Wednesday, September 29, 2021

 আলুর পাকোড়া



উপকরণ: 

অলিভ অয়েল বা সাদা তেল, চারটে ছোট মাপের আলু, এক কাপ কেটে রাখা পেঁয়াজ, তিনটে ছোট ছোট কুচি করে রাখা কাঁচা লংকা, পরিমাণমতো ধনেপাতা কুচি, আধ টেবিল চামচ আদা বাটা, আধ টেবিল চামচ রসুন বাটা, হাফ কাপ বেসন, দুই টেবিল চামচ চালের গুঁড়ো, হাফ টেবিল চামচ বেকিং পাউডার, পরিমাণমতো লবণ

প্রণালী: 

প্রথমে আলু হালকা সেদ্ধ করে নিন।এবার সেদ্ধ করা আলু একটি পাত্রে নিয়ে রেখে দিন। অন্য একটি পাত্রে কেটে রাখা পেঁয়াজ এবং মরিচ কুচি, আদা এবং রসুন বাটা, এক চিমটে লবণ দিয়ে মেখে নিন। এবার এই মিশ্রণটিতে সেদ্ধ করে রাখা আলু হালকা ভাবে ছোট ছোট করে ভেঙ্গে নেবেন। একেবারে চটকে ফেলবেন না। এবার হালকা ভাবে আলুটা মেখে নিন পেঁয়াজের মাখা মিশ্রণটির সঙ্গে। খেয়াল রাখবেন আলু সেদ্ধ মাখার মতো চটকে না যায়।

এবার আলু হালকা মাখা হয়ে গেলে তার মধ্যে বেসন, চালের গুঁড়ো এবং বেকিং পাউডার নিয়ে হালকাভাবে মেখে নিন। একটু সামান্য পরিমাণ পানি দিয়ে আলতোভাবে মেখে নিন। কড়াইয়ে তেল গরম করে করুন। ফুটন্ত ডুবো তেলে মেখে রাখা আলুর মিশ্রণটি গোল করে ছেড়ে দিন। এবার কড়া করে লালচে করে ভেজে সসের সঙ্গে গরম গরম আলুর পাকোড়া পরিবেশন করুন।

 



ভুট্টার পাকোড়া

উপকরণ:

 ভুট্টার দানা ৩ কাপ, পেঁয়াজ ২টি, ক্যাপসিকাম ১টি, কাঁচা মরিচ ৪টি, আদা বাঁটা ১ টেবিল চামচ, মরিচ গুঁড়ো আধ চা চামচ, ধনেপাতা এক মুঠো, বেসন আধ কাপ, কর্নফ্লাওয়ার আধ কাপ, লবণ স্বাদমতো, তেল ১ কাপ, মৌরি গুঁড়ো ১ টেবিল চামচ, ভাজা জিরে গুঁড়ো ১ টেবিল চামচ, চাটমশলা ১ টেবিল চামচ।

প্রণালী: 

সবজিগুলো টুকরো করে কেটে নিন। একটি পাত্রে বেসন, কর্নফ্লাওয়ার, লবণ, ও মশলাগুলি দিয়ে পানি দিয়ে ফেটিয়ে ব্যাটার তৈরি করুন। ব্যাটারে একে একে ভুট্টা, পেঁয়াজ, ক্যাপসিকাম, কাঁচা মরিচ, ধনেপাতা কুচি, আদাবাঁটা মেশান। ভালো করে মেখে নিন।

কড়াতে সাদা তেল গরম করে অল্প অল্প করে ব্যাটার নিয়ে পকোড়ার আকারে গরম তেলে ছাড়ুন। লালচে করে ভাজা হলে তেল ঝরিয়ে তুলে নিন।বাড়িতে তৈরি স্বাস্থ্যকর পকোড়া আরও স্বাস্থ্যসম্মত করতে কিচেন ন্যাপকিন পেপারে মুড়ে তেল শুকনো করে নিন। এর ওপরে চাটমশলা ও গোলমরিচ গুঁড়ো ছড়িয়ে চাটনি অথবা সস দিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন ভুট্টার পাকোড়া।


 

রুখে দিন ত্বকের বলিরেখা


নারকেল তেল

প্রথমে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ভালো করে মুখ ধুয়ে নিন। এরপর হালকা হাতে পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে নেবেন। এবার আঙুলের ডগায় সামান্য নারকেল তেল নিয়ে সম্পূর্ণ মুখে ও গলায় বৃত্তাকারে ম্যাসাজ করুন। তারপর সারারাত মুখে তেলটা রেখে দিন, ত্বক নিজ থেকে তা শোষণ করে নেবে। ত্বকের বার্ধক্য প্রতিরোধ করার জন্য প্রতি রাতে এই পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন।


অ্যাপল সাইডার ভিনেগার ও নারকেল তেল

অ্যাপল সাইডার ভিনেগারের সঙ্গে নারকেল তেল এই সমস্যা দূর করতে আরো সহায়ক। এক চামচ অ্যাপল সাইডার ভিনেগারের সঙ্গে এক চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে নিন। এবার মিশ্রণটি তুলার সাহায্যে মুখে লাগিয়ে স্বাভাবিকভাবে শুকাতে দিন। এবার আরো খানিকটা শুধু নারকেল তেল নিয়ে মুখে ও গলায় বৃত্তাকারে ম্যাসাজ করুন। এরপর সারারাত মুখে তেলটা রেখে দিবেন। অ্যাপল সাইডার ভিনেগার ত্বকে অ্যাস্ট্রিনজেন্টের কাজ করে এবং নারকেল তেল ত্বকে প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা সঞ্চয় করে দেয়। আর এভাবে দূরে রাখে ত্বকের বার্ধক্যকে।


ছানা ও নারকেল তেল


দুধের মধ্যে লেবুর রস দিলে সহজেই ছানা কেটে যায়। আর এই ছানাই এবার কমাবে আপনার ত্বকের বলিরেখা। ছানায় নারকেল তেল মিশিয়ে ভালো করে মুখে ম্যাসাজ করুন। দুই থেকে তিন মিনিট ম্যাসাজ করার পর ওই মিশ্রণটি মুখের মধ্যে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। লেবুর মধ্যে থাকা ভিটামিন সি উজ্জ্বল করবে আপনার ত্বক এবং দুধ ও নারকেল তেল দূর করবে বলিরেখা।

 



গোলাপের লাচ্ছি


উপকরণ:

দই আধা কেজি,

গোলাপের সিরাপ ৪ টেবিল চামচ,

চিনি পরিমাণমতো,

ফ্রেশ ক্রিম ২ টেবিল চামচ,

বরফের টুকরা ৬–৭টি,

শুকনা গোলাপের পাপড়ি ১ টেবিল চামচ

গোলাপজল দেড় টেবিল চামচ।

প্রণালি:

সব উপকরণ একসঙ্গে ব্লেন্ড করে ইচ্ছেমতো সাজিয়ে পরিবেশন করুন।




Sunday, September 26, 2021

 

বিয়ের তারিখই বলে দেবে আপনার বিবাহিত জীবন কেমন যাবে।

নিজেই হিসেব করে দেখে নিতে পারেন কোন দিনটি আপনার জন্য শুভ। উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, আপনার বিয়ের তারিখ স্থির করা হয়েছে ৭-১২-২০১৭-তে। তাহলে এই সবকটি সংখ্যা যোগ করে নিন। তাহলে দাঁড়াবে, (৭+১+২+২+১+০+৭)=২০। অর্থাৎ আপনার বিয়ের সঠিক তারিখ হল-(২ ০)=২। এবারে দেখা যাক, কোন দিনটি কার জন্য শুভ।

১ নম্বর-
আপনি এবং আপনার সঙ্গী খুবই রোমান্টিক। যদি বিয়ের জন্য যেকোনও ১নম্বর বেছে নেন তবে, বলাই যায় আপনারা খুবই স্নেহময় এবং ভালোবাসার কাপল। আপনারা যদি এই দিনটিকে বেছে নেন বিয়ের জন্য। তবে, বলাই যায় আপনারা খুবই বুঝদার কাপল। আপনাদের মধ্যে বোঝাপরা মারাত্মক।

২ নম্বর-
আপনারা আপনাদের বিয়েটাকে সকলের কাছ থেকে গোপন করে রাখার চেষ্টা করছেন। আপনারা দুজনেই খুব আবেগপ্রবণ।

৩নম্বর-
যদি আপনি আপনার সঙ্গী বা সঙ্গিনীর থেকে টাকা পয়সা চান। তবে, বিয়ের জন্য এই নম্বরকেই বেছে নিন। আপনারা দুজনেই আপনার পরিবার পরিজন কি ভাবছে সেই বিষয়ে চিন্তিত থাকেন।

৪নম্বর-
দুজনের মধ্যে বোঝাপড়া মারাত্মক। একসঙ্গে কাজ করেন উদ্দেশ্য পূরণের জন্য। ব্যবসার কাজে আপনারা খুবই ভালো। সমস্ত কিছুই চিন্তাভাবনা এবং পরিকল্পনা করে করেন।

৫নম্বর-
আপনাদের মধ্যে মনের খুবই মিল। কিন্তু আপনারা দুজনেই দুজনের থেকে বেশ কিছুটা সময় চান। একা থাকতে ভালোবাসেন।

৬নম্বর-
এই তারিখে যারা বিয়ে করেন তারা সবথেকে বেশি সৌভাগ্যবান বা সৌভাগ্যবতী। একে অপরের প্রতি ভালোবাসা, বিশ্বাস এবং কেয়ারিং অত্যাধিক।

৭নম্বর-
আপনারা একে অপরের সঙ্গে থাকতে খুবই ভালোবাসেন। একে অপরের সঙ্গে অনেকক্ষণ থাকতে ভালোবাসেন।

৮নম্বর-
যেকোনও কাজ থেকে শুরু করে দাম্পত্য জীবনও আপনারা একে অপরের একেবারে যোগ্য। নিজেদের মধ্যে শান্তি বজায় রাখার চেষ্টা করেন সব সময়।

৯নম্বর-

একে অপরকে খুব বিশ্বাস করেন। তবে, আপনাদের শান্তি বিঘ্নিত করতে অনেকেই আসবে। কিন্তু আপনাদের মধ্যে বিশ্বাস অটুট।!

Tuesday, September 21, 2021

  

২২/৯/২০২১

কিছু কথা


১।

খাঁচায় বন্দি পাখি যেমন না উড়তে উড়তে, উড়তে ভুলে যায়, ভয় পেতে পেতে আর সে উড়তে পারে না, ভয় কাটাতে পারে না, তেমনি মেয়েরাও মনে মননে শরীরে দুর্বল অসহায়ত্ব বরণ করে নেয়। কিন্তু বাস্তবে এই মেয়েটি শক্তিতে চিন্তায় ছেলেদের চেয়ে কোনোভাবেই কম নয়। শুধু চিন্তায় ভাবনায় শরীরে প্যাকটিসই হলো মূল বিষয়। তুমি দুর্বল ভাবো বলেই দুর্বল, তুমি ভয় পাও বলেই তারা ভয় দেখায়


.২/

যখন নিজের গর্ব করার মতো কিছু অবশিষ্ট থাকে না, তখন মানুষ অন্যের কুৎসা রটনায় ব্যস্ত হয়। একটা ছোট রেখার পাশ্বে একটি বড় রেখা যখন অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ করে, তখন বড় রেখাটাকে মেটাতে ব্যবহার করতে হয় ইরেজার। কুৎসা হলো সেই ইরেজার।

Monday, September 20, 2021

 

পুরুষতন্ত্রের ভিক্টিম কেবল নারীই নয়, খোদ পুরুষ নিজে


শেখ মুন


 সমাজতন্ত্র কায়েমের সঙ্গে নারীর অধিকার আপনা আপনি প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আমরা আগে যারা স্বপ্ন দেখেছি, বাস্তবে দেখেছি সেটি হয়নি। সমগ্র সোভিয়েত ইউনিউনের ৫০ বছরের ইতিহাস সেটি বলেনি। দাসপ্রথা বিলুপ্ত হলেই নারীর দাসত্ব ঘুচেনি। কারণ নারীর দাসত্ব প্রথম তার ঘরে, পরে বৃহৎ পরিবার, পরে ধর্ম, পরে সামাজ, তারপরে আইন এবং রাষ্ট্র। এতোগুলো ইস্ট্যান্স পার হয়েই নারীকে মুক্ত হতে হয়। সেটা কি আজও সমগ্র মানব সমাজের জন্য সম্ভব হয়েছে? আর নারীর যুদ্ধেতো নারী একা এমন কি নারী নারীকেই পায়নি তার যুদ্ধে। আরোপিত রাষ্ট্রীয় দাসত্ব পুরুষের ক্ষেত্রেও সমান প্রযোজ্য। আর তার জন্য আজও শ্রমিক তার ন্যায্যমূল্য পায় না। কৃষক তার ফসলের ন্যায্য দাম পায় না। কিন্তু ঘরে এসে সে পুরুষ দাসটিরও আছে একজন দাস, সে তার অধীনস্থ নারী। কল্পনায় ধরে নেই পুরুষ এবং নারীকে রাষ্ট্রধর্ম আইন সমাজ মুক্তি দিয়েছে কিন্তু ঘরে এসে পুরুষ এসে পুরুষটি এই সংস্থার সকল এলিমেন্টস বহন করে নিজেই প্লে করছে প্রভুর রোল, নারীর সঙ্গে। অর্থাৎ সকল সংস্থা থেকে নারী মুক্ত হলেও পুরুষের কাছে তার দাসত্ব বহমান। আর এজন্যই নারীর সাপ্রেশন মাল্টিপল। তার বিধাতা এক নয় বহু। আর এর পেছনের কারণটি হাজার বছরের ‘পুরুষতন্ত্র’। পুরুষতন্ত্রের ভিক্টিম কেবল নারী নয়, খোদ পুরুষ নিজে।

যে মানসিকতার শিকার হয়ে সে পুরুষ, সে তার একার সৃষ্টি নয়। একদিনেও নয়। এ সৃষ্টি অনেককাল ধরে। একটি সিস্টেমে জন্ম নিয়ে হাজার জেনারেশন নি:শেষ হয়েছে, জেনারেশনের আবির্ভাব ঘটেছে। সেখানে জন্ম নিয়ে সে সিস্টেম আলাদাভাবে দেখতে পারা মুখের কথা নয়। এর সৃষ্টির কারণগুলো নির্ণয় করতে পারলে কাজগুলো অন্তত সহজ হয়, চিন্তাগুলো প্ল্যাটফর্ম পায়। আর তার জন্য অনেক গভীরে যাওয়া দরকার। মানুষ প্রাণী হিসেবে এমনিতেই খুব কমপ্লেক্স একটি প্রাণীকূল। কোনো নির্দিষ্ট একটি বিষয় কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের কারণ নয়। বহুবিধ কারণ। পৃথিবী নামের প্ল্যানেটে মানবকুল একটি হোমজেন গ্রুপ হলে তো কথাই ছিল না। এখানে মেধার বিভাজন আছে, সম্পদের বিভাজন আছে, যোগাযোগের বিভাজন আছে। আর এই যোগাযোগের বিভাজনের কারনেই পৃথিবীর এক কোণের সঙ্গে আরেক কোণের জীবন যাপন ধরণ ধারণে অনেক পার্থক্য অলরেডি হয়ে আছে সহস্র বছর ধরে। সেগুলো এতো যেঁতে থাকা তার ভেতর তরঙ্গ সৃষ্টি এক অসাধ্য অধ্যায়। সেগুলো অনেক বেশি শক্ত হয়ে গেঁথে রয়েছে। যা কখনও ধর্মের দ্বারা পরিচালিত কখনও সামাজিক প্রথা আবার কখনও উপনিবেশবাদের কারণে সৃষ্ট। শৃঙ্খল সৃষ্টি যে কারণে তার বিপরীতে শৃঙ্খল ভাঙা পুরুষের জন্যই সহজ হয়নি আজও। আর নারী থেকে গেছে শৃঙ্খলের অধীনস্থেরও অধীনস্থ। মুক্তি প্রার্থীর শেষ কাতারের শেষ কাতারেও নারীর জায়গা মেলেনি। কৃষির বিকাশে নারীর মুক্তি আসেনি। শিল্পের বিকাশে নারীর মুক্তি আসেনি। সমাজতন্ত্রের তাত্ত্বিক এবং প্রয়োগের ইশতেহারের সঙ্গে সমাজতন্ত্র বিকাশে নারীর অবস্থানে থেকে গেছে বিশাল পার্থক্য। একটি জাতি মনস্তাত্ত্বিকভাবে যতো উন্নত ততো উন্নত সে জাতি। আর তার পেছনে অনেক সহস্র ফ্যাক্টর কাজ করে। মানুষকে অর্জনের সুযোগ দিতে হয়। মনস্তাত্ত্বিকভাবে মানুষ কয়েকটি বিষয় কোনোদিন মেনে নেয় না। চাপিয়ে দেওয়া কোনোকিছু কোনোদিন মানুষ মেনে নেয় না।

মানুষকে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে দান করেও তার চাহিদা মেটানো যায় না। একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়তে হলে সে সমাজের মিনিমাম স্ট্যাডান্ডারড অফ লাইফ নিশ্চিত করতে হবে। মানুষের সেটি নিশ্চিত হওয়ার পরও বহু বছর পর সে বুঝতে সক্ষম হয় ‘কোয়ালিটি অফ লাইফ’। যখন সেটি ঘটে সে মাহেন্দ্রক্ষণেই তার ঘটে নিজের সঙ্গে কন্ট্যাক্ট। আত্মপরিচয়। পরিচয় ঘটে তার ডিগনিটির সঙ্গে। এটি অবশ্যই সর্বচ্চ জীবন কোয়ালিটি। এটি এমনি ঘটেনা। কালেক্টিভ বৈষম্যহীন পরিমার্জিত প্রাপ্তির ভিত্তিতে সে বোঝে, যা আমার নয় তাকে দখল করে থাকা একটি বর্বরতা। লজ্জার। এ পৃথিবীর কিছুই নির্ধারিত নয়, সবটাই অর্জন করার। এখানে সার্ভ করার কেউ নেই। প্রতিটি মুভমেন্ট তার কর্মসঞ্চালনার প্রেক্ষিতেই ঘটবে। নতুবা নয়। সে ‘স্টেট অব মাইন্ডে’’ পৌছুতে যে সমাজ গড়া দরকার সে সমাজ থেকে এখনও পৃথিবীর বৃহদাংশ বঞ্চিত। এক অলীক না দেখা তালা বদ্ধ ভুবন। ইউটপিয়া। উন্নত জীবনবোধও যে শ্রেণি ইস্যু। সামর্থ্যের বিষয়। ইনডিড। লক্ষ্যে পৌছুতে দূরত্ব অনেক। তবে যাত্রা পথে শক্ত হাতে সাঁড়াশি দিয়ে কিছু হিস্যা আদায় করে নিতে হয় বৈকি। আর সে বিষয়ে কথা বললেই না এতো শোরগোল?


Wednesday, September 15, 2021

 

ফিরে আসুক উদারনৈতিক সুফি ইসলাম

তসলিমা নাসরিন

১. ব্রহ্মপুত্র নদ ছিল আমাদের বাড়ি থেকে হাঁটা দূরত্বে। নদের তীরে প্রায় বিকেলেই চলে যেতাম ছোটবেলায়। দেখতাম তীরে দাঁড়ানো ‘বুড়া পীরের মাজার’টিতে লোকের ভিড়। দেখতাম নারী-পুরুষ মোমবাতি জ্বালিয়ে যাচ্ছে সেই মাজারে। দেখতাম মাজারের পাথরে মাথা ঠেকিয়ে কেউ কিছু চাইছে। দেখতাম দানবাক্সে টাকা ফেলছে নারী-পুরুষ। দেখতাম ভিড়ের নারী-পুরুষ অনেকের গায়ে ধুতি, গায়ে শাখা সিঁদুর। মাকে জিজ্ঞেস করতাম, মুসলমান পীরের মাজারে হিন্দুর ভিড় কেন? মা বলতেন মাও তার ছোটবেলায় এমনই দেখেছে। মাজারে হিন্দু মুসলমান সকলেই যায়। অন্য ধর্মের মানুষও মুসলমান পীরকে মানছে বলে মুসলমান বলে গর্ব হতো মা’র। বড় হয়ে উপমহাদেশের বেশ অনেক মাজারই কাছ থেকে দেখেছি, নয় ওসবের গল্প শুনেছি। শুনেছি শুধু মুসলমান নয়, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান সব ধর্মের লোকই মাজার জিয়ারত করতে যায়। আদিকাল থেকেই যায়। কারণ খুঁজতে খুঁজতে ভারতবর্ষে ইসলাম কী করে এলো তার ইতিহাস পেয়ে যাই। ইতিহাস বলে সপ্তম শতাব্দীতেই আরবের মুসলমান ব্যবসায়ী আরব সাগর পাড়ি দিয়ে ভারতবর্ষে প্রবেশ করেছিলেন মশলার আশায়। মালাবার অঞ্চলে তাঁরা স্থানীয় নারীদের বিয়ে করে পাকাপাকি বাস করতে শুরু করেন। তারও আরও পরে বাগদাদ থেকে হাঁটি হাঁটি পা পা করে সুফিরা ঢুকে যান বিশাল ভারতবর্ষে। সুফিরা এসেছিলেন ইসলাম প্রচার করতে, মুঘলরা নয়। মুঘলদের উদ্দেশ্য ছিল সম্পূর্ণই রাজনৈতিক। যে কোনও উপায়ে ক্ষমতায় আরোহণ। মুঘল সম্রাটরা ধর্ম প্রচারে উৎসাহী ছিলেন না, তাঁরা নিজেরাই বিধর্মীদের বিয়ে করেছেন এবং বিধর্মীদের নিজ নিজ ধর্ম পালনে উৎসাহ দিয়েছেন। সুফিরা যে ইসলাম প্রচার করেছিলেন, সেটি ছিল উদার ইসলাম। উদার মুসলমানের হাতে পড়ে সেই ইসলামটি স্বার্থকে নয়, সেবাকে বড় করে দেখেছে, মহানুভবতাকে সবার ওপরে ঠাঁই দিয়েছে। লোভ লালসা, খুনোখুনি প্রতিশোধ প্রতিহিংসে বাদ দিয়ে আধ্যাত্মিকতায় মনোনিবেশ করেছেন সুফিরা। সুফিরা যে আদর্শ ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন সবখানে, তা হলো, ঈশ্বর এক, ঈশ্বরের সৃষ্ট মানুষ সকলে সমান, যার যা ধর্ম থাকুক, যার যা বিত্ত থাকুক, যার যা জাত থাকুক, সবাইকে মানুষ হিসেবে সমান মর্যাদা দিতে হবে। মানুষের সেবাই ঈশ্বরের সেবা। সুফিদের সমতার আদর্শে আকৃষ্ট হয়ে সমাজের দরিদ্র, নির্যাতিত, নীচুজাত ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলমান হয়ে গেছে। চিশতিদের খানকা শরিফগুলোতে সব জাতকেই এক থালায় খাওয়ানো হতো। কুৎসিত জাতপ্রথাকে অস্বীকার করেছিলেন সুফিরা। সুফিরা মানুষের সততা এবং স্বার্থহীনতাকে মূল্য দিতেন। সমগ্র ভারতবর্ষে মুসলিমরা এই সুফি আদর্শেই প্রজন্মের পর প্রজন্ম প্রভাবিত হয়েছে। সুফি ইসলাম স্থানীয় হিন্দু সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে এক উদার ইসলামের জন্ম দিয়েছে। বাংলার ইসলামের চর্চা আর রাজস্থানের ইসলামের চর্চা তাই ভিন্ন। তামিল ইসলামের চর্চা আর উত্তর প্রদেশের ইসলামের চর্চা তাই ভিন্ন। একজন বাঙালি মুসলমানের সংস্কৃতি আর একজন রাজস্থানি মুসলমানের সংস্কৃতি আর একজন তামিল বা উত্তর প্রদেশের সংস্কৃতি তাই ভিন্ন। বাঙালি মুসলমানের সংস্কৃতির সঙ্গে তামিল মুসলমানের সংস্কৃতির মিল নেই, মিল আছে বাঙালি হিন্দুর সংস্কৃতির। ভারতীয় উপমহাদেশে আমরা যে উদার ইসলামের দেখা পাই, সেই উদার ইসলাম মধ্যপ্রাচ্যে আমরা পাই না।

Bangladesh Pratidinকাশ্মীরের চৌদ্দ হাজার ফুট ওপরের অমরনাথ মন্দিরের গুহাটি আবিষ্কার করেছিল বুট্টা মালিক নামের একজন মুসলমান মেষপালক। সেই থেকে মন্দিরটিতে হিন্দু পুণ্যার্থীরা ভিড় করছে। দীর্ঘকাল এই মন্দিরটির দেখাশোনা করেছে এক মুসলিম পরিবার। দক্ষিণে সবরিমালা মন্দিরে যেতেও মুসলমানের মাজার হয়ে যেতে হয়। দর্শনার্থীরা মাজার জিয়ারত করে মন্দির দর্শনে যায়। হিন্দু মুসলমানের পারস্পরিক এই সৌহার্দ্যকে নষ্ট করা হয়েছে বারবারই, সবই রাজনৈতিক স্বার্থে। রাজনৈতিক স্বার্থে দুই সম্প্রদায়ে বিভাজন সৃষ্টি করা হলো। এত বড় ভারতবর্ষ ভেঙে টুকরো হলো। ধর্মের কারণে যদি দেশ ভাগ হয়, তা হলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে পাকিস্তান আর বাংলাদেশে। হই হই করে মৌলবাদ, ধর্মান্ধতা আর জিহাদ বাড়ছে। সুফি ইসলামকে ঠেলে সরিয়ে এসে গেছে দেওবন্দি আর ওয়াহাবি ইসলাম।

আমি আমার শৈশব কৈশোরে দেখেছি আমাদের বৃহৎ যৌথ পরিবারে দু-একজন বৃদ্ধা এবং বৃদ্ধ ছাড়া কেউ নামাজ পড়ে না। আর এখন তিন বা চার দশক পর পরিবারের প্রত্যেকের লেবাস বদলে গেছে, সকলে রোজা রাখে, সকলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। এ শুধু আমার পরিবারেই নয়। প্রায় প্রত্যেক পরিবারের চিত্রই এই। ধর্ম পালন আগের চেয়ে কতগুণ বেড়েছে, তা নিশ্চয়ই গবেষকরা সঠিক বলতে পারবেন। সাধারণ ধার্মিক বা বিশ্বাসীর সংখ্যা এখন কতগুণ বেড়ে ধর্মান্ধ উগ্র মুসলিমে রূপ নিয়েছে, সেও গবেষণার বিষয়। যত ধর্ম বেড়েছে, তত নৈতিকতা কমেছে। কোনও দিন আগে শুনিনি মসজিদের ইমাম শিশু ধর্ষণ করে, কোনও দিন আগে শুনিনি আল্লাহর নাম নিয়ে নাস্তিকদের কুপিয়ে মারা হয়েছে কোথাও। আজ শরিয়াপন্থি তালিবানের ক্ষমতা দখলে মানুষ আনন্দে উল্লাস করে! কোথায় আজ উদারপন্থি মুসলমান?

বর্বর তালিবান স্থলদস্যুদের মতো বন্দুকের জোরে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করেছে। বারবার মিথ্যে বলছে যে তারা এখন আগের তালিবান নেই, তারা বদলেছে, তারা মেয়েদের অধিকার এবার থেকে মেনে নেবে। কিছুই মেনে নেয়নি, তারা আসলে এসব বলে পৃথিবীর মানুষকে বোকা বানাচ্ছে। পরিবর্তনের কথা বললে ইহুদি নাসারাদের ধনী দেশগুলো ভিক্ষে দেবে, তাই বলছে। আসলে তারা আগের তালিবানই রয়ে গেছে, আগের সঙ্গেই বা তুলনা দিচ্ছি কেন, তারা আগের চেয়ে এখন বেশি শক্তিশালী, বেশি ভয়ংকর, বেশি বর্বর। তারা জানিয়ে দিয়েছে, চুরি করলে মানুষের হাত কাটবে, প্রেম ভালোবাসা ‘অবৈধ’ হলে মেয়েদের পাথর ছুড়ে মেরে ফেলবে, তারা মেয়েদের বোরখা বা নিকাব ছাড়া রাস্তাঘাটে দেখতে চায় না, মেয়েদের একা ঘরের বাইরে বেরোনোর স্বাধীনতা নেই, বেরোলে পুরুষ অভিভাবক নিয়ে বেরোতে হবে, ছেলেদের সঙ্গে এক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার অধিকার মেয়েদের নেই। কর্মজীবী মেয়েরা ঘরে বসে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। তাদের চাকরি বাকরি ব্যবসা বাণিজ্য করার অধিকার নেই। বর্বর লোকগুলো শিল্প, সঙ্গীত এবং সব রকম সুকুমারবৃত্তির বিরুদ্ধে। তারা শুধু সঙ্গীত নয়, সভা সমিতি মিছিল সেøাগানও নিষিদ্ধ করেছে। বাকস্বাধীনতাবিরোধী মানবতাবিরোধী নারীবিরোধী এ এক অসহিষ্ণু ইসলাম। এই অসহিষ্ণু ইসলামের চর্চা বহুদিন থেকে আফগানিস্তানে আশ্রয় নেওয়া জঙ্গি জিহাদি সংগঠনগুলো করছে এবং ফুলে ফেঁপে বড় হয়ে বিশ্বময় সন্ত্রাস করে বেড়াচ্ছে।

হিন্দু কি কম উদার ছিল? বহিরাগত অহিন্দুকে আদিকাল থেকে আশ্রয় দিচ্ছে, এমনকি দেশ শাসন করতেও দিয়েছে। সেই হিন্দুও দিন দিন অনেকটাই অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে। জিহাদিদের হিন্দুরা ঘৃণা করে বটে, কিন্তু অনেকে আবার প্রভাবিতও হয়। নিরীহ মুসলমানকে, ধর্মনিরপেক্ষ হিন্দু বুদ্ধিজীবীকে হেনস্তা করতে, এমনকী হত্যা করতেও উগ্রপন্থি চরম ডানপন্থি মাঝে মাঝে দ্বিধা করে না। কোথায় গেল ভাববাদী হিন্দু দর্শন?

কাশ্মীরের মুসলমানরা লক্ষ লক্ষ কাশ্মীরি হিন্দু পন্ডিতকে মেরে উৎখাত করেছে নিজ বাসভূমি থেকে। কোথায় গেল সেই উদারনৈতিক ইসলাম? সুফি ইসলামকে কবর দিয়ে উগ্রপন্থি ইসলামের জয়জয়কার এখন। এই জয়ের পতাকা যারা ওড়াচ্ছে, তারা জানে না, তারা যে আলোকে পুড়িয়ে দিয়ে ঘুরঘুট্টি অন্ধকারকে সাদরে বরণ করছে।

২. কেউ কেউ বলছে প্রতি বছর দুর্গাপুজোর আগে আগে বাংলাদেশে মন্দির বা মূর্তি ভাঙা হয়, এ বছরও হচ্ছে। আবার এও শুনেছি বাংলাদেশের সরকার প্রচুর টাকা ব্যয় করবেন হিন্দু মন্দিরগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য। তাহলে কি প্রয়োজনে মন্দির ভাঙা হবে, আবার প্রয়োজনে গড়াও হবে? ভাঙা গড়ার রাজনীতি বেশ জমজমাট! পাকিস্তানি সৈন্য দ্বারা ধংস হওয়া রমনা কালীমন্দির গড়ার জন্য নাকি ভারত টাকা দেবে। ভারতকে কেন টাকা দিতে হবে? বাংলাদেশেরই তো উচিত নিজের টাকায় ঐতিহ্যবাহী রমনা কালীমন্দিরটি গড়া!

আমি ঘোর নাস্তিক হয়েও কেন বলছি ধর্মীয় উপাসনালয় গড়ে দিতে! কারণ আমি মানুষের ধর্ম পালন করার স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। ঠিক যেরকম ধর্ম পালন না করার স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি।

মানুষ কুসংস্কারমুক্ত হলে, মানুষ সত্যিকার বিজ্ঞানমনস্ক হলে, মন্দির মসজিদ গির্জা সিনেগগ হবে এক একটা জাদুঘর। সেদিন ভবিষ্যতের মানুষ ইতিহাসে পড়বে ধর্মের কারণে এককালে কী কুৎসিত হানাহানিই না করত তাদের পূর্বপুরুষেরা।

৩. নাস্তিক হলেই যে মানুষ মানুষ হিসেবে ভালো হয়, তা নয়। কেউ আস্তিক হলেই যে মানুষ হিসেবে খারাপ, তাও নয়। আমি প্রচুর নাস্তিককে দেখেছি যারা ভীষণরকম নারীবিদ্বেষী। অনেক আস্তিককে দেখেছি যারা কারও অনিষ্ট করে না, নিজের ধর্মকর্ম নিয়ে নিজে থাকে, কারও ওপর নিজের ধর্ম চাপানোর চেষ্টা করে না। তবে এখন যে আস্তিকদের দেখা পাচ্ছি, ওরা বেশির ভাগই অসভ্য আর অশিক্ষিত। ওদের পছন্দের ধর্মটি যারা মানছে না, তাদের ধর্ষণ করছে, তাদের কোপাচ্ছে, তাদের জবাই করছে। হাতের নাগালে না পেলে বিভিন্ন কুৎসিত পদ্ধতিতে তাদের হেনস্তা করছে। এই ধার্মিকদের আল্লাহর বিচারে বিশ্বাস নেই। তাই ওরা নিজেরাই বিচার করছে সবার। ওরা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কে দোষী, কে দোষী নয় এবং এও জানিয়ে দিচ্ছে দোষীদের কী শাস্তি হওয়া উচিত। দুনিয়ার সবাইকে আস্তিক বানাবার, পরহেজগার বানাবার জন্য এই ধার্মিকরা এত মরিয়া কেন, আমি বুঝি না। ওরা কেন সবাইকে নিয়ে বেহেশতে যেতে চায়। দোজখেও তো মানুষকে যেতে হবে। এই যে সাতটা দোজখ আল্লাহ বানিয়ে রেখেছেন, ওগুলো কি খালি ফেলে রাখার জন্য? ওখানে পুড়তে যদি আমার আপত্তি না থাকে, তবে ধার্মিকদের আপত্তি কেন? ওরা কেন আল্লাহ রসুলকে নিজের সম্পত্তি মনে করে! ধর্ম নিয়ে আমার যা ধারণা, তা আমি বলবো। দোজখে যাবো জেনেও বলবো। আমি তো সব আস্তিককে নিয়ে দলবেঁধে দোজখে যেতে চাইছি না। আমি জোরজবরদস্তি কোনও আস্তিককে নাস্তিক বানাতেও চাইছি না।

মানুষের অনিষ্ট করে না, অন্যের বিশ্বাসে নাক গলায় না-এরকম ধার্মিকের সংখ্যা সম্ভবত খুব কম বাংলাদেশে। এই সংখ্যাটা যতদিন না বাড়ে, ততদিন বাংলাদেশ নিয়ে আশা ভরসার কিছু নেই। নাস্তিক বা আস্তিক হওয়ার চেয়ে সবচেয়ে যেটা বেশি প্রয়োজন, তা হলো ভালো মানুষ হওয়া। ভালো মানুষেরা সবার ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। মানুষ গরু খেলো কী শুয়োর খেলো, মদ খেলো কী ফান্টা খেলো, তা নিয়ে মাথা ঘামায় না, এগুলোকে সম্পূর্ণই যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে মানে। এই ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে ঝামেলা করা ধার্মিকদের বন্ধ করতে হবে। মানুষ ঈশ্বরে বিশ্বাস করুক, আপত্তি নেই। কিন্তু যুক্তিবুদ্ধিহীন ধর্মান্ধ যেন না হয়। ধর্মান্ধতা এবং মানবাধিকার-তেল আর জলের মতো, একেবারেই মেশে না। ও দুটোকে না মেশাতে চেয়ে বরং ধর্মান্ধরা যদি চেষ্টা চরিত্তির করে মানবাধিকার ব্যাপারটিকে মেনে নেয়, তবে সমস্যা অনেক কমে যাবে। যত ধার্মিকই হোক, যত ধর্মান্ধই হোক, মানুষ তো। মানুষ কী না পারে! চেষ্টা করলে মন্দ মানুষেরা ভালো মানুষ হতে পারবে না, এ আমি বিশ্বাস করি না।

 

Tuesday, September 14, 2021

 

‘বোরকা না শর্টস, আফগান না বাংলা, চয়েস না ফোর্সড’এখানেই জ্ঞানচর্চা ফুলস্টপ?


সাদিয়া নাসরিন

বোরকা না শর্টস, আফগান না বাংলা, চয়েস না ফোর্সড এসব আলাপে আমাদের ব্যস্ত রেখে মিডিয়া কিন্তু এক দারুণ দাবার চালে আপোষে দু’দুটি কিস্তিমাত করে ফেলেছে তুমুল হৈচৈ করে ঝর্ণা আক্তার চিনির মুখে দুটি পুরনো অথচ ভয়ঙ্কর শক্তিশালী পুরুষতান্ত্রিক স্টেটমেন্টকে নতুন করে বেশ পোক্ত করে দিয়েছেন।

ঝর্ণা আক্তার বলেছেন, ‘আমার অ্যাথলেট জীবন আমি পিছে ফেলে এসেছি, সামনের নিজের জন্য কিছু চাই না। কেবল চাই আমার ছেলেটাকে বিকেএসপি পর্যন্ত পৌঁছে যেন দিতে পারি।’ বাহ! বটেইতো। সংসারের জন্য, সন্তানের জন্য অ্যাথলেট তার খেলা ছেড়ে দেবেন, শিল্পী গান ছেড়ে দেবেন, চিত্রকর ছবি আঁকা ছাড়বেন, পেশাজীবী পেশা ছাড়বেন, শিক্ষার্থী পড়ালেখা ছাড়বেন, ডাক্তার হাসপাতাল ছাড়বেন, নাট্যকর্মী মঞ্চ ছাড়বেন তবেই না নারী ‘ভালো মা’ ‘ভালো মেয়ে মানুষ’ হয়ে ওঠবেন। নারীর নিজের কোনো জগৎ থাকবে না, যোগ্যতা থাকবে না, পরিচয় থাকবে না, সক্ষমতা থাকবে না, দক্ষতা থাকবে না, নারী কেবল সন্তানের ভবিষ্যৎ নির্মাণ করবেন, স্বামীর আরামের ভাত আর বিছানার ব্যবস্থা করবেন, সবাইকে সুখে শান্তিতে রাখবেন, তবেই না, নারীর স্বার্থকতা। ‘মাতৃত্বেই নারীর স্বার্থকতা’, ‘সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে তাইনা।

তাই খেলোয়াড় পরিবারের ছোটভাই রোকনুজ্জামান কাঞ্চন যখন জাতীয় ফুটবল দলের স্ট্রাইকার হয়ে নিজের ক্যারিয়ার সফল করছেন, তখন বড়বোন ঝর্ণা আক্তার বিয়ে করে, সংসার পেতে, সংসারের জন্য সবকিছু ছেড়ে দিয়ে মিডিয়ার বদৌলতে হাততালি কুড়িয়ে বলছেন, ‘আমার জীবনে কোনও হতাশা নেই, নিজের জন্য আর কিছুই চাইনা ব্যাস! আর কী লাগে। আমাদের মতো ঘর ভাঙানো, হাড় জ্বালানো, রোজগেরে মেয়েদের প্রতাপে অতীষ্ট নারীপুরুষের সামনে স্বামীর তেল সাবানে পোষ্য নারীদের জন্য ‘ত্যাগের মহিমায় মহিমান্বিত’, ‘নিজের জন্য কিছুই না চাওয়া’ একজন বাস্তব শাবানার ‘রোল মডেল’ উপহার দিতে পেরে আমাদের মিডিয়াও খুশি, আমরাও খুশি। ঘর শান্তি তো দুনিয়া শান্তি। এরপরের স্টেটমেন্টটি তো আরও টুইস্টিং, ‘পর্দা বোরকা কোনোকিছুর জন্য বাধা হতে পারে না’। আরেব্বাহ। এই মডারেট ইসলাম বোঝানোর জন্য এই দেশে কতো বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক ঘরানা ইনভেস্ট করে চলছে ধর্মভিত্তিক অর্থনীতি, সংস্কৃতির পেছনে, অথচ কতো স্মুদলি এই কাজটি করে ফেলল আমাদের মিডিয়া, আমরা টেরও পেলাম না। দেশ ছাপিয়ে বিদেশের আকাশ পাতাল মাটিতে ছড়িয়ে পড়লো রোল মডেল। ‘আদর্শ’ ‘মাতৃত্বের মডেল, ‘নিজের জন্য কিছুই চাইনা মডেল’, ‘বোরকা পরেও সব করা যায় মডেল’।

একের ভেতরে তিন। রাজনীতি একেই বলে, বুঝলাম আমরা। তো, এই হলাম আমরা। বরাবরই চোখের সামনের মাছি তাড়াতে তাড়াতে আমাদের ব্যস্ত রেখে পেছনে বিশাল বিশাল হাতি নির্বিঘ্নে নিয়ে যায়, আমরা খেয়াল করার সময়ই পাই না। উপরের শ্যওলা ছাড়াতে ছাড়াতে কেনো নিচের আগাছায় জড়িয়ে তলিয়ে যাচ্ছি সে আলোচনাতেই আমরা কখনও যাই না। আমরা আলোচনায় যাই না, কেন নারীর ক্ষমতায়নে ‘বিপ্লব’ ঘটে যাওয়া দেশে এখনো একজন অ্যাথলেট নিজের খেলোয়াড় জীবন পেছনে ফেলে দিয়ে সংসার করাকেই ‘সফলতা’ ভাবছেন? কেন নারীবাদ চর্চা করা নারীরাও নিজের সক্ষমতা আর স্বাধীনতার জায়গাটাতে আপস করে সঙ্গির পকেটকেই সার্বভৌম করে রেখে তাকে ‘রাইট টু চয়েস’ বলে স্টাবলিশড করছেন?‘বোরকা না বিকিনি’, ‘আফগান না বাংলা’ এই তর্কের চাইতে আমাদের জন্য জরুরি আলোচনা ছিলো, কেনো শিক্ষিত, স্বচ্ছল মেয়েরা, সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের মেয়েরা, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষগুলো পর্যন্ত হিজাব- বোরকাকেই পোষাক হিসেবে ‘পছন্দ’ করছেন? এসব পছন্দ বা মনস্তাত্তিক বিবর্তনের পেছনে এক্স ফ্যাক্টরগুলো কী?

পঁচাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশে যে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন হয়েছে, এই দেশকে সেক্যুলারিজম থেকে বিচ্ছিন্ন করে রিলিজিয়াস কোলাবোরেট বানানোর জন্য যে পরিমাণ বিনিয়োগ হয়েছে তা গত তিন দশকে আমরা কী দিয়ে, কতোটুকু মোকাবেলা করেছি? আদৌ করেছি কিনা? করলে আধুনিক বোরকার মতো এক্সপেন্সিভ এবং আবহাওয়ার জন্য প্রতিকূল একটি পোষাক এ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে কোনো যাদুর কাঠিতে? শুধুই ধর্মের ভয় বা সমাজের চাপ? নাকি এই চাহিদা নির্মাণে আন্তর্জাতিক বাজার রাজনীতির ভূমিকাটা আরও ভয়ঙ্কর? কেনো কলকাতা-দিল্লী-মুম্বাইয়ের মতো হিন্দুপ্রধান শহরগুলোতেও বোরকা-হিজাব-খিমারের বড় বড় আউটলেটে উপচে পড়া ভিড় থাকে? এই মিলিয়ন বিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলারের বিশাল বাজার কার হাতে, কারা নিয়ন্ত্রণ করে? যে অস্ত্রবাজরা তাদের স্বার্থে ধর্ম বিস্তার করে, পর্দা বিস্তারের এই বিশাল বাজারও তাদের আয়ের উৎস কিনা? নাহ, এসব ঝুঁকিপূর্ণ আলোচনা আমরা করি না। আমরা শুধু হালকার উপরে হিজাব-নেকাব-বোরকা-খিমার-বিকিনি-সালোয়ার-কামিজ-ওড়না-শাড়ি-স্লিভলেস-অফসোল্ডার-জিন্স-টপস এসব ঝাপসা তর্ক করে আমাদের কাজ শেষ করি। ‘নারী কেন পর্দা করবে এবং নারী কেনো পর্দা করবে না?’ এই দুই লাইনেই আমাদের সমস্ত জ্ঞানচর্চা শেষ হয়ে ফুলস্টপ পড়ে যায়। আমাদের মগজ এটুকুই নেয়। এটুকু দিয়েই নারীর অধিকার, নারীর স্বাধীনতা সব প্রতিষ্ঠা করে ফেলছি আর কি আমরা।
লেখক : প্রধান নির্বাহী সংযোগ বাংলাদেশ। উইম্যান ভয়েস বিডি ডটকম

Friday, September 10, 2021

 

আজকের কথা

১১/৯/২০২১


 ১/

আপ রুচি খানা, পর্রুচি পহেন না’। 


২/

মরীচিকা কখনও মরুদ্যান নয়। 


৩/

‘শান্তির পেছনে ঘুরে মরো, তাই অশান্তি এত/ অস্থির প্রেমিক হও যদি, শান্তি ঘুরবে তোমার পিছে।’ রুমি


৪/

মানুষের আচরণও প্রয়োজন নির্ভর। কারও প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে মানুষ আর তাকে গুরুত্ব দেয় না বা ভুলে যায়।

 


১।তেলে পেঁয়াজ রসুন নেড়ে লবন, অল্প হলুদ-জিরাগুড়া দিয়ে ডাটাগুলো দিয়ে দিয়েছি.

২।একটু নরম হলে ফুলগুলো দিয়েছি।ভাজা ভাজা হয়ে নামানোর আগে ডিম ভেঙ্গে দিয়েছি 

আর 

৩।শেষে কাঁচামরিচ দিয়ে নামিয়েছি।

 

শিশু ও শ্বাশুড়ী সমাচার

আকতার বানু আলপনা


শিশুরা প্রথম শব্দ শেখে ‘মা’। কারণ মাকে তার সবচেয়ে বেশি দরকার। আর মায়ের পরেই তার দরকার হয় পানি। তাই ‘মা’ থেকে একটু বাড়িয়ে সে পানিকে ‘মাম’ বলে। এজন্যই প্রায় সব বাচ্চারা পানিকে ‘মাম’ বলে। [১] বাচ্চারা এমন ব্যক্তি বা বস্তুকে বেশি গুরুত্ব দেয় যারা তাদের প্রয়োজন মেটায় বা যারা ভালোবাসে। শিশুরা বাইরে ঘুরতে চায়। কিন্তু একা যেতে পারে না। তাই যারা শিশুকে বেশি বাইরে নিয়ে যায়, শিশুরা তাদের কোলে বেশি যায় বা যেতে চায়। যে চকলেট বা খেলনা দেয় বা আদর করে, বাচ্চারা তাকে বেশি পছন্দ করে। আমার বড় মেয়ের বয়স তখন দুই বছর। সে কলম ধরতে পারে। হাবিজাবি দাগ টানতে পারে।

একদিন খাটে বসে সে ছবি আঁকছে। আমি দেখলাম, সে একটা গোল গোল বৃত্ত আঁকছে। দাগের ওপর দাগ, দাগের উপর দাগ। আঁকা শেষ করে সে আমাকে বললো, ‘আম্মু দ্যাখ, আমি কি সুন্দর একটা পটিপট আঁকলাম’ আমি দেখে স্তম্ভিত হয়ে বললাম, ‘ও আচ্ছা, তাই নাকি? আমি তো ভাবলাম ওটা একটা বল’। মেয়ের কথা শুনে আমার শ^াশুড়ী হা হা করে হাসতে লাগলেন। আমি ভাবতে লাগলাম, এতোকিছু থাকতে আমার মেয়ে পটিপট আঁকলো কেন? কারণ বাচ্চাদের কাজকর্ম নির্ভর করে তার প্রয়োজনের গুরুত্বের ওপর। বাচ্চাদের কাছে পটিপট খুবই জরুরি একটা জিনিস। ওটা ছাড়া তাদের চলে না। তাই ছবি আঁকতে গিয়ে সে তার প্রয়োজনীয় জিনসটাই এঁকেছে। আমার মেয়েরও পটিপট ছাড়া চলে না। একবার আমি শ্বশুরবাড়ি গেছি। সে কিছুতেই পট ছাড়া টয়লেটে বসবে না। কী বিপদ! তাই দোকান থেকে তড়িঘড়ি করে পট কিনে আনতে বাধ্য হলাম। [২] বাচ্চাদের আরেকটা বৈশিষ্ট্য হলো, যে জিনিসটা তাদের পছন্দ, কোনো কারণে সেটা না পেলে তারা খুব বিরক্ত হয়, রাগ করে। নতুন পট কিনে এনেও আরেক বিপদ হলো। নতুন পট মেয়ের পছন্দ হল না। কারণ নতুন পট তার আগের পটের মতো নয় ‘দোকানে আগের ডিজাইন ছিলো না’। তাই সে নতুনটাতেও বসবে না। মহা বিপদ। শেষে অনেক হাতে পায়ে ধরে একরকম জোর করে তাকে নতুন পটে বসানো হলো

[৩] শিশুদের আরেকটা বৈশিষ্ট্য হলো, তারা তাদের পরিচিত পরিবেশে কোনো পরিবর্তন পছন্দ করে না, ভয় পায় বা বিরক্ত হয়। সেজন্যই অপরিচিত কারও কোলে তারা যেতে চায় না। আমার ছোট মেয়ের জন্মের তিনদিন পর থেকেই সে সারারাত কাঁদে। কেঁদে কেঁদে ক্লান্ত হয়ে ভোরবেলা ঘুমিয়ে যায়। ডাক্তার দেখাই, ওষুধ খাওয়াই। কোনো লাভ হয় না। টানা তিনমাস আমি রাতে ঘুমাতে পারিনি। সারারাত বাচ্চা কোলে নিয়ে হাঁটি। মশারী টানালে তাই দেখে মেয়ে ভয় পায় ‘কারণ মশারী টানালে ঘরের পরিবেশ পাল্টে যায়’। তখন আরও বেশি কাঁদে। তাই মশারী খুলে দিয়ে ঘরের ভেতরে, কখনও বারান্দায় মেয়েকে কোলে নিয়ে হাঁটি। যখন আর পারি না, তখন আম্মার কোলে দেই। সমানে মশা কামড়ায়। মহাবিপদ। আমার বর বিদেশ থেকে এলো মেয়েকে দেখতে। সেবার দেড় মাস ছিলো। পুরা দেড় মাসই সেও আমার সঙ্গে সারারাত মেয়েকে নিয়ে জেগে থেকেছে। ভোরবেলা মেয়ে ঘুমানোর পর সে ঘুমিয়েছে। তখন শ্বশুরবাড়ি গেলে গোটা বাড়ির মানুষ বাচ্চার কান্নায় ঘুমাতে পারতো না। তিনমাস বয়সে মেয়েকে নিয়ে আমি নানার বাড়ি গেলাম।

যে ঘরে শুতে গেলাম, সে ঘরের দেয়ালের ক্যালেন্ডারে একটা মেয়ের ছবি ছিলো। সে ছবি দেখে মেয়ে ভয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো। আমি তাড়াতাড়ি ক্যালেন্ডারটা বারান্দার এককোণে সরিয়ে রাখলাম। তখন মেয়ের কান্না থামলো। মেয়ের ভয় পাবার কারণ হলো, তার ঘর বদলে গেছে। আমার ঘরে আমাদের বিয়ের যে ছবি ছিলো, ক্যালেন্ডারের ছবিটা তারচেয়ে আলাদা। সকালবেলা বারান্দায় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চা গুটানো ক্যালেন্ডারটা দেখেও চিনতে পেরে ভয়ার্ত চোখে সেটার দিকে তাকিয়ে কেঁদে উঠলো। আমি ক্যালেন্ডারটা ফেলে দিলাম।[৪] শিশুরা মায়ের গায়ের গন্ধ পায়। ওরা মায়ের অনুপস্থিতি বুঝতে পারে। তখন ভয় পেয়ে কাঁদে। কারণ শিশুরা কথা বলার আগ পর্যন্ত তার মনের ভাব প্রকাশের জন্য হাসি ও কান্না – এ দুটি আবেগকে ব্যবহার করে। আমার বড় মেয়ে প্রথম কিছুদিন আমার কোলে ঘুমাতো। বিছানায় শোওয়ানোর সঙ্গে সঙ্গে জেগে উঠে কাঁদতো। একটু নড়লেই ঘুম ভেঙ্গে যেত। কখনও কখনও বিছানায় ঘুমিয়ে রেখে আমি পাশের ঘরে গেলেই জেগে উঠে কাঁদতো। আমি পাশে থাকলে টানা দু তিন ঘণ্টা ঘুমাতো। শিশুদের মতোই মানুষের আচরণও প্রয়োজন নির্ভর। কারও প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে মানুষ আর তাকে গুরুত্ব দেয় না বা ভুলে যায়। এ বিষয়ে মনোবিজ্ঞানী জাইগারনিকের (তবরমধৎহরশ, ১৯২৭) একটি গবেষণা আছে রেস্টুরেন্টের ওয়েটারদের উপরে। কিছু ওয়েটারকে খাবারের বিল পরিশোধ করেছেন এবং এখনও খাবারের বিল পরিশোধ করেননি, এমন কিছু কাস্টমারদের খাবারের মেনু ও দাম মনে করতে বলা হয়। দেখা যায়, অধিকাংশ ওয়েটার যারা বিল পরিশোধ করেননি তাদের মেনু ও দাম সঠিকভাবে বলতে পারে, কিন্তু যারা খাবারের বিল পরিশোধ করেছেন, তাদেরটা ঠিকমত বলতে পারে না। তার মানে, কারও কাছে কোন পাওনা, প্রত্যাশা বা লাভের সম্ভাবনা থাকলে আমরা সে মানুষদের মনে রাখি, পছন্দ করি, ত্যাগ করি না। কিন্তু কোনোকিছু পাওয়ার বা লাভের সম্ভাবনা না থাকলে আমরা সেসব মানুষকে ত্যাগ করি। তার প্রমাণও আছে ভুরি

ভুরি। দ্বিতীয় বিয়ে করার পর বা পরকীয়ায় জড়ানোর পর প্রথম বউয়ের প্রতি স্বামীর আর কোনো আগ্রহ থাকে না ‘স্ত্রী পরকীয়ায় জড়ালেও তাই’। শারীরিক সম্পর্ক করার পর অধিকাংশ প্রেমিকরা প্রেমিকাকে ত্যাগ করে। বাবা-মার সম্পত্তি পেয়ে গেলে অনেক কু-সন্তান বৃদ্ধ বাবামার দেকভাল করে না বা বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয়। বলা হয়, পৃথিবীতে একমাত্র মা কোনো স্বার্থ বা কোনোকিছু পাওয়ার আশা ছাড়াই আজীবন সন্তানকে ভালোবাসে। মাঝে মাঝে কথাটা আমার বিশ্বাস হয় না। কদিন আগে একটি মেয়ে আমাকে জানালো, সে শাশুড়ীর দূর্ব্যবহারে এতোটাই মানসিক কষ্টে আছে যে, মাঝে মাঝে তার স্বামীকে ছাড়তে, এমনকি আত্মহত্যা করতে ইচ্ছা করে। শাশুড়ি বৌয়ের বিরুদ্ধে ছেলেকে নানা কথা লাগায়। ফলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহ, অশান্তি লেগেই থাকে। অথচ শাশুড়ি যখন মেয়ের বাড়ি, গ্রামের বাড়ি বা কোথাও বেড়াতে যায়, তখন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনো কলহ হয় না। তারা মহাসুখে থাকে। আমার কথা হলো, মা ছেলেকে সত্যিই ভালোবাসলে ছেলে অসুখী হতে পারে, এমন কোনো কাজ করতেই পারতো না। তাই সবার উচিত, নিজে ভালো থাকা এবং আশেপাশেরদেরকেও ভালো থাকতে দেওয়া। 

Thursday, September 9, 2021

 

স্বকৃত নোমান : গ্রাম মানেই কি ভালো? খারাপ দিক কি নেই গ্রামে


গ্রাম্যতা’ শব্দে অনেকের আপত্তি। আপত্তির কারণ, ‘গ্রাম্যতা’ শব্দ দ্বারা গ্রামের মানুষদের খাটো করা হয়, অপমান করা হয়। হ্যাঁ, করা হয় বটে। গ্রামের মানুষ খারাপ কেন হবে? গ্রামের মানুষ শহরের শিক্ষিতদের মতো দুর্নীতি করে না, ঘুষ খায় না। তারা শস্য উৎপাদন করে। সেই শস্য খেয়ে আমরা, এই শহুরেরা, বেঁচে থাকি। এটা গ্রামের মানুষদের সবচেয়ে বড় অবদান। এর তুলনা নেই। এজন্য তাদের ষষ্ঠাঙ্গ প্রণাম। কিন্তু গ্রাম মানেই কি ভালো? খারাপ দিক কি নেই গ্রামে? গ্রামের সবকিছু ভালো, গ্রাম মানেই শান্তি আর সুখের আবাসÑযাঁরা এ ধারণা পোষণ করেন, তাঁরা হয় কখনো বাংলার গ্রাম দেখেননি কিংবা দেখেও বাস্তবতাকে অস্বীকার করে মিছে তৃপ্তি লাভের চেষ্টা করেন। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের গ্রামগুলো কেমন জানি না। বাংলাদেশ-ভারতের গ্রামগুলো কেমন জানি। গ্রামের অধিকাংশ (খেয়াল রাখা দরকার, আমি সচেতনভাবে ‘অধিকাংশ’ শব্দটি ব্যবহার করেছি) মানুষের বৈশিষ্ট্য কী? একজনের পেছনে আরেকজন লেগে থাকা। গ্রামের ভাষায় যাকে বলে, ‘একজনের পাছায় অন্যজন আঙুল দিয়ে বসে থাকা।’ একজনের ভালো আরেকজন সহ্য করতে না পারা। পরশ্রীকাতরতা চর্চার উর্বর ক্ষেত্র বাংলাদেশের গ্রামগুলো। ভিলেজ পলিটিক্স কাকে বলে, যারা গ্রামে থাকেননি, তারা এই পলিটিক্স বুঝতে পারবে না। এ বড় ভয়ংকর পলিটিক্স।

প্রাপ্তবয়ষ্ক দুজন নর-নারী ঢাকা শহরের কোনো পার্কে বসে প্রেম করতে পারবে, চুমুও খেতে পারবে, কেউ বাধা দেবে না। শহরে নারীরা বোরকা পরলো, সেলোয়ার-কামিজ পরলো, না জিন্স-টপস পরল, না গাড়ি ড্রাইভ করলোÑতাতে অন্যের কিছু যায়-আসে না। আপনি সাকুরা বা ডিপিএল বার-এ গিয়ে মদ খেতে পারবেন, কেউ বাধা দিতে আসবে না। আপনার বাসায় আপনি যেমন ইচ্ছা থাকতে পারবেন, পাশের বাসার কেউ আপনার ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ করবে না। আপনি ধর্মকর্ম করলেন কী করলেন না, তা নিয়ে আপনার প্রতিবেশী মাথা ঘামাবে না। আপনি আপনার মতো জীবন-যাপন করছেন, প্রতিবেশী প্রতিবেশীর মতো। অর্থাৎ ব্যক্তি হিসেবে আপনি স্বতন্ত্র। আপনি তথাকথিত সমাজের কাছে দায়বদ্ধ নন।

অপরপক্ষে গ্রাম? তুমি ঐ মেয়েটিকে নিয়ে পুকুরপাড়ে বসলে কেন? তুমি মদ খাও কেন? তুমি নামাজ পড়ো না কেন? শুক্রবারে মসজিদে যাও না কেন? পূজায় মন্দিরে যাও না কেন? তোমার বউ বোরকা পরে না কেন? তোমার মেয়ের বুকে ওড়না নেই কেন? তুমি কবিতা লেখ কেন? গান গাও কেন? লম্বা চুলের একতারা হাতে লোকটা বাউল? দাও তার চুল কেটে। শালা বেশরা ন্যাড়ার ফকির! তুমি সমাজের কথা মনো না কেন? মানবে না? ঠিক আছে, তোমাকে সমাজ থেকে বহিষ্কার করা হলো, একঘরে করা হলো।
গ্রামে কি সহজ-সরল মানুষ নেই? আছে তো বটেই। অসংখ্য আছে। কিন্তু সে শান্তি পায় না গ্রামে। ভিলেজ পলিটিক্স তাকে শান্তিতে থাকতে দেয় না। সে সেই অশান্তিকে নিয়তি বলে মেনে নেয়। মেনে নিয়ে বেঁচে থাকে। আপস করতে করতে বেঁচে থাকে।
গ্রামকে নিয়ন্ত্রণ করে ধর্ম ও রাজনীতি। আপনি শহরে রাজনীতি না করেও থাকতে পারবেন। কেউ আপনাকে বিরক্ত করবে না। কিন্তু গ্রামে? বাংলাদেশের গ্রামের পরিস্থিতি এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে, রাজনীতিহীন থাকা মানে আপনি একজন অসহায়-বিপন্ন মানুষ। আপনার দাম নেই। কেউ আপনার কথা শুনবে না, আপনাকে শ্রদ্ধা করবে না। আর ধর্মহীন থাকবেন! প্রশ্নই আসে না। একথা শুনলেই গ্রামীণ সমাজ আপনার কল্লাটা নিয়ে নেবে। বাংলার গ্রামগুলোর এই পরিবর্তিত দশা দেখেই শাহ আবদুল করিমের আক্ষেপ : ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম।’ সেই সুন্দরভাবে দিন কাটানোর গ্রাম এখন আর বাংলায় নেই। থাকলেও তার সংখ্যা কম।

ভোলার চর কুকরী মুকরী একটি চকমৎকার গ্রাম। প্রাকৃতিক দৃশ্য মনোমুগ্ধকর। আপনি ঢাকা থেকে সেখানে গিয়ে দুদিন খুব আরামে থাকতে পারবেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে কবিতাও লিখে ফেলতে পারবেন। কিন্তু স্থায়ীভাবে থাকতে যাবেন? এক মাসের বেশি টিকতে পারবেন না। কারণ আপনি টিভি দেখতে চাইবেন। বাড়িতে টিভি বসাবেন। সঙ্গে সঙ্গে গ্রামের লোকজন এসে আপনাকে ধরবে। তোমার বাড়িতে টিভি কেন? টিভি দেখা তো হারাম। তুমি হারাম কাজ করতে পারবে না। বাড়িতে টিভি রাখা যাবে না। বিশ্বাস হয় না? না হলে চর কুকরী মুকরী থেকে একবার ঘুরে আসতে পারেন। দেখে আসতে পারেন ধর্মনিয়ন্ত্রিত ওই চরের সমাজ ব্যবস্থা।
বাংলাদেশের অধিকাংশ গ্রাম চর কুকরী মুকরীর মতোই। বাড়িতে টিভি রাখতে বাধা না দিলেও আপনার ব্যক্তিগত জীবনের কোনো না কোনো কিছুতেই বাধা দেবেই। চর কুকরী মুকরীর মতো এ দেশের অধিকাংশ গ্রামে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য বলে কিছু নেই। ব্যক্তি তার নিজের ইচ্ছায় চলতে পারবে না। সমাজ তাকে হস্তক্ষেপ করবেই। এই হস্তক্ষেপই হচ্ছে অভদ্রতা, অশিষ্টতা, অসভ্যতা, অশ্লীলতা, বর্বরতা। এসব কারণেই ‘গ্রাম্যতা’ শব্দটির উদ্ভব।

সেই কারণে অর্থবিত্ত হলে এখন আর কেউ গ্রামে থাকতে চায় না, শহরে পাড়ি জমাতে চায়। শহর মানে ঢাকা, চট্টগ্রাম বা সিলেট শহর হতে হবে, তা নয়। যে কোনো জেলাশহরও হতে পারে, উপজেলা শহরও হতে পারে। শহরে সমাজের হস্তক্ষেপ তুলনামূলকভাবে কম। ‘একজনের পাঁচায় আরেকজনের আঙুল দেওয়া’ কম। শহরে ব্যক্তি স্বতন্ত্র্যভাবে বাঁচতে পারে। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য মানুষের বিকাশের জন্য জরুরি। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য চর্চার মধ্য দিয়েই মানুষ বিকশিত হয়। মানুষের বিকাশ মানে সভ্যতার বিকাশ। সুন্দর পৃথিবীর গঠন।
‘গ্রাম্যতা’ শব্দের উদ্ভব গ্রাম থেকে হলেও এখন এটি একটি টার্ম। একটি পরিভাষা। একটি মানসিক দশা। ‘গ্রাম্যতা’ কেবল যে গ্রামেই থাকে, তা নয়। শহরেও থাকতে পারে। মোহাম্মদপুর, মিরপুর, যাত্রাবাড়ি বা রামপুরাতেও থাকতে পারে। আছেও বটে। সুতরাং ‘গ্রাম্যতা’ শব্দটি দোষণীয় কোনো শব্দ বলে মনে করি না। যতদিন গ্রামের অধিকাংশ মানুষের এই নেতিবাচক স্বভাব থাকবে, ততদিন শব্দটির প্রাসঙ্গিকতা থাকবে। তবে আশার কথা, গ্রামের মানুষদের এই স্বভাব-চরিত্র বেশি দিন থাকবে না। গ্রাম বদলে যাচ্ছে। বদলে যাচ্ছে গ্রামের সংস্কৃতি। গ্রাম ক্রমে পরিণত হচ্ছে শহরে। গ্রামেও এখন ব্যক্তিস্বাতন্ত্র চর্চা ক্রমশ বাড়ছে। একদিন সম্পূর্ণ পাল্টে যাবে গ্রামীণ সমাজ ও সংস্কৃতি। তখন হয়তো ‘গ্রাম্যতা’ শব্দটিও বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

এখন আপনি প্রশ্ন তুলতে পারেন, আমি গ্রামের যে খারাপ দিকগুলোর কথা বললাম, শহরের কি তেমন খারাপ দিক নেই? আছে তো বটেই। সেই খারাপ দিকগুলোর জন্য ‘গ্রাম্যতার’ বিপরীতে ‘শহুরতা’ শব্দের উদ্ভব ঘটতে পারে। ঘটলে কারো কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়। লেখক : কথাসাহিত্যিক

স্বকৃত নোমান

Wednesday, September 8, 2021




জাফরানি চা

করণ

চা–পাতা ৪ চা-চামচ, তরল দুধ ৩ কাপ, পানি দেড় কাপ, জাফরান সিকি চা-চামচ, বাটার কুকিজ বা বাটার বিস্কুটের গুঁড়া ১ চা-চামচ, চিনি স্বাদমতো, ডিমের কুসুম ১টি ও দুধের সর ১ টেবিল চামচ।

প্রণালি

পানি ভালোভাবে ফুটে উঠলে চা-পাতা দিয়ে কড়া লিকার তৈরি করুন। দুধের সঙ্গে জাফরান মিশিয়ে জ্বাল দিন। ডিমের কুসুম দিয়ে ভালোভাবে ফেটান। এবার চিনি ও বিস্কুটের গুঁড়া মিশিয়ে চায়ের কড়া লিকারে ঢেলে জ্বাল দিন। তারপর চায়ের কাপে মালাই দিয়ে পরিবেশন করুন।

Tuesday, September 7, 2021

 আজকের ভাবনা

  ৮/৯/২০২১

                      ১/

জীবনে নিরঙ্কুষ সত্য বলে কিছু নেই।

সত্য মিথ্যা দুটোকে সঙ্গী করেই তো জীবন। মিথ্যাকে যদি কল্পনা থেকেও বাদ দিতে হয় তাহলে জীবন ভরে উঠবে বিষাদে। বিষাদের জীবনও তো মানুষের কাম্য নয়।


                        ২/

জাস্ট ঠাসস করে দুটো লাথি মেরে সামনের দিকে হাঁটতে আর খুব খুব বেয়াদপ আর দজ্জাল হয়ে যেতে, যেন ভয়ে কেউ ওর ছায়াও না মারায়!



                          ৩/

আজকাল য়ুরোপ মানুষের সব জিনিসকেই বিজ্ঞানের তরফ থেকে যাচাই করছে, এমনিভাবে আলোচনা চলছে যেন মানুষ-পদার্থটা কেবলমাত্র দেহতত্ব কিংবা জীবতত্ব, কিংবা মনস্তত্ত্ব, কিংবা বড়োজোর সমাজতত্ব। কিন্তু মানুষ যে তত্ব নয়, মানুষ যে সব তত্বকে নিয়ে তত্বকে ছাড়িয়ে অসীমের দিকে আপনাকে মেলে দিচ্ছে দোহাই তোমাদের, সে কথা ভুলো না।’

                                রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর