস্ক   

২৩ নভেম্বর, ২০২০ ১৫:২৯ | পড়া যাবে ২ মিনিটে



এই ঘৃণার শেষ কবে?

এই ছবিটা দেখলাম ফেসবুকে। দেখে দুঃখ হলো। মেডিক্যাল ট্যুরিজমে ভারতবর্ষ আয় করছে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা। প্রতিবেশি দেশগুলো থেকে প্রচুর মানুষ চিকিৎসার জন্য ভারতে আসে। মধ্যপ্রাচ্য এবং  আফ্রিকার কিছু দেশ থেকেও আসে। ৫ লাখের মতো রোগী আগে প্রতিবছর। সবচেয়ে বেশি আসে বাংলাদেশ থেকে। সম্ভবত নব্বই ভাগ রোগীই বাংলাদেশের। ১০ ভাগ আফগানিস্তান, ইরাক, ওমান, মালদ্বীপ, উজবেকিস্তান, নাইজেরিয়া, ইয়েমেন, কেনিয়া, তাঞ্জানিয়া সব মিলিয়ে।

কলকাতার হাসপাতালগুলোয় দেখেছি আলাদা কাউন্টারই থাকে বাংলাদেশের রোগীর  জন্য। অনেক সময় দেখা যায় হাসপাতালে স্থানীয় রোগীর চেয়ে বাংলাদেশের রোগীই বেশি। দিল্লির এপোলো হাসপাতালে তো আফগান রোগীর ভিড়ে হাঁটা যায় না। বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসে সাধারণ মধ্যবিত্ত রোগী, উচ্চ-মধ্যবিত্তরা চিকিৎসা করাতে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরে যায়, আর উচ্চবিত্তরা যায় লণ্ডনে, নিউইয়র্কে।

পোস্টার হাতে দাঁড়ানো মহিলাটিকে দেখে মনে হচ্ছে, তাঁর শেকড় বাংলাদেশে। অর্থাৎ বাপঠাকুর্দা পূর্ববঙ্গ থেকে এসেছেন। তিনি বাংলাদেশের মুসলমানদের ঘৃণা করেন, হয়তো সে দেশের মুসলমান দ্বারা অত্যাচারিত হয়েছিল তার পরিবার। অথবা ব্যক্তিগত কোনও কারণ নয়, তিনি জাস্ট মুসলমানদের সহ্য করতে পারেন না, মুসলমানরা অসুখে বিসুখে ভুগে মরে যাক তিনি চান। বাকি যেসব দেশ থেকে মানুষ চিকিৎসা করাতে আসে ভারতবর্ষে, প্রায় সবই কিন্তু মুসলিম দেশ। মহিলার কি অন্য দেশের  মুসলিম নিয়ে সমস্যা নেই, শুধু বাংলাদেশের মুসলিম নিয়ে সমস্যা? 

এই ঘৃণার শেষ কবে? মুসলমান হিন্দুকে ঘৃণা করছে, হিন্দু মুসলমানকে ঘৃণা করছে। এত বিশাল একটা দেশকে কুপিয়ে দু খণ্ড করা হলো। তারপরও ঘৃণা যেমন ছিল, তেমনই আছে। হয় ধর্মকে বিলুপ্ত হতে হবে, নয় হিন্দু -মুসলমানকে মানুষ হতে হবে-- মনে হচ্ছে তার আগে ঘৃণার কোনও নড়চড় হবে না।

 

তাদের মুখ ছিল, মুখোশ ছিল না

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী

গড় রেটিং: 3.3/5 (3 টি ভোট গৃহিত হয়েছে)

তাদের মুখ ছিল, মুখোশ ছিল না
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী।

সারা পৃথিবীটা একটা রঙ্গমঞ্চের মতো। এই রঙ্গমঞ্চে যে যার মতো অভিনয় করে চলেছে। এই অভিনয় কতটা আসল, কতটা নকল তা বোধ হয় বোঝাটা কঠিন। মানুষ যতটা না মানুষ তার চেয়ে বেশি অভিনেতা। মানুষের অভিনয়টা যদি পুতুল নাচের সাথে তুলনা করা হয়, তবে মানুষের অদৃশ্য আঙুলের কারুকাজ যেমন সুতার টানে ইচ্ছেমতো পুতুলদের নাচায়।

হয়তো মানুষও তেমনি অদৃশ্য আঙুলের শক্ত সুতার টানে অভিনয়ে আমৃত্যু অভিনয় করে চলে। এ যেন চোখ থাকতেও অন্ধ  মানুষের আলোকিত  শহরের ছাড়পত্র পাওয়া না পাওয়ার  যন্ত্রনায় দগ্ধ হওয়ার মতো। এটা কি তবে স্বার্থের সুতার টান। নাকি মানুষ তার থেকে শক্তিধর মানুষের সুতার টানে ক্রীতদাসের মতো অভিনেতা হয়।

এভাবে শক্তির উপর শক্তির অদৃশ্য সুতার টান কোথায় গিয়ে ঠেকেছে তা হয়তো কেউ জেনেও জানে না। কারণ সবটাই তো অভিনয়। মানুষ যদি ঘুড়ি হয় তবে নাটাইটা কি তার নিজের  স্বার্থের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নাকি অদৃশ্য চেনা-অচেনা মানুষের দ্বারা  নিয়ন্ত্রিত। নাকি অন্যকিছু। যা ধরা যায় না, ছোয়া যায় না, বোঝা যায় না। যা দেখা যায় না, বলা যায় না, বরফের জমাট বাধা রক্তক্ষরণে স্তব্ধ করা যায় না।

এই রঙ্গমঞ্চে সবাই নায়ক থেকে মহানায়ক হতে চায়। এই নায়ক হওয়ার প্রতিযোগিতায় কেউ একবিন্দু ছাড় দিতে চায় না। কে কাকে টেনে নামিয়ে উপরে উঠবে তার নগ্ন খেলায় মানুষ মেতে উঠে। সূর্যের চারপাশটা মানুষের অন্ধকারে ঢেকে যায়। মানুষ যে এভাবে উল্টোপথে দৌড়াতে দৌড়াতে একদিন নিজেই নিজেকে হারিয়ে ফেলে। সব যেন অচেনা হয়ে যায়। অচেনা মানুষ, অচেনা সময়, অচেনা পথ। এতটাই অভিনয়ের নাটকীয়তা যে বাস্তবের সেই মায়াবী মুখের মানুষগুলো আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

যারা পৃথিবীটাকে পৃথিবী হিসেবে দেখেছিলে। মানুষকে আলোর পথ দেখিয়েছিল। তাদের মুখ ছিল, মুখোশ ছিল না। বাস্তবের নায়কেরা রঙ্গমঞ্চের নায়কদের সাথে প্রতিদিন হারছে। সত্য মিথ্যার কাছে লুটিয়ে পড়ছে। শহরের পর শহরে মানবিক মূল্যবোধ প্রতিদিন অন্যায়ের কাছে আত্মসমর্পণ করছে। সবকিছু সময়ের দোলাচলে নেতিবাচকতার দখলে চলে যাচ্ছে। না আছে মানবিক সম্পর্ক, না নাড়ির টান। সব অভিনয়। সবাই অভিনেতা। কেউ ভিলেন নয়, সবাই নায়ক-মহানায়ক। মহামানব। 

তার পরও সব কুশীলবের পেছনে দাঁড়িয়ে দেখছি রঙ্গমঞ্চে মুখোশ মানুষ। তা আর দেখতে চাই না, এখন দেখতে চাই রক্তমাংসের নিখাদ মানুষ। তবেই মানুষ টিকে থাকবে, নইলে সবাই একদিন অভিনয় করতে করতে নিঃশেষ হয়ে যাবে। তখন কপাল চাপড়ানো ছাড়া আর কিছুই থাকবে না। কারণ প্রকৃতি আর সময় মানুষের কখনো ক্ষমা করে না। স্বার্থের রঙ্গমঞ্চ ভেঙে জীবনমুখী বাস্তব মানুষদের পৃথিবী গড়া যে এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

Saturday, November 21, 2020

                                 আজকের ভাবনা

                  ২২/১১/২০২০


কেউ সামনে এগোতে চাইলে আমরা দশজন মিলে তাকে ক্রমাগত টানতে থাকি।

 চলার  পথে বারবার আমাদের ধাক্কা খেতে হয়, খাদের কিনার থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য শক্ত মনোবল দরকার। 

সবার সেই মনোবল থাকে না।

তাই কেউ কেউ হারার আগেই হেরে যায়।

আর যারা জিতে যায়, তারা অনুভূতি গুলা সেভাবে উপলব্ধি করতে পারে না।

Thursday, November 19, 2020

মনের ঘরে একটি পোকা 

লুনা রহমান

 খাসা রেঁধেছো তো আজ কই মাছ আর মটরশুঁটির তরকারিটা”গরম ভাতের সাথে তেলা-কৈয়ের ঝোল মাখতে মাখতে বলে প্রবাল, “সুআরেকটু লেবু চিপে দাও আমার ভাতের উপর।”

সুপ্রিয়া ভালো রাঁধুনি। দেশি বিদেশী সব রকমের রান্না ওর হাতে দারুণ স্বাদের হয়। আর প্রবালটাও মিলেছে একটা পেটুক। বাজারের সবচেয়ে বড় মাছটামৌসুমের প্রথম ফলটাতাজা সবজির আঁটি – ব্যাগে ভরে বাড়ি নিয়ে আসে। 

কাল শনিবারদুপুরে তোহা ভাইয়ের ছেলের জন্মদিনের দাওয়াত আছেগিফট কিনে ফেলো একটা আজ।”

বরিস জনসন লকডাউন দুই মিটার থেকে কমিয়ে এক মিটার করেছেব্যস পার্টি শুরুপুলিশ ধরলে ফাইন করবে না!” 

বাড়িতে তো গেদারিং করছেনালিডিয়ার্ড পার্কে। তোহা ভাবীর স্পেশাল বিরিয়ানিবোরহানি আর কী কী যেন রান্না করে নিয়ে আসবে বলছিলো। সোশ্যাল ডিস্টেন্স মেইনটেইন করে বসবো আমরাআর বাচ্চারা একটু খেলতে পারলো একসাথে। “

সুপ্রিয়া ও তাদের বন্ধুরা ভীষণ ক্লোজ। প্রতি সপ্তাহে এর ওর বাড়ি দাওয়াতচা পানওয়ান ডিস্ পার্টিপিঠা পুলিআর বাচ্চাদের জন্মদিন বা বড়োদের বিয়ে-বার্ষিকী তো লেগেই আছে। এখন করোনা ভাইরাসের কারণে ইংল্যান্ডে লকডাউনের চতুর্থ মাস শেষ হচ্ছে প্রায়। আচমকা এই করোনা ফরোনা এসে সবকিছু বন্ধ করে দিয়েছে। এখন জুম আর ফেইসটাইম করে দেখা সাক্ষাৎ হয় সবার। 

প্রবালের সাথে সুপ্রিয়ার সুখের সংসার। দুটিতে মতের অমিল হয় খুব কম। তাই তারা যৌথ জীবনের সকল সিদ্ধান্ত দুজনে মুখোমুখি বসে আলাপ করে ঠিক করে সবসময়। ঘরের দেয়ালমনের দেয়ালআর শরীরের দেয়ালের রং নির্বাচন করে দুজনে একসাথে মিলিয়ে মিলিয়ে। 

সকালে প্রবাল অফিসে আর বাচ্চারা স্কুলে চলে যাবার পর সুপ্রিয়া বাড়িতে একা। এটা তার একার সময়নিজের সময়। সিডিতে শ্রীকান্তের গান হালকা ভলিউমে অন করে গরম চায়ের কাপ নিয়ে জানালার পাশে বসে সুপ্রিয়া। ভাবছেআগামীকাল পার্কে শাড়ি পরবে নাকি জিন্স পরে যাবে। এখন যদিও জুন মাসহিসেব অনুযায়ী সামার হবার কথা কিন্তু ব্রিটিশ আবহাওয়াকয়েকদিন থেকেই যা ঠান্ডা বাতাস বইছে! 

দোহা ভাইদের পার্টিতে কাল শ্যামলীদিও আসবে নিশ্চয়ই। শ্যামলীদি- লম্বাশুকনোগায়ের রং কালোদাঁত উঁচু খুবই সাধারণ মুখের মানুষ। তবে খুব মিষ্টি করে কথা বলেনকণ্ঠে যেন মধু মাখা। কিন্তু রূপের অভাবে বিশেষ করে না তাকালে তার দিকে কারুর চোখ পড়ে না। অথচ এই অসুন্দর মানুষটিকে নিয়েই সুপ্রিয়ার মতো দারুণ স্মার্টসুদর্শনার ভীষণ অস্বস্তি।

সিডিতে শ্রীকান্তের কণ্ঠে গান বাজছে, “মেঘ কালো আঁধার কালো আর কলঙ্ক যে কালো….. “, এই গানটিই তো বাজছিলো সেদিন সুপ্রিয়ার বাড়িতেছেলের দ্বিতীয় জন্মদিনের অনুষ্ঠানে। ঘরভর্তি মেহমানসুপ্রিয়া ছুটছিলো সবখানেসবাইকে আপ্যায়ন করতে ব্যস্ত। 

হঠাৎ করে চোখ পড়েছিল ঘরের দরোজায়ঘরে ঢোকার মুখে ছোট্ট যে কর্নারটি আছে সেখানে বুকশেল্ফের পাশে মোড়াতে বসে আছেন শ্যামলীদিআর প্রবাল হাঁটু গেড়ে বসেমুখোমুখিহাত নেড়ে নেড়ে কথা বলছে। ঘরভর্তি মানুষের আড্ডার শব্দে প্রবালের কোনো কথা শুনতে পায়নি সুপ্রিয়া। কিন্তু চোখের দৃষ্টি দেখেছে। 

প্রবালের চোখের সেই দৃষ্টি এখনো মনে আছে সুপ্রিয়ার। এতো প্রশংসাএতো ভালোবাসাএতো আদর আহ্লাদএতো সমঝোতা যে সুপ্রিয়ার সাথেকই তার জন্য তো এমন আলো জ্বলতে দেখেনি কোনোদিন প্রবালের চোখে। লোডশেডিংয়ের ঘুটঘুটে অন্ধকারে ধপ করে জ্বলে উঠা একটি ম্যাচের কাঠির মতো তীব্র অথচ ভীষণ কোমল সেই আলো। 

বুক জ্বলে যায় সুপ্রিয়ার। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেমারা যাচ্ছেআর এখনই দুই মিটার কমিয়ে এক মিটার করতে হলো তার! থাকতো কড়া লকডাউন আরো কয়েকটা মাস। ভীষণ মাথামোটা হ্যান্ডসম বরিস জনসন।

Wednesday, November 18, 2020

 

ক মার্কিন প্রবাসীর কান্না

স্টাফ রিপোর্টার

প্রথম পাতা ১৮ নভেম্বর ২০২০, বুধবার | সর্বশেষ আপডেট: ৩:৩১




স্বপ্নের দেশ আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে এসে স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে এক প্রবাসীর। ইচ্ছা ছিল দেশের জন্য কিছু করবেন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজও শুরু করেন। যে প্রতিষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন নিজের মেধায় তার অনেক উন্নতিও করেছিলেন। কিন্তু সেই প্রতিষ্ঠানই এখন কান্নার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তার জন্য। তিনি মুনির হোসেন খান। প্রতিষ্ঠান মালিকের রোষানলে পড়ে এখন জেলেবন্দি এই প্রবাসী। তার বিরুদ্ধে এক বছরে একে একে ২৫টি মামলা করা হয়েছে।
হুমকি দেয়া হচ্ছে আরো মামলা করার। তার জন্য এখন ভুক্তভোগী পুরো পরিবার। উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় সময় কাটছে তাদের। মুনির তার স্কুল জীবনের বন্ধুর অনুরোধে যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দেশে এসে কেওয়াই স্টিলে যোগ দিয়েছিলেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়িক সাফল্যও বাড়তে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় নির্বাহী পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি পান। ব্যবসায়িক কলেবর আরো বড় হতে থাকলে কোমপানির পরিচালক হিসেবেও পদায়ন করা হয় তাকে। কিন্তু তার অব্যাহত সাফল্য সহ্য হয়নি কোম্পানির বড় কর্মকর্তার। শুরু হয় দূরত্ব, যা ক্রমেই বাড়তে থাকে। এর জের ধরেই হয়রানির শিকার হন স্বপ্নবাজ মুনির। হয়েছেন ২৫টি মামলার আসামি। বেশির ভাগ মামলাই আত্মসাতের এবং একই ধরনের। সামনে আরো কঠিন মামলা দায়েরের হুমকি আসছে পরিবারের সদস্যদের কাছে। অব্যাহত হুমকির মুখে তিন সন্তানসহ দেশছাড়া হয়েছেন মুনিরের স্ত্রী জেবুন খান। তিনিও ৯ মামলায় আসামি হয়েছেন। মুনিরের বাবা চট্টগ্রাম বন্দরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেন খানও একটি মামলার আসামি। ৭৭ বছর বয়সী মোয়াজ্জেম হোসেন খান এখন ছেলের চিন্তায় শয্যাশায়ী।
মুনিরের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মুনির হোসেন খান কেডিএস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম রহমানের স্কুল জীবনের সহপাঠী। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে বন্ধুর অনুরোধে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দেশে এসে কেওয়াই স্টিলে যোগদান করেন তিনি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কেডিএস গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়িক সাফল্যও বাড়তে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৭ সালে নির্বাহী পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি পায় মুনির। ব্যবসায়িক কলেবর আরো বড় হতে থাকলে ২০১০ সালে কোমপানির পরিচালক হিসেবেও (পেইড ডিরেক্টর) পদায়ন করা হয় তাকে।
মুনির হোসেন খান চাকরিতে থাকা অবস্থায় ভারতের আগরতলায় একটি ফ্যাক্টরি স্থাপন করে কেডিএস গ্রুপ। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী বিনিয়োগের জটিলতা থাকায় ওই কারখানার দলিল প্রস্তুত করা হয় মুনিরের নামে। মার্কিন পাসপোর্টধারী হওয়ায় কারখানা স্থাপন থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনায় সুবিধা পেতেই ওই সময় তার নামে দলিল প্রস্তুত করা হয়। ইতিমধ্যে একটি হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হন কেওয়াই স্টিলের কর্ণধার ইয়াসিন রহমান।
সূত্র জানায়, ১৯৯৯ সালে চট্টগ্রামের দেওয়ানহাট এলাকায় একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্টের সামনে খুন হন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা টিএ খানের ছেলে জিবরান তায়েবী। বেসরকারি একটি শিপিং কোমপানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন তিনি। হত্যার ঘটনায় মামলা করেন তার স্ত্রী তিতলী নন্দিনী। ২০০২ সালের ১২ই আগস্ট চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত আসামি ইয়াসিন রহমান টিটুকে বেকসুর খালাস দিয়ে অন্যদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন। রাষ্ট্রপক্ষ এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে উচ্চ আদালত ২০০৭ সালের ২৮শে মার্চ ইয়াসিনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ঘোষণা করেন। পরে ২০১১ সালের ১০ই অক্টোবর যুক্তরাজ্য থেকে এসে আদালতে আত্মসমর্পণ করে কারাভোগ শুরু করেন টিটু। কিন্তু অসুস্থতার অজুহাতে ১৪ মাস হাসপাতালে কাটান। এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। সেখানেও তার মেলে ডিভিশন।
চট্টগ্রাম কারাগারের এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, জিবরান তায়েবী হত্যা মামলায় টিটুর সাজা ভোগ শুরুর পর তার পিতা কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি শিল্পপতি খলিলুর রহমান কারাগারের দ্বিতল ভবন নির্মাণে অনুদান দেন। সেই ভবনেই রাজার হালে থাকেন টিটু। অভিযোগ রয়েছে এখানেই একটি কক্ষে অফিস করার সুযোগ পান ইয়াসিন রহমান টিটু। পরিচালনা করছেন নিজের ব্যবসা। কারাগারের ভেতরেই ব্যবসায়িক বৈঠক করে বলেও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।  সেখানে ২০১৮ সালের ১১ই এপ্রিল বিকালে প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে ব্যবসা পরিচালনা নিয়ে বাকবিতণ্ডায় কারাবন্দি টিটু প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক মুনির হোসেন খানকে মারধর করেন। লাঞ্ছিত হওয়ার অপমানে প্রতিষ্ঠান থেকে পদত্যাগ করেন মুনির। যোগ দেন অন্য একটি বড় প্রতিষ্ঠানে। নতুন কোম্পানিতে একই পদে যোগদানের পর মুনিরের বিপদ আরো বাড়ে। মুনিরকে ভারতে স্থাপিত কেডিএস ফ্যাক্টরির মালিকানা থেকে শুরু করে সব দলিলাদি স্থানান্তর করতে বলা হয়। প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরি ছাড়ার এনওসি (ছাড়পত্র) পেলেই ফ্যাক্টরির সবকিছু বুঝিয়ে দেবেন বলে কর্তৃপক্ষকে জানান মুনির। কিন্তু কেডিএস কর্তৃপক্ষ এনওসি দেয়ার বদলে উল্টো মামলার হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে গাড়ি চুরির মামলা দিয়ে তাকে হয়রানি করা শুরু হয়। একের পর এক মামলা মাথায় নিয়ে একপর্যায়ে জেলে আটক হন মুনির হোসেন খান।
মুনিরের পরিবারের অভিযোগ, মুনিরকে শায়েস্তা করার জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় ২৫টি মামলা করা হয়েছে। সবক’টি মামলার বাদী কেডিএস গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান কেওয়াই স্টিলের চিফ অপারেটিং অফিসার জাবির হোসেইন। এসব মামলায় গত এক বছরের বেশি সময় চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দি আছেন মুনির। কিছু মামলায় মনিরের পিতামাতাসহ পরিবারের অন্য সদস্যদেরও আসামি করা হয়েছে।
মুনিরের আইনজীবী অলোক কান্তি দাশ মানবজমিনকে বলেন, ২০০৭ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত যেসব অভিযোগে মুনিরের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে সেগুলোর বিপরীতে অডিট রিপোর্ট দেখাতে পারেননি বাদী। কেডিএস গ্রুপ একটি বড় প্রতিষ্ঠান এবং তাদের অডিট টিমও অনেক শক্তিশালী। কোনো ধরনের আত্মসাতের ঘটনা থাকলে তা অডিট রিপোর্টেই পাওয়া যেত। বিষয়টি আদালতের নজরে আনা হয়েছে।
এসব মামলায় ন্যায়বিচার প্রার্থনা করে সমপ্রতি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কাছে আবেদন করেছেন মনিরের বাবা মোয়াজ্জেম খান। তিনি বলেন, টিটু ও তার পরিবার অনেক প্রতাপশালী। আইন ও প্রশাসন সব তাদের নিয়ন্ত্রণে। আমি তাদের সঙ্গে পারবো না। কিন্তু আমার যা কিছু আছে তার সবকিছুর বিনিময়ে আমি আমার ছেলের মুক্তি চাই। আমার ছেলে আমেরিকার নাগরিক। সে মুক্তি পেলে আমেরিকায় চলে যাবে। এই দেশে আর থাকবে না। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত মুনির হোসেন খানের স্ত্রী জেবুন খান জানান, একের পর এক হয়রানিমূলক মামলায় তার পরিবার বিপর্যস্ত। একজন নাগরিক যত বড় অপরাধী হোক না কেন তার জামিন পাওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু বানোয়াট মামলার আসামি হওয়া সত্ত্বেও অদৃশ্য কারণে তার স্বামীর জামিন হচ্ছে না।
এ বিষয়ে মামলার বাদী কেডিএস গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান কেওয়াই স্টিলের চিফ অপারেটিং অফিসার জাবির হোসেইনের সঙ্গে মঙ্গলবার অনেক চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। অফিসিয়াল নাম্বারে ফোন করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কল কেটে দেন তিনি।
তবে নাম প্রকাশ না করে প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, কেওয়াই স্টিলের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনায় চালকের আসনে ছিলেন মুনির হোসেন খান। কোমপানির কোটি কোটি টাকা সরিয়ে নেয়ার অভিযোগ তুলে তার বিরুদ্ধে মামলাগুলো করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন- একজন লোক যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ থেকে নিজ দেশে এসে কিছু করবে, যা উৎসাহব্যঞ্জক। কিন্তু মুনিরের সঙ্গে যা হয়েছে তা খুবই হতাশাজনক।
তবে এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, আমি যোগদানের পর থেকে কারাগারে এ রকম কোনো সভা হয়েছে তা আমার জানা নেই। তিনি ডিভিশন পেয়েছেন ঠিক। প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে হয়তো আদালত বা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ডিভিশন পেতে পারেন।

 

কামরুল হাসান মামুন: আমাদের সর্বনাশ অনেক আগেই হয়ে গেছে


কামরুল হাসান মামুন : আসলে আমাদের সর্বনাশ অনেক আগেই হয়ে গেছে। আমরা টের পাইনি কারণ এতোদিন বরফ থেকে পানি হতে যে সুপ্ততাপ লাগে আমরা সেই অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম। বরফ থেকে পানি হতে সুপ্ত তাপ লাগার সময় তাপমাত্রার যেমন কোনো পরিবর্তন হয় না তেমনি আমাদের সমাজের চোখে পরার মতো তেমন পরিবর্তন হয়নি।

আজকে যা দেখছি সেটা phase transition এর ফাইনাল আউটকাম। এখন সর্বনাশের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে বলে আমরা অনেকেই চমকে উঠছি। কিন্তু দেশে যদি সত্যিকারের দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতা থাকতো সেটা অনেক আগেই টের পেত। ওই রকম দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতা নেই বলে আমরা অনেকদিন যাবৎ আমাদের সমস্যাগুলো ঝাড়ু দিয়ে কার্পেটের নিচে রেখে দিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলেছি এই ভেবে যে সব কিছু ঠিক আছে। কল্পনা করা যায় একটি যুবক বিশাল একটা দা উঁচিয়ে প্রকাশ্যে লাইভে এসে একজন তারকাকে কেটে টুকরো টুকরো করার হুমকি দেয়।

যুবকটির ভাষা দেখেছেন? সে নিজেকে ধার্মিক মনে করে অথচ সাকিবের মাকে নিয়েও যেই অকথ্য ভাষায় গালাগালি করল তারপরও আমাদের সত্যিকারের ধার্মিক সমাজের মানুষ থেকে কোনো প্রতিবাদ দেখছি না। আরো বিস্ময়ের হলো এই হুমকি কাজেও লেগেছে। সাকিব ক্ষমাও চেয়েছেন। সেটাও আবার নানা মিথ্যা বলে। এইটা আরো বেশি ক্ষতিকর। এখন ওই যুবকের মতো আরো যারা আছে তারা এই ঘটনায় উৎসাহিত হয়ে এইরকম আরো অনেক ঘটনার জন্ম দেবে। এই যুবককেই যদি আজ ভারত কিংবা পশ্চিমা কোনো দেশে নিয়ে রাখা হয় সেকি ওখানে থেকে এই একই হুমকি দিতে পারতো?

অর্থাৎ সে এইটা এখান থেকে করতে পেরেছে কারণ তার মগজে এইটা গেঁথে গেছে এইটা এখানে করলে কিছু হবে না বরং অনেকেই বাহবা দিবে, প্রচুর লাইক পাবে। এইজন্যই আমি সবসময় বলি একটি দেশে যখন একই মতের ও একই ধর্মের মানুষ বেশি হয়ে যায় সেইটা আর ভালো ও সুস্থ্য না থাকারই সম্ভবনা বেশি। আর যদি সত্যিকার শিক্ষার অভাব থাকে তাহলেতো কথাই নেই। বর্তমান আওয়ামীলীগ কেবল ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য যা করল তার জের আমাদের টানতে হবে হাজার বছর ধরে।

এইটা অপূরণীয় ক্ষতি। আমরা সমাজে একটা ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছি আর সেটা হলো আওয়ামীলীগের বিকল্প নেই। এইটা একটা ডেঞ্জারাস ন্যারেটিভ! এই ন্যারেটিভের ক্ষতি এতোদিন পর স্পষ্ট হচ্ছে। এই ন্যারেটিভের কারণে আওয়ামীকে প্রগতিশীলদের আর তোয়াজ করতে হয় না। ধরেই নিয়েছে এদের সাপোর্ট বাই ডিফল্ট আওয়ামী লীগ পাবেই। আওয়ামী লীগ তাই মনোযোগ দিয়েছে ধর্মান্ধদের তোয়াজ করতে। কারও বিকল্প নেই এই ভাবনা যে কতো মস্ত বড় ক্ষতিকর তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। ফেসবুক থেকে

Monday, November 16, 2020

 

এই ‘লোক দেখানো’ ক্ষমা কি আপনি চাইবেন?

আমিনুল ইসলাম


আমি রাজনীতিবিদ নই। রাজনীতির সাথে সম্পৃক্তও নই। 
নিজেকে লেখক বলতেও আমার সঙ্কোচ হয়। 
আমি সমাজ বিজ্ঞানের ছাত্র এবং শিক্ষক। সেই সাথে লেখালেখি'র চেষ্টা করি। সমাজের নানান অসঙ্গতি তুলে ধরার চেষ্টা করি। 
আমার এই লেখা এই দেশের একটা পক্ষের পছন্দ নাও হতে পারে। 
লেখার আগে আমি বেশ কয়েকবার ভেবেছি- এই নিয়ে লেখা উচিত হবে কিনা। এরপর মনে হয়েছে সমাজের প্রতি দায় থেকে হলেও আমার লেখা উচিত। 
যেই দেশে মন্ত্রী-এমপিরা দিনে দুপুরে এমনকি স্কুল শিক্ষক'কে কানে ধরে উঠবস করায়! 
যে দেশে এমপি পুত্র প্রকাশ্য দিবালোকে মদ খেয়ে গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে মানুষ মেরে বুক উঁচু করে বলে- জানো আমি কার ছেলে? 
যেই দেশে রাজনৈতিক নেতারা ব্যাংকের কোটি কোটি টাকা মেরে দিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। 
সেই দেশে একজন মন্ত্রী এবং সাংসদ প্রকাশ্য দিবালোকে গতকাল এক প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা'র পায়ে ধরে মাফ চেয়েছেন।

আমি রাজনীতি করি না। আমার এই লেখা দয়া করে আপনারা যারা নানান দলের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত; সেই দৃষ্টি'তে দেখবেন না।

আমি জানি না এই এই মন্ত্রী'র উদ্দেশ্য কি ছিল। সেটা কারো পক্ষে'ই হয়ত জানা সম্ভব না। 
তবে ঘটনাটা পত্রিকায় পড়ে এবং ভিডিও দেখে বুঝার চেষ্টা করেছি।

ওই প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা অনুষ্ঠানে বসার জন্য চেয়ার পান'নি। এই জন্য তিনি ক্ষোভ জানিয়ে চলে যাচ্ছিলেন অনুষ্ঠান থেকে। এতে অনুষ্ঠানের অতিথি ওই মন্ত্রী'র হয়ত খুব একটা দায় ছিল না।

অনেকেই ওই মুক্তিযোদ্ধাকে বুঝানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কোন ফায়দা হয়নি। তিনি চলেই যাচ্ছিলেন।

এমন সময় ওই মন্ত্রী দৌড়ে এসে প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধার পায়ে চেপে ধরে ক্ষমা চান। এরপর অবশ্য ওই মুক্তিযোদ্ধা রাজি হয়েছেন।

তো, এই হচ্ছে ঘটনা। এরপর এখন কি হচ্ছে জানেন?

বিরোধীদলের (সেটা যখন যে দল'ই থাকুক) মানুষ তো এই দেশে সরকার যে কোন কাজ করলেই সেটার সমালোচনা করে। ঠিক যেমনটা সরকার করে বেড়ায় বিরোধীদলের সম্পর্কে। আমরা যারা রাজনীতি করি না; তারা এই সবে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। 
এখন দেখছি এমনকি মন্ত্রী'র নিজ দলের মানুষরাও এই নিয়ে হাসাহাসি করছে। সমালোচনা করছে!

কেউ বলছে- ছিঃ ছিঃ কতো বড় আঁতেল! পায়ে ধরে ক্ষমা চায়! নিশ্চয় বদের হাড্ডি! 
আরেকদল বলছে- এইভাবে কেউ ক্ষমা চায়!

অন্য আরেক দল বলছে, ক্ষমা চেয়েছেন ভালো কথা। নিজের ফেসবুকে এটা নিয়ে আবার লেখার কি আছে।

এইসব দেখে এক রকম সামাজিক দায় থেকে লিখতে বসেছি।

হুমায়ূন স্যারের জন্মদিন ছিল ১৩ নভেম্বর। ইচ্ছে করে'ই এই জন্মদিনে কিছু লিখিনি। উনার সাথে সপ্তাহ খানেক কাটানোর সৌভাগ্য আমার হয়েছিলো। এই জন্মদিনে আমি স্রেফ ওই সময়গুলো নিজের মতো করে মনে করার চেষ্টা করেছি।

যা হোক, হুমায়ূন আহমেদ তার কোথাও কেউ নেই বই'তে একটা চমৎকার বিষয় লিখে গিয়েছেন। আপনারা যারা নাটক'টি দেখেছেন, তাদের মনে থাকার কথা।

বাকের ভাই'কে পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছে। কেউ তাকে ছাড়াতে যাচ্ছে না। এলাকার মেয়ে মুনা এরপর বাকের ভাই'র বড় ভাইয়ের কাছে গিয়েছে। যে কিনা বড় সরকারি কর্তা। গিয়ে বলেছে:

- আপনি আপনার ভাই'কে ছাড়িয়ে আনতে যাচ্ছেন না কেন? 

-সে একটা বখাটে। তাকে ছাড়িয়ে আনার কিছু নেই।
 
-কিন্তু তিনি তো মানুষের উপকারও করেন।

-এইসব লোক দেখানো উপকার।

এরপর মুনা বলেছে:

- সেই লোক দেখানো উপকারটাই বা কয় জন করছে? আপনি করবেন? কেউ একজনের লোক দেখানো উপকারে যদি কারো জীবন বেঁচে যায়, তাহলে ক্ষতি কি?

হুমায়ূন স্যারের লেখা এই উক্তিটা আমি মাঝে মাঝে'ই ব্যবহার করি। মানুষ যখন বলে- লোক দেখানো উপকার; তখন আমার খুব হাসি পায়। সেই উপকারটাই বা কয় জন করছে? সমাজে বিনা স্বার্থে উপকার করার মানুষ কি খুব একটা আছে? কেউ যদি লোক দেখানো উপকার করে কারো জীবন বাঁচিয়ে দেয় কিংবা কারো ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটায় তো ক্ষতি কি?

একজন বর্তমান মন্ত্রী প্রকাশ্যে পা ধরে একজনের কাছে ক্ষমা চাইছেন; সেটা তো আমাদের সবার'ই উচিত প্রশংসা করা।

যেই দেশে মন্ত্রী-এমপিরা মানুষকে চড়-থাপ্পড় দিয়ে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়। মানুষ মেরেও বলে- জানো আমি কার সন্তান! কেউ কোন দিন কোন অন্যায় স্বীকার'ই করে না। 
সেই দেশে একজন মন্ত্রী প্রকাশ্যে পা ধরে একজন প্রবীণ ব্যক্তি'র কাছে ক্ষমা চাইছে; এতেও আমরা সমালোচনা করে বেড়াচ্ছি। হাসাহাসি করছি। কেউ কেউ আবার বলছে এইসব লোক দেখানো!

তো, এই লোক দেখানো ক্ষমা কি আপনি চাইবেন? নাকি চেয়েছেন কোন দিন?

ক্ষমতা যে কতোটা খারাপ, সেটা নিশ্চয় কারো অজানা নয়। আমি নিজ জীবন থেকে সেই শিক্ষা পেয়েছি। একজনকে সামান্য একটু ক্ষমতা দিয়ে দেখেন আপনার জীবনে। সে আর আপনাকে মানুষ'ই মনে করবেন না। ক্ষমতা মানুষকে অমানুষ করে দেয়।

যেই দেশে অপরাধ করে কেউ অপরাধ স্বীকার'ই করে না। সেই দেশে একজন মন্ত্রী ক্ষমা চাইবার পরও মানুষ এই নিয়ে হাসাহাসি করছে।

তাহলে মানুষজন ভুল স্বীকার করবে কেন? ক্ষমা চাইবে কেন?

আবার এই আমরা'ই বলি- ক্ষমা চান। ভুল স্বীকার করেন!

আমাদের তো সভ্যতার এই সংস্কৃতি'ই গড়ে উঠেনি।

এই মন্ত্রী যদি লোক দেখানোর জন্যও পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে থাকে; তাতে সমস্যা কোথায়? 
সেই ক্ষমাটাই বা কয়জন চাইছে?

আমাদের সবার'ই  উচিত প্রশংসা করা। তার অন্য অনেক কাজের যদি সমালোচনা করতে হয়, করুন। কিন্তু এই কাজের সমালোচনা করতে হবে কেন? এটি'র প্রশংসা করুন।  যাতে করে এমন সংস্কৃতি সমাজে গড়ে উঠে। মানুষজন যাতে তাদের ভুল বুঝতে পারে। ক্ষমা চাইতে যেন শেখে।

অপছন্দের মানুষ কিংবা বিপরীত পক্ষের কেউ যে ভালো কিছু করতে পারে; এর জন্য যে প্রশংসা করা সম্ভব; সেই ব্যাপারটাই আমরা জানি না। এটা চর্চার ব্যাপার। এই সংস্কৃতি আমাদের গড়ে তুলতে হবে। নইলে জীবনেও আমরা সভ্য হবো না।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

Sunday, November 15, 2020

 

খান আসাদ: বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী রাজনীতি ক্যন্সারের মতো

খান আসাদ: ইউরোপে লিবারেল ও বামেরা একটি আত্মজিজ্ঞাসার মুখোমুখি মুসলমানদের নিয়ে। এরা সব সময় ‘মুসলমানদের’ সহায়তা করেছে, কারণ এরা বহুজাতিক সমাজের স্বপ্ন দেখে, একটি বহুজাতি ও বহুত্ববাদী সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করে। কেন করে? তার জবাব ইউরোপের ইতিহাসের ভেতরে আছে। জাতিগত বা সংস্কৃতির পার্থক্যকে, ব্যবহার করা হয়েছে সহিংসতার জন্য। ফ্যাসিস্টরা এটা করেছে। ইউরোপীয় লিবারেল ও বামপন্থীরা ফ্যাসিজম থেকে শিক্ষা নিয়েছে। এরা আর জাতি বা সংস্কৃতি ঘৃণায়, তথা আত্মপরিচয়ের রাজনীতিতে ফিরে যেতে চায় না। কিন্তু এখন শাদা বর্ণবাদী নিওনাৎসিদের উত্থান ঘটছে। এরা বহুত্ববাদী সংস্কৃতির ধারনায় বিশ্বাসী নয়। নিওনাৎসিদের উত্থানে ‘রাজনৈতিক ইসলামের’ বা ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদের একটি ভূমিকা আছে। ফলে ইউরোপে ‘ইসলাম বা মুসলমান’ নিয়ে যে রাজনীতি, ডান ও বামের, সেটি একেবারেই ইউরোপীয়দের নিজেদের ঘরের রাজনীতি।

ভারতীয় উপমহাদেশ সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়নি। পাকিস্তানে ও ভারতে সাম্প্রদায়িক ধর্মান্ধ রাজনীতি প্রধান্যে। বাংলাদেশেও সাম্রদায়িক ও মৌলবাদী রাজনীতি ক্যন্সারের মতো। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক আত্মপরিচয়ের রাজনীতিও ফ্যাসিবাদ। মুক্তিযুদ্ধ না হলে, আমরা হয়তো আফগানিস্তানের চেয়েও খারাপ অবস্থায় থাকতাম। ভুলভাবে ‘ইসলাম বা মুসলমানকে জাতীয় পরিচয় হিসেবে ভাবা হচ্ছে, ইউরোপেও। জাতি ও ধর্মসম্প্রদায় যে আলাদা তা গুলিয়ে ফেলা হয়েছে। ‘আরবীয়’ না বলে ‘মুসলমান’ বলা হয়। ‘ইসলাম ভার্সেস ওয়েস্ট’ একটি সাধারণীকৃত আরোপিত ধারণা, যা ছিলো একটি কৌশল আড়াল করার, একাধারে সাম্রাজ্যবাদ অন্যধারে বিভিন্ন জাতির স্বকীয় সংস্কৃতিকে। সাম্রাজ্যবাদী বুদ্ধিজীবীদের এই ফাঁদে পা এডোয়ার্ড সাইদের মতো বামপন্থীও দিয়েছেন। উদহারণ সাঈদের বইয়ের শিরোনাম Covering Islam অথবা আহমদ ছফা বাঙালি ‘মুসলমানের’ মন খোঁজেন।

ইউরোপে এখন লিবারেল ও বামদের আত্মজিজ্ঞাসার পর্ব চলছে। ফ্রান্সের ঘটনার আগে থেকেই, মাল্টিকালচারালইজমের পক্ষে এবং ‘ইসলামোফোবিয়ার’ বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তারা কি আসলে তাদের নিজেদের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হচ্ছে কিনা। ইউরোপীয় ফ্যাসিবাদের বিরোধিতা করতে গিয়ে, সংস্কৃতির নামে ‘রাজনৈতিক ইসলামকে’ ভুলভাবে সংস্কৃতি ভেবে, এর ফ্যাসিবাদী রাজনীতিকে আড়াল করছে কিনা। বৈধতা দিচ্ছে কিনা অন্য অঞ্চলের ধর্মীয় ফ্যাসিবাদকে। ব্যাপারটা এরকম যে ডানপন্থীরা যখন মুসলমানদের ডেমোনাইজ করছে বা সন্ত্রাসী হিসেবে উপস্থাপন করছে, লিবারেল ও বামপন্থীরা তখন ‘মুসলমানদের’ রোমান্টিসাইজ করছে। ‘ইসলামী’ গান কতো সুন্দর এবং ‘ইসলামী’ কাবাব কতো ভালো, সেই আলাপ করছে। এর মাঝে হারিয়ে যাছে, আরবি, পার্সি, বিহারি বা বাঙালি জাতীয় সংস্কৃতির পরিচয়।

গান ও খাবার ‘ইসলামী’ হয়ে যাচ্ছে। বামেরা আসলে, সাম্রাজ্যবাদ ও রাজনৈতিক ইসলামের দেওয়া আত্মপরিচয়ের রাজনীতির মধ্যে আটকে গেছে কিনা, আত্মজিজ্ঞাসা সেখানে। সবাই না। অনেকেই স্থানীয় ফ্যাসিবাদের বিরোধিতার সাথে বৈশ্বিকভাবে সকল ধরনের ফ্যাসিবাদের বিরোধিতার জ্ঞান রাখেন। ‘মুসলমান’ আত্মপরিচয় নিয়ে প্রশ্ন করাটা এখন তাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। আত্মপরিচয়ের রাজনীতি নিয়ে অমর্ত্যসেনের Identity & Violence খুব কাজের বই। আত্মপরিচয়ের রাজনীতি, সেটা আজ বিশ্বব্যাপী। বহুত্ববাদী আত্মপরিচয় ও আত্মপরিচয়ের রাজনীতির বিকল্প দরকার। যে বিকল্প বৈষম্য ও সহিংসতা থেকে মুক্তি দেবে, শুধু ইউরোপীয়দের নয়, আরবীয় বা ভারতীয়দের নয়, সকল মানুষকে। আজকে তাই সেই বৈশ্বিক বদলের রাজনীতি চাই, বৈশ্বিক সংহতির ভিত্তিতে। Leave No One Behind. ফেসবুক থেকে

এক্সক্লুসিভ রিলেটেড নিউজ

Saturday, November 14, 2020

 


কোন বৈশিষ্ট্যের কারণে একজন মানুষ সফল হয়

উত্তর পাওয়া যায় ড. ডেভিড জে. শার্টজের দ্য ম্যাজিক অব থিংকিং বিগ বইতে। লেখক বলেছেন, সফল তাঁরাই হন, যাঁরা বড় স্বপ্ন দেখতে জানেন এবং সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে কাজ করেন। পরামর্শ দেওয়ার সময় অসংখ্য বাস্তব উদাহরণ ব্যবহার করেছেন তিনি। ফলে বইয়ের বিষয়বস্তু বোঝা পাঠকের জন্য সহজ হয়েছে। বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৫৯ সালে; যুক্তরাষ্ট্রে। ২০২০ সালে এসেও অধ্যাপক শার্টজের পরামর্শ ও আলোচনা বেশ সময়োপযোগী।

বিশ্বাসেই শুরু

যেকোনো বড় কাজের পেছনে যে বিষয় চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে, তা হলো বিশ্বাস। আপনি যদি বিশ্বাসই না করেন যে আপনার পক্ষে সফল হওয়া সম্ভব, তাহলে আপনি সেই পথে এগোনোর পদক্ষেপ নেবেন কী করে? তাই বড় কিছু করতে হলে প্রয়োজন নিজের চিন্তার পরিধিকে বিস্তৃত করা। চিন্তায় ও কাজে-কর্মে আশা, আনন্দ, উদ্যম আনা। এড়িয়ে চলা চাই ছোটখাটো বিবাদ বা তুচ্ছ বিষয়। যেকোনো তুচ্ছ বা নেতিবাচক ব্যাপারে জড়িয়ে পড়ার আগে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামানো কি একজন বড় মাপের মানুষের বৈশিষ্ট্য?

অজুহাতের ওষুধ

সফলতায় বিশ্বাস কিন্তু নিছক কোনো সুখকল্পনা নয়। এই বিশ্বাস তখনই পূর্ণতা পায় যখন আপনি এই বিশ্বাসকে সফল করতে কাজে নেমে পড়বেন। কেউই পুরোপুরি নিখুঁত নয়। পুরোপুরি উপযুক্ত পরিবেশ-পরিস্থিতি কখনো মেলে না। কখনোই নিয়ন্ত্রণ করা যায় না শতভাগ ঝুঁকি। তাই উপযুক্ত পরিস্থিতির জন্য অপেক্ষা করা শুধুই সময়ের অপচয়। যে কাজ আপনি আজ করতে পারেন, তা আগামীকালের জন্য কেন ফেলে রাখবেন?

বয়স, স্বাস্থ্য, ভাগ্য বা বুদ্ধিমত্তাসংক্রান্ত অজুহাতকে আপনার দীর্ঘসূত্রতার কারণ হিসেবে দাঁড় করাবেন না।

ভয়ে নেই জয়

প্রতিটি ভয়েরই কোনো একটা কারণ থাকে। তাই সেই কারণ দূর না করে ভীতির বিষয়টিকে নিছক এড়িয়ে যাওয়া মোটেও কাজের কথা নয়। ভয়কে দূর করতে দরকার পদক্ষেপ গ্রহণ। ধরা যাক, আপনার ভয় হলো পরীক্ষায় খারাপ করা নিয়ে। আপনি যদি সারা দিন পরীক্ষা খারাপ হলে কী হবে, তা নিয়ে চিন্তা করেন, তবে তা আপনার পরীক্ষা ভালো হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা রাখবে না; বরং ভালো করার আশা নিয়ে পড়াশোনা করাই কাজে দেবে। অনেক সময় আত্মবিশ্বাসহীনতার কারণে আমাদের মধ্যে ভীতি তৈরি হয়। ড. শার্টজ তাঁর বইয়ে আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর কিছু পরামর্শ দিয়েছেন: সামনের সারিতে বসার চেষ্টা করা, চোখে চোখ রেখে কথা বলা, হাঁটার গতি ২৫ শতাংশ বাড়ানো, আলোচনায় অংশগ্রহণ ও নিজের মতো তুলে ধরা, প্রাণ খুলে হাসা।

সৃজনশীলতা সবখানে

সৃজনশীলতার ক্ষেত্রে আমাদের অনেকের একটা বদ্ধমূল ধারণা হলো—এ বুঝি শুধু শিল্পী বা লেখকদের মতো নির্দিষ্ট কিছু পেশাজীবীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু পৃথিবীতে নতুন কিছু করতে হলে যেকোনো ক্ষেত্রেই সৃজনশীলতা নামক দক্ষতাটি খুব দরকার। ভালো ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তা, বিজ্ঞানী থেকে শুরু করে একজন ভালো মা বা বাবা হওয়ার ক্ষেত্রেও প্রয়োজন সৃজনশীলতা। প্রতিদিন নিজেকে প্রশ্ন করা দরকার, কীভাবে আমি প্রতিটি ক্ষেত্রে আরও ভালো করতে পারি? প্রশ্ন করা এবং অন্যের কথা শোনা সৃষ্টিশীলতাকে উসকে দেওয়ার দারুণ উপায়।

সঙ্গীসাথি দৃষ্টিভঙ্গি

আপনি যা-ই করেন না কেন, তা হলো আপনার দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন। আর ঠিক সে কারণে আপনি যদি নিজেকে মূল্যহীন বা অকেজো মনে করেন, তবে একটা সময় আপনি সেটিই হয়ে উঠবেন। অন্যদিকে নিজেকে মানুষ হিসেবে যথাযথ মূল্য দিলে বড় চিন্তা করাটাও আপনার জন্য খুব সহজ হয়ে যাবে।

প্রাণশক্তিতে বসবাস

বড় চিন্তা করতে চাইলে এমন সংস্কৃতিতে অবস্থান করা দরকার, যেটি আশা, কর্মচাঞ্চল্য আর উদ্যমে ভরপুর। এমন সব মানুষ যেন আপনার চারপাশে থাকে, যারা শুধু নিজেরাই বড় স্বপ্ন দেখে না, অন্যের মাঝেও উৎসাহ–উদ্দীপনা ছড়িয়ে দেয়। অন্যদের উৎসাহ দিতে হলে আগে দরকার নিজেকে সক্রিয় ও উদ্যমী করে তোলা। কারও কাছ থেকে মূল্য পেতে চাইলে প্রয়োজন সেই মানুষটিকেও গুরুত্ব দেওয়া। অন্যদের ইতিবাচক কাজে উৎসাহ দিন; তাঁদের মধ্যে সঞ্চার করুন প্রাণশক্তির।

আমার ভুলটি কোথায়

ব্যর্থতা তখনই সাফল্যের ভিত্তি স্থাপন করে, যখন কেউ ব্যর্থতার ক্ষেত্রে নিজের সীমাবদ্ধতাগুলোকে চিহ্নিত করতে পারে। নিয়মিত নিজেকেই নিজের গঠনমূলক সমালোচনা করতে হবে। অন্যের গঠনমূলক সমালোচনা (অবশ্যই অর্থহীন নিন্দা নয়) শোনার মাধ্যমে নিজের ত্রুটি দূর করা যায়। কোনো একটি পদ্ধতিতে ব্যর্থতা এলে পরবর্তীকালে সেই ক্ষেত্রে ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা চাই। তবেই আপনি প্রতিনিয়ত আরও উন্নতির পথে এগোতে পারবেন।

লক্ষ্যহীন জীবন হালবিহীন নৌকা

আমরা ভবিষ্যতে কোথায় যেতে চাই, তার ওপর আমাদের কর্মপরিকল্পনা নির্ভর করে। তাই লক্ষ্য স্থির করা দরকার। এ ক্ষেত্রে ভালো একটি কৌশল হলো, জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আপনি নির্দিষ্ট সময় পর কোথায় যেতে চান, সেটি কাগজে-কলমে লিখে ফেলা। এর ফলে একটি পরিষ্কার চিত্র তৈরি হবে। দৈনন্দিন ছোট ছোট পদক্ষেপ বা অভ্যাস আপনাকে আপনার বড় লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়, তাই সেগুলোর বেলায়ও হেলাফেলা করা যাবে না। নতুন কিছু শেখার বেলায় সময় এবং অর্থ বিনিয়োগ করলে আমাদের জীবন হয় সমৃদ্ধ।

হয়ে উঠুন পথপ্রদর্শক

বিশ্বের বড় বড় কাজ অনেক সময়ই একজন ব্যক্তির পক্ষে সম্পূর্ণ করা সম্ভব হয় না। এখানে প্রয়োজন হয় সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা। নেতৃত্বের গুণাবলি অর্জন করার মাধ্যমে আপনিও একজন পথপ্রদর্শক হিসেবে পৃথিবীর এই ইতিবাচক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে পারেন। অধ্যাপক শার্টজের মতে, নেতৃত্ব দিতে হলে দরকার, আপনার অধীনে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের চিন্তাভাবনার পদ্ধতি বা দৃষ্টিভঙ্গিকে বোঝার চেষ্টা করা, তাঁদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করা এবং সব সময় প্রগতির পথে এগোনোর চেষ্টা করা।

একজন সফল পথপ্রদর্শকের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো চিন্তা করতে পারা। এই ব্যস্ত পৃথিবীতে চিন্তাভাবনার জন্য রোজ খানিকটা নিঃসঙ্গ সময় বের করে নিতে পারেন। এই একাকী সময়ের চিন্তাভাবনা আপনার সৃজনশীলতাকে বাড়াবে; ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও কর্মক্ষেত্রসংক্রান্ত নানান সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখবে।

*সংগ্রহীত