Sunday, November 8, 2020

 



৯/১১/২০২০

অন্যের ভাবনা

তারুণ্য হচ্ছে একটি সাইকোলজিক্যাল প্রোগ্রাম, এটি কোনো শরীরগত ব্যাপার নয়। অনেকেই, আজকাল ধরে নিয়েছে যে, তারুণ্য হচ্ছে দৃশ্যমান ব্যাপার, যে ছেলেটি বা মেয়েটি সবচেয়ে আধুনিক, কথাবার্তায়, পোশাকে ও গণসংযোগে, সেই বোধহয় ধারণ করে আছে সবচেয়ে বেশি তারুণ্য। এটি তারুণ্যকে ভুলভাবে সংজ্ঞায়িত করে। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, তারুণ্য কোনো আধুনিকতার ব্যাপার নয়, এটি সবকালেই ছিল, সময়ের সবচেয়ে অগ্রসর চিন্তাশীলরাই তরুণ, আর যারা চিন্তার দিক থেকে অনগ্রসর, তারা মানসিকভাবে বৃদ্ধ।

.
অনেকেই আজকাল রাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতিতে কিছুটা প্রতিষ্ঠিত, এবং তাদেরকে বলা হচ্ছে সফল, কিন্তু সত্য হচ্ছে, সমাজের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য এলাকায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারাটাই সাফল্য বা তারুণ্য নয়। তারুণ্য হচ্ছে একান্তই ব্যক্তিগত দৃঢ়তার ব্যাপার। কে কতো বেশি দৃঢ়, তার আর্থ সামাজিক, নীতি ও নৈতিকতার প্রশ্নে, কে কতো প্রবলভাবে ধারণ করতে পেরেছে নির্দিদ্বায় সত্য বলার মানসিকতা, কে কতো দৃঢ়ভাবে করতে পেরেছে সেই কাজটি, যা সত্যিই সমাজকে বদলে দিতে পারে, তার মধ্যেই তারুণ্য আছে বলে আমরা ধরে নিতে পারি। সত্তর বছরের কোনো বৃদ্ধ যদি উদ্ভাবন করে নতুন কিছু, তাহলে নিশ্চিতভাবেই তার মধ্যে তারুণ্য আছে। চব্বিশ বছরের কোনো যুবক যদি ভেসে যায় সোসাল পপুলারিটির গণস্রোতে, যদি সে নতুনভাবে চিন্তা করতে ব্যর্থ হয়, যদি সে সবকিছু মেনে নেয় বিনাপ্রশ্নে, যদি সে সত্য কথা বলতে ভয় পায়, কিংবা দাসত্ব করে গতানুগতিক রাজনীতি ও সমাজনীতির, যদি সে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে না পারে সমাজের অসংগতি, তবে সে নিশ্চিতভাবেই বৃদ্ধ। সেই সত্তর বছরের বৃদ্ধের চেয়েও তার বৃদ্ধত্ব অনেক বেশি শোচনীয়।
.
তারুণ্য মানে উঁচু গলায় কথা বলা নয়, সবচেয়ে প্রবলভাবে রাজপথে চিৎকার করতে পারার ক্ষমতাও নয়, তারুণ্য বিরাজ করে নতুন চিন্তায়, নতুন ধারণায়, এবং পৃথিবীকে নতুনভাবে দেখার ও উদ্ভাবন করার মধ্য দিয়ে। এখন বলুন, এই স্রোতেভাসা গণমানুষের সমাজে প্রকৃত তরুণ আসলে কতজন?
.
আনসারি তৌফিক,
৮ই নভেম্বর, ২০২০ইং,
কিশোরগঞ্জ।

No comments:

Post a Comment