Thursday, December 31, 2020

 




New Year’s Day is the first page in a blank book: Write a phenomenal story!

The future is our story to write… make next year the best one yet.
New year, new start. May all our dreams come true in 2021!

Monday, December 28, 2020

 

আজকের চিন্তা

২৯/১২/২০২০


গত দু’দশকে টেলিফোন যেমন স্মার্টফোনে বদলে গিয়েছে, আর পাড়ার আড্ডা বদলে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়— তেমনই বিবাহের যৌতুক বদলে গিয়েছে উপহারে, আর পুত্রবধূর মাপকাঠি ‘ঘরোয়া’ থেকে বদলে হয়েছে ‘শিক্ষিত ও ঘরোয়া’।

কেউ বলছেন, মহিলারা স্বাধীন থাকার বা স্ব-সিদ্ধান্ত গ্রহণের যোগ্যই নন, নারী-স্বাধীনতা বরং সমাজের পক্ষে ক্ষতিকর। আবার কেউ বলছেন, মহিলারা নিজের কাজে মগ্ন হয়ে থাকলে স্বামী-সংসারের খেয়াল রাখবে কে? তাই সংসারের খেয়াল রাখতে মহিলাদের হতে হবে ‘ঘরোয়া’ আর আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের উন্নয়নের মুখরক্ষায় মেয়েদের হতে হবে ‘শিক্ষিতা’।

পাত্রপাত্রীর বিজ্ঞাপনের ভাষা যেন ঠিক সমাজের আয়নাটি।

  • প্রহেলী ধর চৌধুরী (লেখক)

Sunday, December 27, 2020

 

আজকের বিষয়

২৮/১২/২০২০

আমি ইদানীং অনেক ওয়াজ দেখছি ইউটিউবে গবেষণা পারপাসে। ছোটবেলা থেকে বিশেষ বিশেষ রাতে ওয়াজে কে যায়নি। সত্যি বলতে কী মাঝে মাঝে ভালো লাগতো। কিন্তু এ যুগের ওয়াজে একটা পরিবর্তন এসেছে। এ যুগের ওয়াজে প্রাণ কই? এ যুগের ওয়াজ থেকে কি কেউ চোখ মুছতে মুছতে বাড়ি ফেরে? এ যুগের ওয়াজ থেকে কি কেউ বুক হালকা হয়েছে এমন অনুভূতি নিয়ে বাড়ি ফেরে? ওয়াহাবীদের ওয়াজে তো কোনো প্রাণ নেই। তারা করে কমেডি শো আর সার্কাস, আর করে একে ওকে গালাগালি। এ যুগের ওয়াজ থেকে মানুষ কি নিয়ে বাড়ি ফেরে? বুকভর্তি ঘৃণা ছাড়া অন্য কিছু নেওয়ার সুযোগ তো দেখি না। তারা তো দেখি মিলাদ কিয়াম মোনাজাতও করে না। যাইহোক, একটা বিশেষ পার্থক্য লক্ষ করলাম। সুন্নী হুজুরদের জামা কাপড় সস্তা, তাদের শ্রোতারাও গরিব, তাদের মঞ্চ ছোট, তাদের মঞ্চের আলো কম। ক্যামেরাও নেই চৌদ্দটা। কিছু সুন্নী হুজুর দেখলাম গাড়ি ভর্তি কিতাব নিয়ে যায় ওয়াজে, কথা বলে দামি, কিন্তু শ্রোতা কম। তারা প্রায়ই বাহাসে ডাকে, সেই ডাকে ওয়াহাবীরা সাড়া দেয় না। সাড়া দেওয়ার মতো মুখও নেই, কেন নেই সেটা বলি। দেওবন্দী ঘরানার যেসব মোল্লারা এক দুই পুরুষ আগে সৌদি টাকা পেয়ে ওয়াহাবী হয়েছে তাদের আগের ঘরানার সব মুরুব্বী ছিলেন সুফীবাদের অনুসারী, তাদের সবার পীর ছিল, তারা নবীকেও সম্মান করতো। তাদের উত্তরসূরীরা এখন দুইদিনের ওয়াহাবী হয়ে ভাতকে বলছে অন্ন। সবই টাকার খেল। ওয়াহাবীদের ওয়াজে তাই মিথ্যার ফুলঝুরি। জিকির জিনিসটা স্পিরিচুয়াল। এই জিকির ওয়াহাবীদের সংবিধানে নেই। তাই তাদের ওয়াজে প্রাণও নেই। তাদের ওয়াজে শ্রোতাদের দেখলেই বুঝা যায় তাদের আত্মা মৃত, তাদের হৃদয় ভর্তি ঘৃণার চাষবাস। যাইহোক, আমি আমেরিকায় রুট লেভেলে কিছুকাল চলার সুবাদে বলতে পারি আমেরিকায় স্পিরিচুয়ালিটি অনেক জনপ্রিয়। এজন্যেই ক্ষেত্র বিশেষে এখানে ইয়োগা, সুফীজম, কিংবা বৈষ্ণবদের অনেক জনপ্রিয়তা দেখেছি। আমেরিকার অনেকেই নিজেদের রিলিজিয়াস না বলে প্রোফাইলে লিখে ‘স্পিরিচুয়াল’, কারণ এতে আত্নার খোরাক পাওয়া যায়। এজন্যেই আমেরিকায় সর্বাধিক বিক্রিত কবিতার বই হচ্ছে জালালুদ্দিন রুমির কবিতা। আমি যখন উফিং করতে যেতাম তখন দেখেছি এইসব মামালোকেরা প্রায় সবাই স্পিরিচুয়াল! এই জন্যেই এই মানুষগুলার মন মানসিকতা এতো সুন্দর হতো। তার মানে স্পিরিচুয়াল বিষয়গুলা মানুষের অন্তরে প্রভাব ফেলেই। যে কারণে সুন্নী ওয়াজ শুনলে সেই ফিলিংস নিয়ে বাড়ি ফেরা যেতো।

ওয়াহাবীদের সব তেল চকচকা। বুঝা যায় সৌদি টাকার জেল্লা এগুলা। তাদের ওয়াজে মানুষ বেশি হওয়ার একটা কারণ হচ্ছে দেশে কওমি মাদ্রাসা অনেক, আশেপাশের মাদ্রাসা ছাত্র এসেই কাতার ভরে ফেলে। এজন্যেই আসলে পশ্চিমারা সফট পাওয়ার এক্সারসাইজ করার জন্য সৌদিকে বেছে নিয়েছিল। এক সৌদির মাধ্যমে মাদ্রাসাকে টাকা দিতে থাকলেই সব হুজুরেরা লাইনে থাকবে। বাস্তবেও তাই হয়েছে। হুজুরেরা আবার নিমক হারাম না, যার নুন খায় তার গুণ গায়। ওয়াহাবীদের টাকা নেয় তাই কোরান বিরুদ্ধ হলেও তাদের পক্ষেই সহিংস ওয়াজ করে। তারা যে কি পরিমাণ বেয়াদবী করে নবীর সাথে তা কল্পনাতীত। এজন্যেই যারা বুঝে তারা ওয়াহাবীদের ‘গুস্তাকে রাসূল’ বলে। তারা নবীর কোনো পরিচিতি এই পৃথিবীতে রাখতে চায় না। সব সাহাবীর কবরস্থান, বিবি খাদিজার কবস্থান ভেঙ্গে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে। তাদের এক প্রিয় ইমাম নাসিরউদ্দিন আলবানী প্রস্তাব দিয়েছিল নবীর লাশ বা হাড়গোর যাই পাওয়া যায় তা মসজিদে নববী থেকে তুলে নিয়ে অজ্ঞাতস্থানে ফেলে দেওয়ার। সেই আলবানীর বংশধররা এখনও সৌদি ফান্ডে চলে যদিও জনগণের প্রতিবাদের মুখে তাকে সৌদি সরকার দেশ থেকে বের করে দিয়েছিল। যাইহোক তারাই এখন পৃথিবীজুড়ে সহিংসতা উস্কে দিয়ে মুসলমানদের দুর্নাম করার ঠিকা নিয়েছে আর নবীকে যতোটা সম্ভব মানুষের মন থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় আছে। তারাই মিলাদ কিয়াম যেসবে নবীকে স্মরণ করা হয় তাতে বাধা দেয়। জিকির নেই, মিলাদ কিয়াম নেই, তাহলে কি করার আছে? তারা সেই পলিটিক্সের কথাই বলে আর পরচর্চাই করে! আর হিন্দি গান গায়। যাইহোক এসব ওয়াজ শুনতে শুনতে হঠাৎ কোন সুন্নী ওয়াজিয়ান সেই মাদকতাপূর্ণ কণ্ঠে গেয়ে উঠে সেই অনেক কালের পুরনো ফেলে আসা সুর, তখন সত্যি সত্যিই হৃদয় ছলকে উঠে। নবীর শানে গাওয়া সেই চির পরিচিত সালাম…। আহা কি তার সুর…মোস্তফা জানে রহমত পে লাখো সালাম…। শাম এ বাজ মে হেদায়েত পে লাখো সালাম…। মেহরে চারকে নুবুওয়াত পে রওশনও দুরুদ গুলে বাগে রিসালাত পে লাখো সালাম…। সেহরে ইয়ারে ইরাম তাজদারে হারাম… নাও বাহার এ শাফায়াত পে লাখো সালাম…। ফেসবুক থেকে

Saturday, December 26, 2020

 

২৭/১২/ ২০২০

এইটা নাকি জামাই কুলি/ চন্দ্রকুলি পিঠা। আমি এর রেসিপি খুঁজলাম কিন্তু সব জায়গায় অন্য র ক ম।

জানতে ইচ্ছে হচ্ছে এইটা কিভাবে কি দিয়ে তৈরি করা হয় । খেতে ই বা কেমন? আমাদের যশো রে এই পিঠাদেখিনি। জাপানে ও আমি কাউকে বানাতে দেখিনি।


Friday, December 25, 2020

 


আজকের চিন্তা

২৬/১২/২০২০


 প্রতিটি জাতির থাকে একটি মাতৃভাষা ও একটি পিতৃভূমি। তুমি যে বলো জাতিতে তুমি মুসলমান, তোমার মাতৃভাষা কী এবং তোমার পিতৃভূমি কোথায়? মুসলমান জাতি বলে কোনো জাতি পৃথিবীতে কখনও ছিলো না, এখনও নেই, এবং ভবিষ্যতেও হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখি না। আছে আরব, ইরানী, তুর্কী, ইত্যাদি। হ্যাঁ, ইসলাম একটি ধর্ম, যার অনুসারীদেরকে মুসলমান বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন জাতির মধ্যেই মুসলমান আছে। মুসলমান একটি ধর্মীয় সম্প্রদায় – কোনো জাতি নয়।

মুসলমানেরা একটি অভিন্ন জাতি হলে, সে-জাতির একটি অভিন্ন দেশ থাকতো এবং সে-দেশে প্রতিটি মুসলমানের সমান অধিকার থাকতো। কারণ, ইসলাম বলে সকল মুসলমান সমান। বলে না? তুমি যদি বলো মুসলমানের মাতৃভাষা আরবি এবং পিতৃভূমি আরব এবং তুমি হচ্ছো মুসলমান জাতির লোক, তো আরবি ভাষায় কথা বলো তো মায়ের সাথে, ভায়ের সাথে, বোনের সাথে, স্ত্রী-কন্যা-পুত্রের সাথে, আত্মীয়স্বজনের সাথে, এবং তাদের সবাইকে নিয়ে যাও তো দেখি তোমার পিতৃভূমি আরবদেশে! পারবে?

পারবে না! তবে, কেনো তুমি বাস্তবতাকে অস্বীকার করে কল্পনার জগতে বাস করো? স্বীকার করো যে, বাংলা তোমার মাতৃভাষা, বাংলা তোমার পিতৃভূমি এবং জাতিতে তুমি বাঙালী। আরও স্বীকার করো যে, বাঙালী জাতির সংখ্যাগুরু ধর্মীয় সম্প্রদায় মুসলমান হলেও এ-জাতির মধ্যে রয়েছে অন্যান্য আরও ধর্মের অনুসারী এবং এদের সকলেরই মাতৃভাষা বাংলা ও পিতৃভূমি বাংলা।তারা তোমার জাত-ভাই-বোন। তাই জাতি হিসেবে তোমাদের সকলের ভাগ্য একত্রে বাঁধা।

এই সত্যকে স্বীকার করে নিজদের দেশে নিজের জাতিকে সুসভ্য মানুষের স্তরে উন্নীত ও সমৃদ্ধ করো এবং জাতি হিসেবে সুসভ্য কিছু বিধান মেনে চলো।অন্যথায়, তুমি নিজেকে মুসলমান জাতির লোক এবং আরবি তোমার মাতৃভাষা ও আরব তোমার দেশ বলে যতোই চিৎকার করো, খোদ আরব জাতির লোকেরা তোমাকে “মিসকিন” ছাড়া আর কিছুই মনে করবে না। তাই, যদি মানুষের মর্য্যাদা নিয়ে পৃথিবীতে বাঁচতে চাও, প্রকৃতি তোমাকে যে-বাংলায় বাঙালী করে সৃষ্টি করেছে, তার ভিত্তিতেই আত্মপরিচয় নিয়ে মানুষ হওয়ার চেষ্টা করো। এতেই তোমার সম্মান এবং এতেই তোমার মর্য্যাদা – অন্য কিছুতে নয়।

মাসুদ রানা: লেখক

Sunday, December 20, 2020

আজকের ভাবনা

২১/১২/২০২০

                               ১/

না শব্দটাকে প্রথম দেখাতে নেতিবাচক মনে হতে পারে। কিন্তু না শব্দটার মধ্যে ইতিবাচকতা ও আছে। 


                           ২/

হা বলাটা যতটা সহজ না বলাটা ততটাই  কঠিন। 


                         ৩/

হাতের উপর হাত রাখা খুব সহজ নয়
সারা জীবন বইতে পারা সহজ নয়
এ কথা খুব সহজ, কিন্ত কে না জানে
সহজ কথা ঠিক ততটা সহজ নয়...

(শঙ্খ ঘোষ)


                           ৪/

পৃথিবীতে কোনো কিছুই সহজ নয়। সহজ কথাটাও অনেক কঠিন। 


                          ৫/

আঘাত মানুষকে কষ্ট দেয় না মানুষকে বদলে দেয়। 



Tuesday, December 15, 2020

 

তোমাদের যা বলার ছিলো, বলছে কি তা বাংলাদেশ?

    ইসলামের জন্মভূমি সৌদি আরবে যখন নারীরা ক্রমশ এগিয়ে আসছে, গাড়ি চালানোর অনুমতি পাচ্ছে; তখন বাংলাদেশের মৌলবাদীরা নারীদের ‘ফোর-ফাইভ’ পর্যন্ত পড়াতে চায়, কাজ করতে দিতে চায় না। 

ব্রিটিশ আমলে ইংরেজি শিক্ষার বিরোধিতা করে মৌলবাদীরা মুসলমানদের পিছিয়ে দিয়েছিল। এখনও কথায় কথায় নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তারা সব মানুষের ধর্ম ইসলামকে গণ্ডিবদ্ধ করে রাখতে চায়। সহজ ইসলামকে কঠিন করে ফেলতে চায়। অল্প কিছু মৌলবাদীই যেন ইসলামকে লিজ নিয়ে ফেলেছে। তারা কথায় কথায় হারাম-হালালের তালিকা দেয়, আবার মাঝে মাঝেই সেই তালিকা বদলায়, যখন ইচ্ছা যাকে তাকে অমুসলিম, কাফের, নাস্তিক ঘোষণা করে।

বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ। তারা নিয়মিত ধর্ম পালন করে। নামাজ পড়া, রোজা রাখা, টাকা জমিয়ে শেষজীবনে একবার হজ করা, মানুষের কল্যাণ করাকেই ধর্ম হিসেবে পালন করে। কিন্তু কাঠমোল্লারা এই সহজ ইসলামকে নানান নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে আটকে রাখতে চায়। তাদের দৃষ্টিতে ভাস্কর্য হারাম, সুদ হারাম, ছবি তোলা হারাম, ছবি দেখা হারাম, সিনেমা হারাম, গান হারাম, ফেসবুক হারাম, নারীশিক্ষা হারাম, নারী নেতৃত্ব হারাম। তাদের কথা না মানলে ইসলাম ধর্ম অপালনযোগ্য হয়ে যাবে। প্রতিযোগিতামূলক কঠিন বিশ্বে মুসলমানরা আরও পিছিয়ে পড়বে। সময় এখন জ্ঞান-বিজ্ঞানের। শ্রেষ্ঠ হতে হলে সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে। বাংলাদেশের উগ্র মৌলবাদীরা যে ভাষায়, যে ভঙ্গিতে কথা বলে, সারাক্ষণ ঘৃণা ছড়ায়, ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ায়, সমাজে অশান্তি ছড়ায় তা ইসলামসম্মত নয়। ইসলামের শান্ত সুফি ভাবধারার সাথে এই কাঠমোল্লাদের ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই। ইসলাম বিশ্বজয় করেছিল শান্তির বাণী দিয়ে, ঘৃণা বা সন্ত্রাস দিয়ে নয়। আজ যারা শান্তির ধর্ম ইসলামকে সন্ত্রাস আর জঙ্গীবাদের ধর্ম বানাতে চায়, তারা অবশ্যই ইসলামের শত্রু।

গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হয়েছে গ্লোবাল নলেজ ইনডেক্স বা বৈশ্বিক জ্ঞান সূচক। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) এবং মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম নলেজ ফাউন্ডেশনের যৌথভাবে প্রকাশিত সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান তলানিতে- ১৩৮টি দেশের মধ্যে ১১২তম। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নিচে বাংলাদেশ। বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক ড. শামসুজ্জামান খান এই নিউজটি শেয়ার করে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘দেশ অশিক্ষিত মোল্লা-মৌলভীতে ভরে গেলে এই তো হয়।‘ অবকাঠামো উন্নয়ন, অর্থনৈতিক আর সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ যখন বিশ্বের বিস্ময়; তখন জ্ঞান সূচকের এই হাল আমাদের জন্য লজ্জাজনক। এই অন্ধকারের শক্তির কবল থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করতে হবে।

একাত্তরে সব ধর্মের মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছিল। একাত্তরের স্লোগান ছিলো ‘বাংলার হিন্দু, বাংলার বৌদ্ধ, বাংলার খ্রিস্টান, বাংলার মুসলমান, আমরা সবাই বাঙালি’। একাত্তরের গান ছিলো ‘নেই ভেদাভেদ হেথা চাষা আর চামারে/নেই ভেদাভেদ হেথা কুলি আর কামারে/হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান/আমার এ দেশ সব মানুষের।‘ সব মানুষের এই দেশকে তারা শুধু মুসলমানদের দেশ বানাতে চায়। অথচ ইসলাম সব ধর্মকে সম্মান করাই শেখায়। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস এলে আসাদ চৌধুরীর কবিতার একটি লাইন প্রশ্ন হয়ে ঘুরে বেরায় আমাদের মাঝে, ‘তোমাদের যা বলার ছিলো, বলছে কি তা বাংলাদেশ?’ মুক্তিযোদ্ধারা, শহীদ বুদ্ধিজীবীরা, ৩০ লাখ শহীদ যে স্বপ্নে যুদ্ধ করেছেন, জীবন দিয়েছেন; আমাদের দায়িত্ব ছিলো সেই বাংলাদেশ গড়ে তোলা- সবার বাংলাদেশ, সব মানুষের বাংলাদেশ, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছরের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে কেন যেন মনে হয়, এই প্রশ্নের উত্তর হলো, ‘তোমাদের যা বলার ছিলো, বলছে না তা বাংলাদেশ’। আমাদের আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ গড়তে হবে, রুখতে হবে সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে। তাহলে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মা শান্তি পাবে।

(লেখক প্রভাস আমিন)

 আজকের ভাবনা

১৫/১২/২০২০


জাপানে শীত জাঁকিয়ে বসেছে। ভাল কোন

খবর নেই। যেন ডাইনি অভিশাপ দিয়েছে।

আর পারা যাচ্ছে না। মাঝে মাঝে ম নে হয় 

আর কি স্বাভাবিক হবেনা আমাদের এই পৃথিবী।

আর কত? এভাবে কি বাঁচা যায়।


Sunday, December 13, 2020

 

১৪।১২।২০২০

সকালে যে পত্রিকা ১০ টাকায় বিক্রি হয়,

অথচ বিকালে তার কেজি বিক্রি হয় ১০ টাকায় !
পার্থক্য শুধু সময়ের।
সকালে যে ফুল কলি হয়ে ফুটে
বিকেলে সেই ফুলটা মাটিতে পড়ে লুটে!
পার্থক্য শুধু সময়ের!
যে মেয়েটি বাবা মায়ের আদরের রাজকুমারী
বিয়ে পরে সেই মেয়েকেই পাঠিয়ে দিতে হয় পরের বাড়ি
পার্থক্য শুধু সময়ের!
ছোট্ট বেলায় যে ঘর ছিলো অচেনা অজানা
সেই ঘর মেয়েদের জন্য হয়ে উঠে স্থায়ী ঠিকানা!
পার্থক্য শুধু সময়ের!
তরতাজা যে ফুলটা থাকে মাথার খোঁপায়
প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলেই সে ডাস্টবিনে জায়গা পায়!
পার্থক্য শুধু সময়ের!
সময়ের কাছে মানুষ বড় অসহায়।
<<সংগৃহীত>>

Saturday, December 12, 2020

 


আমরা যতই বলি না কেন মা-বাবার চোখে সব সন্তানই সমান... কিন্তু বাস্তবে তা না। ছোটবেলার পর্বটা পার হয়ে গেলে আর সব বাচ্চা পিতা-মাতার চোখে সমান থাকে না। (কারো কারো ছেলেবেলা থেকেই শুরু হয় বৈষম্য) এই কথার পর আপনারা আমাকে গালি দেন, বকা দেন, যাই দেন... এটাই সত্যি বেশিরভাগ বাড়িতে। (ব্যতিক্রম কখনো উদাহরণ না)

সব বাড়িতেই একটা না একটা সন্তান আছে, যারা অবহেলিত। তাদের কোন সিদ্ধান্তে প্যারেন্টরা সাপোর্ট দেয় না, কিন্ত এর চেয়ে ভয়াবহতম সিদ্ধান্তেও অন্য বাচ্চাকে সাপোর্ট করে। সামান্য কথা না শুনলেই সে খারাপ, আর যে কোনদিন কথা শুনে না সে নাকি "অবুঝ"। তারা জীবনে যত যাই অর্জন করুক, সেই অর্জনের সামান্য মূল্য নেই। আর অন্যেরা ভাল করে কাশি দিলেও তা বিরাট ব্যাপার! তাদের ক্ষেত্রে কেবল ৭ খুন কেন, ১৪ খুন মাফ।
এমন একটা সন্তান সব বাড়িতেই আছে, যাকে অন্য ভাইবোনের জন্যে বারবার ঝামেলায় পড়তে হয় কিংবা অন্যদের জন্যে খেটে মরতে হয়। বিয়ের পরে তার বর কিংবা বউকে অন্য ভাইবোনেদের বর/বউয়ের মত আদর করা হয় না, তাদের বাচ্চারা হয় যেমন তেমন আদরের। আমি এমন অনেক ফ্যামিলি দেখেছি, যেখানে সামান্য কয়টা নম্বরের জন্যে এক বাচ্চা মেডিকেলে চান্স পায়নি আর বাবা জিদ করেছে যে প্রাইভেটে পড়াবে না। অন্যদিকে একই ফ্যামিলিতে আরেক সন্তানের ভাগ্যে ঠিকই জুটেছে প্রাইভেট ভার্সিটি, যদিও সে বছর বছর ফেল মারে।
এমন সন্তান সব ঘরেই আছে যার পাতে মাছ-মাংসের বড় টুকরোটা যায়, তারা যাই করুক না কেন তাদের পক্ষে সাফাই রেডি থাকে। তারা মা- বাবাকে মারুক-ধরুক-যাই করুক, তারাই মা-বাবার চোখে সবচে ভাল। তাদের বর বা বউয়েরা ভিয়াইপি সম্মান পায়, তাদের জন্যে সব ক্ষেত্রেই বিশেষ ব্যবস্থা। অন্যদিকে রোগেশোকে বিপদে যে সন্তান জান দিয়ে দেয়, সারাক্ষণ ভাবে মা বাবাকে কীভাবে খুশি করা যায়, তার সেই করার কোন মূল্য নাই।
আর এমন সন্তানও সব ঘরে আছে, যারা কেবল বঞ্চিতই হয়ে যায়। তাদের লেখাপড়ার সময়ে মা-বাবার টাকা থাকে না, অন্যদের বেলায় থাকে। তাদের বিয়েতে হয় খুব চাপাচাপি, অন্যদের বেলায় ধুমধাম। কাউকে কাউকে তো কোনরকম বিয়ে দিয়ে পার করা হয়, কারণ তার কারণে নাকি অন্যদের বিয়ে হচ্ছে না। সেইসব মেয়েরা বর নিয়ে বাপের বাড়ি মনে হয় বাইরের মানুষ এসেছে, বউ নিয়ে গেলে মনে হয় বুয়া নিয়ে এসেছে। এইসব বাচ্চাদের জীবন কেটে যায় অন্য ভাইবোনের জন্যে "স্যাক্রিফাইস" করতে করতে। যদি করতে না পারে, তবে তারা খুবই খারাপ। স্যাক্রিফাইস চাওয়ার আগে মা বাভাপ জিজ্ঞেস করে না- তুমি ঠিক আছো? তুমি কি পারবা? অসুবিধা হবে না তো?
অথচ যারা আজীবন পেয়েই যায়, সবকিছু যারা বেশি ভোগ করে, তাদের থেকে কেউ স্যাক্রিফাইস চায় না!

Friday, December 11, 2020

 


আজকের ভাবনা
১২/১২/২০২০
টেলিভিশন নাকি শয়তানের বাক্স, আমার একজন খুব কাছের মানুষ এমন ক থা বল ল।
আমি কিন্তু এম্ ন ভাবতে পারি না। এ জগতে কো ন কিছুই আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া হতে পারে? এটা ও তার রহমত । আমরা মেয়েরা যারা বাসায় থাকি আমরা কতঁ কিছু জানতে পারি টিভি দেখে। আমাদের বিনোদন দেয়। বই পড়ে তো এগুলা পাওয়া যায়।  বই, টিভি সবই আল্লাহর রহমত।
আসলে বার রকমের মানুষের বার রকম ভাবনা। আমি ম নে ক রি সব সময় সব কিছু থেকে পজেটিভ ভাগ টা আমাদের নিতে হবে।
নবীজীকে যখন দুধ, মদ, আর পানি দেওয়া হয়েছিল তিনি তখন দুধ পছন্দ করেছিলেন।
এটাই ইসলামের শিক্ষা।

Thursday, December 10, 2020

 

অধরা

শুধু চান্স কাছে এল না। সময় এবং চান্স মানুষকে অনেক কিছুই পাইয়ে দেয়, আবার অনেক কিছু হারায়ও। এত কাছে এসেও প্রফেসর কিছুই পেলেন না। নোবেলটা অধরা রয়ে গেল!


-সুকুমার বারিক / Date : Sunday, July 26 , 2020



২০১৯ সালের ১১ জানুয়ারি। কনকনে ঠান্ডা পড়েছে বেঙ্গালুরুতে।
এবছরের স্ত্রীরোগ এবং প্রসূতিবিদ্যার অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস হচ্ছে সেখানে। সুকোমল আগের বেশ কয়েকবারের মতোই ফ্যাকাল্টি। একটা লেকচার, একটা সেশন জাজ করার আছে।
সকালবেলা একটা বড় হলে প্রথম সারিতে বসেছিল সুকোমল। তখনও সেশনটা শুরুই হয়নি। এত সকালবেলা ওর বন্ধুরা কেউ রাজি হয়নি।
‘‘তুমি কী যে বারবার শুনতে চাও, বুঝি না। কত কিছু তো শুনেছ আজ পর্যন্ত। কেন যে এত পড়াশোনা করতে হবে সেটাই 
তো বুঝতে পারি না। এইটুকু ছোট্ট জীবনে পড়াশোনা তো থাকবে, নিশ্চয়ই থাকবে, কিন্তু জীবনটা কি শুধু পড়াশোনা করার 
জন্যই নাকি? আরও তো অনেক কিছু এ জীবনেই...’’ কথাটা শেষ করতে দেয় না সুকোমল । 
‘‘বুঝতে পেরেছি তোরা কেউ আসবি না এই সাতসকালে, এই তো?’’
 
হলে লোকজন এসেছে গোনাগুনতি। উদ্যোক্তাদের একজন এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। ঠিক এমন সময়ই ওর ওই ডেলিগেটদের ক্লাসিফিকেশনের কথা মনে পড়ল। ‘হলমার্ক’, ‘আউটস্ট্যান্ডিং’, ‘স্টলওয়ার্থ’। যেই বার করুক না কেন, তার মাথায় যথেষ্ট বুদ্ধি আছে। 
নির্ধারিত সময়ের মিনিট পনেরো পরে একজন চেয়ারপার্সন হন্তদন্ত হয়ে আবির্ভূত হলেন। বক্তাদের সবাই হাজির। সেশন শুরু হল।
মন দিয়ে শুনছিল সুকোমল। দ্বিতীয় বক্তাকে দেখে খুব অবাক হল। দেখে তো মনে হচ্ছে বিল।
উইলিয়াম বিল টাইডি। ঘোষণা হতেই কনফার্ম হওয়া গেল যে বিদেশ থেকে এসেছেন উল্লেখযোগ্য বক্তা। ইংল্যান্ডের শেফিল্ডে কাজ করা প্রফেসর উইলিয়াম টাইডি। বিলকে প্রায় কুড়ি বছর পরে দেখে মনে খুব আনন্দ হল সুকোমলের। সুকোমল যখন ইউনিভার্সিটি অফ শেফিল্ডের মেন হাসপাতালে কাজ করছিল তখন সিনিয়র লেকচারার হিসেবে যোগ দিয়েছিল বিল। প্রফেসর পিটার শার্প, বিলের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন।  
‘‘সুকি, বিল নতুন জয়েন করছে সিনিয়র লেকচারার হিসাবে। তোমার সঙ্গে ও কাজ করবে। খুবই ভাল ছেলে। টাইডি বাই নেম অ্যান্ড টাইডি বাই ওয়ার্ক,’’ সুকোমলের মনে পড়ে গেল, প্রফেসর ওকে ছোট করে ‘সুকি’ ডাকতেন। দীর্ঘদেহী বিল একটু মৃদু হেসে হ্যান্ডশেক করেছিল। তারপর বহুদিন একসঙ্গে ক্লিনিক করেছে। অপারেশন করেছে, ওয়র্কশপ করেছে, কিছু গবেষণাতেও একসঙ্গে কাজ করেছে। বিলের সঙ্গে এক অদ্ভুত সখ্য তৈরি হয়েছিল সেই সময়। একটা পারস্পরিক আদাপ্রদান আর শ্রদ্ধার সম্পর্ক। তাই সুকোমল যখন দেশে ফিরে আসার কথা সবাইকে জানাল, তখন বিল খুব বিস্মিত হয়েছিল, বলেছিল, ‘‘সত্যিই কি তোমাকে চলে যেতে হবে? তুমি এখানে থেকে যাও না। আমরা দু’জনে অনেক কিছু করতে পারব সুকি। ভাল ভাল কাজ...’’
সুকোমল বুঝিয়ে বলেছিল যে কী কারণে ও ফিরে যেতে চায়।
বিলের উদ্যোগে একটা বড় ফেয়ারওয়েল পার্টি হয়েছিল। ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র, জুনিয়র, মাঝারি অনেকেই গিয়েছিল একটা বাইরের রেস্তরাঁয়। মন উজাড় করা কথা বলেছিলে সুকোমলের সম্পর্কে। গিফ্টও দিয়েছিল। তার মধ্যে খুব একটা মজার জিনিস পেয়েছিল যেটা সুকোমল চিরকাল মনে রাখে। শেফিল্ড ইউনিভারসিটির একটা শিল্ড। 
বিল বলেছিল, ‘‘তুমি অত্যন্ত প্রতিভাবান সিনসিয়র অ্যাকাডেমিক। ছাত্র পড়িয়েছ, ওয়র্কশপে হাতে ধরে শিখিয়েছ, গবেষণা করেছ। সেজন্যই তোমাকে এই শিল্ড উপহার দিলাম।’’
সেদিন খুব বেশি কিছু বলতে পারেনি ধন্যবাদ দেওয়া ছাড়া। 
*
এ সেই বিল টাইডি। সেশন শেষ হওয়ার পরে ভাবল একবার দেখা করলে ভাল হত মনে হয়। তবে মনে একটা বিরাট সংশয় ছিল। বিল কি চিনতে পারবে? কুড়ি বছরের আগের সুকোমলের ঝাঁকড়া চুল, লম্বা গোঁফ হাওয়া। অনেকটা টাক, অর্ধেকেরও বেশি চুলে পাক। চেনা সহজ নয়। এর মাঝে কোনও যোগাযোগও নেই। একটু এগিয়ে গিয়ে বিলের সামনে দাঁড়াল।
বিল একবার চোখের দিকে তাকাল এবং সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল, ‘‘সুকি!’’  
তারপর দু’জনের কত কথা। বিভিন্ন লোকে ছবি তুলছিল ওদের। সেদিকে কোনও নজর ছিল না ওদের। কে কোথায় আছে জেনে নেওয়ার পরে বিল বলল, ‘‘কয়েকটা ভাল খবর আছে আর কয়েকটা খারাপ খবর আছে। তুমি প্রথমে কোনটা শুনতে চাও?’’
‘‘ভালটা আগে বল।’’
‘‘আমি এখন প্রফেসর হয়েছি। শেফিল্ডের দুটো হাসপাতাল এখন এক হয়ে একটা বড় হাসপাতালের রূপান্তরিত হয়েছে। বেশ কিছু গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। আর শরীরের দিক থেকে মোটামুটি ঠিকই আছি। সো ফার ওকে।’’ 
‘‘কনগ্র্যাচুলেশনস।’’
‘‘থ্যাকংস।’’ 
‘‘খারাপ খবর হচ্ছে গত অক্টোবরে প্রফেসর পিটার শার্প আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন।’’  
সুকোমল এক লহমায় কেমন যেন আনমনা হয়ে গেল। 
দু’জনে দু’জনের ফোন নম্বর, ইমেল আইডি ইত্যাদি একে অপরকে দিল। সুকোমলের মনটা কিন্তু কেমন যেন পড়েছিল ওই খবরটায়, ‘প্রফেসর নেই’। তারপর থেকে আর কিছুই ভাল লাগছিল না সুকোমলের। বাইরে বেরিয়ে একটা জায়গায় চুপ করে বসেছিল। তখন শীতের রোদ্দুর। সেই মিঠে রোদ্দুরে নানা রকম শীতের সাজে হেঁটে যাচ্ছিল ডেলিগেটরা। আকাশে কয়েকটা চিল পাক খাচ্ছিল সোনালি ডানা মেলে। এ সব কিছুই ওর মন ছুঁচ্ছিল না। হঠাৎ মনে পড়ে গেল প্রফেসরের কথাগুলো...। 
*
একটা শনিবার কাজ শেষের পরে প্রফেসর সুকোমলকে বললেন, ‘‘তুমি কি আমার ঘরে একবার আসতে পারবে? একসঙ্গে বসে একটু কফি খাব। তোমার সঙ্গে কতগুলো কথা ছিল।’’  
সুকোমল খুব অবাক হল। কাজের কথা তো সামনাসামনিও বলা যায় এবং চিরকাল তাই-ই হয়ে এসেছে। কী এমন কথা যেটা আলাদা করে বলতে হবে! কোনও ভাল খবর নাকি খারাপ? কাজ শেষ করে প্রফেসরের ঘরে গিয়ে হাজির হল সুকোমল। প্রফেসর ওকে বসতে বললেন।
‘‘আমি তোমাকে কফি বানিয়ে খাওয়ালে আপত্তি নেই তো?’’   
তারপর একটু করে চুপ করে থেকে বললেন, ‘‘তোমাকে কতগুলো কথা বলব বলে ভাবছিলাম অনেকদিন। যে কথাগুলো বলব সেগুলো ভাল লাগলে মনে রেখো। তা না হলে অন্য অনেক জিনিসের মতো ভুলে যেও।’’ 
সুকোমল খুব চিন্তিত হল। 
প্রফেসর বুঝতে পেরে বললেন, “রিল্যাক্স মাই বয়, এটা কোন ভয় পাওয়ার কথাই নয়। চাকরিটা নিয়ে তো নয়ই। বাই দ্য ওয়ে, কফিটা কেমন হয়েছে?’’
‘‘খুব ভাল। সত্যিই ভাল।’’
‘‘থ্যাংকস।’’
কফিতে এক চুমক দিয়ে বললেন, ‘‘প্রথম কথাটি হচ্ছে, নিজেকে এমন ভাবে অ্যাকাডেমিক্যালি তৈরি করবে যে যেকোনও আলোচনায়, মিটিংয়ে বা কনফারেন্সে তোমার নিজেকে যদি সবচেয়ে বড় মনে নাও হয়, কখনও যেন মনে না হয় যে সবচেয়ে ছোট। অর্থাৎ তুমি সব সময়ই এতটাই আপডেটেড থাকবে, যেন তৈরি। নিজের সাবজেক্টের যে কোনও ব্যাপারে কিছুটা অন্তত কথা বলার জন্য। তার জন্য সারা জীবন, লাগাতার সাবজেক্টের পড়াশোনা চালিয়ে যেও। তুমি এটা করো, আমি দেখেছি। এটা তোমার একটা বিশেষ সম্পদ, এটা চালিয়ে যেও।’’
সুকোমল মাথা নাড়িয়ে বলল, ‘‘চেষ্টা করব প্রফ।’’ প্রফেসরকে ছোট করে, আদর করে ‘প্রফ’ বলত ও।
‘‘কোনও পেশায় কেউ শুধু কাজ করে, আর কেউ কেউ কাজের সঙ্গে ভাবে। তোমার ‘ভাবা’র ক্ষমতা আছে। সেটা তুমি সেটা নিজে বোঝো কিনা আমি ঠিক জানি না। কিন্তু এটুকু মনে রেখো যে সবার এই ক্ষমতা নেই। এই ক্ষমতাকে লালন করবে নিজের মধ্যে।’’ 
‘‘তুমি জানো সারভ্যাইক্যাল ক্যানসারের উপর আমি বহুদিন ধরে গবেষণা করে চলেছি।’’ 
সুকোমল বলল, ‘হ্যাঁ, আমি জানি। আমরাই তো স্যাম্পল কালেকশন করছি।’’ 
‘হ্যাঁ, তুমি ঠিকই বলেছ। তবে একটা প্রশ্ন তোমাকে করতে চাই। তোমার কি মনে হয় যে সারভ্যাইকাল ক্যানসার কোনও ভাইরাস তৈরি করছে? তার মানে কোনও ভাইরাস কি এর মূল কারণ? হোয়াট ইজ ইয়োর গাট ফিলিংস?’’  
একটু চুপ থেকে সুকোমল বলল, ‘‘ঠিক বুঝতে পারি না। হলেও হতে পারে।’’ 
প্রফেসর বললেন, ‘‘আমার কোনও সন্দেহ নেই যে ভাইরাসই এই কাজটি করছে। কিন্তু আমি ঠিক বুঝতে পারছি না কোন ভাইরাসটা করছে? তুমি দ্বিধাগ্রস্ত, আমি কিন্তু নই। তুমি নিজের মনে ভেবে বলো তো তোমার কি মনে হয়, যে এটা এপস্টেন বার ভাইরাস নাকি অন্য কোনও ভাইরাস?’’
সুকোমল অদ্ভুতভাবে প্রফেসরের এই ছটফটানি বুঝতে পারছিল। কিন্তু এ ব্যাপারে এখনও ঠিক বলার মতো জায়গায় পৌঁছয়নি বলে বলল, ‘‘আমার মনে হয় না। কারণ তাহলে আমরা অনেক বেশি ভাইরাস পেতাম টিসুগুলোতে।’’ 
প্রফেসর বললেন, ‘‘ঠিক বলেছ তো। তাহলে কোনও ভাইরাস তোমার মাথায় ঘুরছে? তুমি কিন্তু একটু ভেবে দেখো। স্যাম্পেলগুলো তো রয়েইছে। আমরা কিন্তু সহজেই টেস্ট করতে পারব। তুমি কিন্তু এটাকে ছেড়ে দিও না। চিন্তা করে আমাকে বোলো।’’
আলোচনা শেষ হয়েছিল এভাবেই। তারপরে কয়েকটা মাস কেটে গিয়েছে কাজের চাপে। এ নিয়ে আর তেমন করে ভাবা হয়ে ওঠেনি সুকোমলের। দেখতে দেখতে ফিরে আসার সময় হয়ে আসছিল। প্রফেসরের সঙ্গে আর এব্যাপারে কোনও আলোচনাই হয়ে ওঠেনি।
*
২০০৯ সালের ৩ ডিসেম্বর কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে এক মিটিং। বাইরে শত শত লোক। সবাই প্রবেশপত্র পাননি। এক বিশেষ পরিচিতের কল্যাণে প্রবেশপত্র পেয়েছিল সুকোমল। বক্তব্য রাখবেন হেরাল্ড আর হাউসেন। নোবেল প্রাইজ় পেয়েছেন ফিজিওলজি বা মেডিসিনে ২০০৮ সালে। একে নোবেল প্রাইজ পাওয়া বিজ্ঞানী, তায় এক যুগান্তকারী আবিষ্কার। তিল ধারণের স্থান ছিল না প্রেক্ষাগৃহে। সোমনাথ নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেছিল এমন একটা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারার জন্য। একদম কাঁটায় কাঁটায় পাঁচটায় শুরু হল অনুষ্ঠান। প্রথমেই সংবর্ধনা দেওয়া হল। স্ট্যান্ডিং ওভেশন। গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল।
বলতে উঠে উনি যা বলতে শুরু করলেন তাতে হঠাৎ করে সুকোমল কোথায় যেন হারিয়ে গেল।
‘‘আসলে আমি যে ডাক্তারি পড়ব, সেটাই ভাবিনি। কী করে জানি না সেটাই হয়ে গেল। গাইনিকোলজি ভাল লাগতে শুরু করল। কিন্তু কাজের প্রচুর চাপ। জীবন সামলাতে পারছিলাম না। ছেড়ে দিলাম। একটু একটু করে জড়িয়ে পড়লাম গবেষণার দিকে। তারপর জার্মানি থেকে আমেরিকা, আবার জার্মানিতে ফিরে আসা। গবেষণা চলেছিল এপস্টেন বার ভাইরাস নিয়ে...’’ 
এপস্টেন বার ভাইরাস!
সুকল্যাণ নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিল না। ওর প্রফেসার তো এই ভাইরাসকে নিয়েই...।
‘‘তারপর প্রায় দশ বছর পর গবেষণার দিক পাল্টালাম। বেশ কয়েক বছর ক্যানসারের কারণ খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম। অনেক লোকই যেমন খোঁজেন তেমন করেই। অনেক লোকই ভাবছিলেন, ক্যানসার কি কোনও জীবাণুর কারণে হতে পারে? সুতরাং প্রশ্ন ছিল তিনটি। প্রথম প্রশ্ন, কোনও জীবাণুর কারণেই কি জরায়ুর মুখের বা সারভাইক্যাল ক্যানসার হয়? দ্বিতীয় প্রশ্ন, যদি হয়, তাহলে সেটা কি ব্যাকটেরিয়া, প্রোটোজোয়া, ফাংগাস নাকি ভাইরাসের কারণে? যদি ভাইরাসের কারণেই হয়, তাহলে কোন ভাইরাস? এই প্রশ্নগুলো শুধু আমার মাথাতেই ঘুরছিল তা নয়। সারা পৃথিবীতে বহু ঘুরছিলেন এই প্রশ্নের পিছনে। বিশেষ করে ষাটের দশক এবং সত্তরের দশকে।’’
‘প্রশ্ন’ কথাটা শুনেই সুকোমল আবার হারিয়ে গেল। ভীষণ করে মনে পড়তে শুরু করল প্রফেসরের কথা। প্রফেসর বলেছিলেন, ‘‘সত্যি কথা বলতে কী, একটা ভাল উত্তরের থেকে সারা জীবনে একটা ‘ভাল প্রশ্ন’ পাওয়া কিন্তু কম মূল্যবান নয়। হয়তো কখনও কখনও সঠিক উত্তরের চেয়ে অনেক বেশি দামি। কারণ তা এক অন্য দিগন্ত খুলে দিতে পারে। আবার মনে পড়ে সেই প্রশ্ন, ‘তোমার কী মনে হয়...।’’ 
ঠিক এই প্রশ্নগুলোই তো করেছিলেন। এখন বুঝতে পারে ‘প্রশ্ন করা’ সহজ নয়।  
তারপরে উনি বললেন, ‘‘হঠাৎ করে কেমন করে জানি না মনে এসেছিল হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের কথা। সহযোগীরা কাজ শুরু করলেন। এটা ওটা করে, কিছুটা পাওয়া যাচ্ছিল। তারপর এই ব্যাপারটা লেগে গেল। আপনারা হয়তো ভাবছেন এটা একটা সাংঘাতিক কিছু কাজ। কিন্তু আমার মনে হয় জাস্ট এটা ‘লেগে গিয়েছে’। জাস্ট আ চান্স ফ্যাক্টর। আমার ডেস্টিনি। তাই আজ আমি আপনাদের সামনে, পৃথিবীর সামনে।’’ 
হাততালির ঝড়। ভেসে আসছিল হাজারও প্রশংসা। 
খানিকটা ঘোরে ছিল সুকোমল। সবাই হল ছাড়তে শুরু করায় সংবিৎ ফিরল ওর। ভাবল হ্যাঁ সত্যিই তো ‘চান্স’। কত কাছে ছিল জিনিসটা। প্রফেসর এত করে উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন সকলকে। অনেক ভাবে বোঝাতে চেয়েছিলেন যে, তিনি একটা উত্তরের খুব কাছাকাছি। শুধু চান্স কাছে এল না। সময় এবং চান্স মানুষকে অনেক কিছুই পাইয়ে দেয়, আবার অনেক কিছু হারায়ও। এত কাছে এসেও প্রফেসর কিছুই পেলেন না। নোবেলটা অধরা রয়ে গেল!

Wednesday, December 9, 2020

 



সংস্কৃতি বলতে জীবনের সবকিছু বোঝায়,

আর আমাদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অনুমানসমূহ এবং ভাবনা ও অভ্যাস কেবল অন্যের দ্বারা কলকাঠি নাড়ার ফলাফল নয় । কিংবা তা প্রত্যক্ষ প্রশিক্ষণ নয়, যে, যখন ইচ্ছে থামিয়ে দেয়া চলে বা গুটিয়ে নেওয়া যায় । তা যদি হতো তাহলে সংস্কৃতিকে যেদিকে যেমন ইচ্ছে চালনা করা যেতো । ইরানের শাহ শত চেষ্টা করেও নিজের ইচ্ছেমতন চেহারা দিতে পারেননি সেদেশের সংস্কৃতিকে । আবার খোমেইনিও সফল হননি । সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত চাপের দরুন পাকিস্তান রাষ্ট্র ভেঙে দু’টুকরো হয়ে গেল । সোভিয়েত দেশও ভেঙে টুকরো-টুকরো হয়ে গেল এবং টুকরোগুলো নিজের সংস্কৃতিতে ফিরে গেল । যোগোস্লাভিয়া ছিৎরে গেল । অথচ চাপিয়ে দেয়া নান্দনিকতার রেশ থেকে সংস্কৃতিটির বিশুদ্ধ মুক্তি বেশ কঠিন, বলা যায় অসম্ভব — পদাবলী বা মঙ্গলকাব্যে আর ফেরা যায় না ।

একশো বছর আগে সুন্দরী বলতে যে দেহকাঠামো ও মুখাবয়ব অনুমোদিত ছিল, এখনকার সুন্দরীর সংজ্ঞা তা থেকে একেবারে আলাদা ।


ক্ষমতার অবয়ব ব্যতিরেকে কুৎসার প্রসার ঘটে না । কুৎসা সর্বদা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ।


Tuesday, December 8, 2020

 ডেল কার্নেগীর স্মরণীয় ১০টি উক্তি”

.
(১) যার কথার চেয়ে কাজের পরিমাণ বেশি, সাফল্য তার কাছেই এসে ধরা দেয়, কারণ যে নদী যত গভীর তার বয়ে যাওয়ার শব্দ ততো কম।
.
(২) মনে রাখবেন, আপনি কে বা আপনার কি আছে তার উপর আপনার সুখ নির্ভর করে না, আপনার সুখ নির্ভর করে আপনি কেমন চিন্তা করেন তার উপর।
.
(৩) যা আপনাকে পীড়া দেয়, এমন বিষয় নিয়ে এক মিনিটের বেশি ভাববেন না।
.
(৪) মানুষের গুণ নিয়ে প্রতিযোগিতা করুন দোষ নিয়ে নয়।
.
(৫) মনে রাখবেন আজকের দিনটি গতকাল আপনার কাছে আগামীকাল ছিল। যেটার কথা ভেবে গতকাল আপনি চিন্তিত ছিলেন আজ নয়।
.
(৬) আপনি ভাল মানুষ হলেই পুরো জগৎবাসী আপনার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করবে এমনটা আশা করা ঠিক নয়। আপনি নিরামিষভোজী হলে কি কোন ষাঁড় আপনাকে তাড়া করবে না?"
.
(৭) অস্পষ্টতায় ভরা দূরের কিছুর চেয়ে কাছের স্পষ্ট কিছু দেখাই আমাদের দরকার।
.
(৮) কি কাজ করতে চলেছেন সে সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকার অর্থ আপনি অন্ধকারের যাত্রী কোনো অন্ধের
মত।
.
(৯) মন্দ সহচর্যের চেয়ে নিঃসঙ্গতা অনেক ভালো।
.
(১০) মানুষ যখন রাগান্বিত অবস্থায়, তখন তাকে কোনভাবে বিরক্ত করা উচিত নয়। কেননা তা থেকে চরম ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হতে পারে।

Sunday, December 6, 2020

 

সত্যের দর্শন জেগে উঠুক আপন শক্তিতে

ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী

৬ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ | পড়া যাবে ৫ মিনিটে



সত্যের দর্শন জেগে উঠুক আপন শক্তিতে


সততা ক্রমেই অসত্যের চাপে কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। কথাটা মনে বিস্ময়ের সৃষ্টি করতে পারে; কিন্তু মিথ্যা নয়। সৎ ব্যক্তিরা অসৎ ব্যক্তিদের দ্বারা অসৎ প্রমাণিত হচ্ছে। আর অসত্রা নানা ধরনের কৌশল অবলম্বন করে নিজেদের সুরক্ষিত রাখছে। তাদের অসততা প্রমাণ করার মতো ক্ষেত্র কেউ তৈরি করতে পারছে না। অন্তর্নিহিত দর্শন দিয়ে বিষয়টির যৌক্তিকতা প্রমাণ করা যেতে পারে। তার পরও দর্শনের পেছনে দর্শন থাকে, ভাবনার বাইরে ভাবনা থাকে। কারণ পৃথিবীতে ধ্রুব সত্য বলে হয়তো কিছু নেই। সব কিছুই আপেক্ষিক। বাস্তব, কাল্পনিক কিংবা আপেক্ষিক—সব কিছু বাদ দিলেও এ কথা বলতে দ্বিধা নেই, সত্য প্রতিদিন মিথ্যার কাছে হার মানতে বাধ্য হচ্ছে। ক্রমাগত হারতে হারতে সত্য তার জীবনীশক্তি হারিয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছে। কিন্তু কেন?

এর অনেক কারণ ও তার ব্যাখ্যা আছে। মানুষ এখন মিথ্যাকে সত্য বলে মানতে শুরু করেছে। সত্যকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করছে। যেমন—একজন মানুষ যদি বলে ‘আমি মিথ্যাবাদী’। মানুষটি প্রকৃতই সত্য বলছে কি না মানুষ তা যাচাই করে দেখছে না। বরং সেটিকে সত্য বলে মেনে নিচ্ছে। আবার সে মানুষটি যখন নিজেকে সত্যবাদী বলে দাবি করছে, সবাই সেটাকে সত্য বলে মেনে নিচ্ছে। সেটাকে যাচাই করে দেখছে না। বিপরীত প্রতিক্রিয়াও দেখা যাচ্ছে। যেমন—লোকটা যখন নিজেকে মিথ্যাবাদী বলছে, মানুষ সেটাকে মিথ্যা হিসেবে মেনে নিচ্ছে। আবার মানুষটি যখন নিজেকে সত্যবাদী বলছে, মানুষ সেটিকে মিথ্যা হিসেবে দেখছে। মানুষে মানুষে পারস্পরিক ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির কারণে প্রকৃত সত্য তার গতিপথ হারাচ্ছে।

একটা চোর ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতর হয়ে চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ল। সবাই চোরটাকে বলছে তুমি চুরি করেছ। কিন্তু চোরটা কিছুতেই সেটি মানতে রাজি নয়। সে বলছে, আমি আমার ক্ষুধা নিবৃত্ত করার জন্য এসেছি। সে বলছে, আমি ক্ষুধার্ত, আমি চোর নই। আর অন্যেরা বলছে, তুমি চোর, চুরি করতে এসেছ। এখানে কে সত্য কথা বলছে, কে মিথ্যা কথা বলছে, তা গভীর দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়া উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। যদি ধরে নিই, লোকটা চোর ছিল এটি মুখ্য বিষয় হয়, তাহলে লোকটা যে ক্ষুধার্ত ছিল এটি গৌণ হয়ে যাবে। অন্যভাবে যদি বলা হয় লোকটি ক্ষুধার্ত ছিল, তখন লোকটির মৌলিক চাহিদা গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হবে, আর চোর বিষয়টি গৌণ হয়ে যাবে।

এখন প্রকৃত সমাজসংস্কারক নেই। গভীর চিন্তাশীলতার কদর নেই। দর্শন ও মনস্তত্ত্বের কোনো স্থান নেই। বিষয়টিকে আরেকভাবে ভাবা যায়। দর্শন তত্ত্বটা খানিকটা ভিন্ন। আগের চোরটা ছিল অশিক্ষিত। এখন শিক্ষিত একজন মানুষের কথা ভাবা যেতে পারে। স্যুট-প্যান্ট পরা, জুতাটাও মহামূল্যবান। হাতের ঘড়িটা দুর্লভ। হাতে দুলছে প্রযুক্তির সবচেয়ে আধুনিকতম মোবাইল ফোন। গাড়ির সংখ্যাও কম নয়। যে গাড়িটা হাঁকিয়ে বেড়ান সেটা পৃথিবীর দু-চারজনের থাকতে পারে। সম্পদ আর সম্পদ। প্রাচুর্যের শেষ নেই। লোকটা সরকারি চাকরিজীবী। লোকটার চাকরির আগে কিছুই ছিল না। হঠাৎ করেই লোকটা সম্পদশালী হয়ে উঠেছে। লোকটার যত অর্থ-সম্পদ বেড়েছে, সমাজে লোকটার তত কদর বেড়েছে। লোকটা সরকারি চাকরি করে এত অর্থ পেল কোথায়—কারো কোনো প্রশ্ন নেই। বোঝার চেষ্টা নেই। তাহলে কি মানুষ অবৈধতাকে বৈধতা হিসেবে দেখছে।

মানুষ যখন অর্থের পরিমাণ দিয়ে মানুষকে বিচার করে তখন একধরনের আবরণ মানুষের মনস্তত্ত্বে তৈরি হয়। দর্শন যৌক্তিকতাকে হারায়। ধরা যাক লোকটা দুর্নীতিবাজ। চোরটা অশিক্ষিত ছিল আর দুর্নীতিবাজ লোকটা শিক্ষিত ছিল। শিক্ষা তবে কি মানুষকে বেশি দুর্নীতিবাজ বানায়। যদি সেটাই হয়, তবে শিক্ষার কোনো একটা জায়গায় ঘাটতি আছে। সেটা বের করা দরকার। চোরটা গণপিটুনিতে মরেছে আর দুর্নীতিবাজ লোকটার খুব বেশি হলে জেল-জরিমানা হতে পারে। চোরটা বিচার পায়নি, দুর্নীতিবাজ লোকটা বিচার পাবে। আইনের অনেক ফাঁকফোকরও পাবে। কে বেশি দোষী ছিল—চোরটা নাকি দুর্নীতিবাজটা। যদি ধরে নেওয়া যায় চোরটা দোষী কম ছিল কিন্তু চরম শাস্তি পেল। আর দুর্নীতিবাজ লোকটা দোষ বেশি করে কম শাস্তি পেতে পারে। আবার শাস্তি না-ও হতে পারে। এখানে আইনের ও মানসিকতার কোথাও একটা অপূর্ণতা আছে, যেটা খুঁজে দেখা দরকার। আরেকটা দর্শনগত ধারণা ভাবা যেতে পারে। হয়তো সেটা বাস্তব। যেমন—কোনো একটা প্রতিষ্ঠানে একটা মানুষ সততার সঙ্গে কাজ করতে চায়। যদি ধরে নিই সেই প্রতিষ্ঠানের সবাই দুর্নীতিবাজ, তাহলে ওই একটা লোক কি তাদের সঙ্গে পেরে উঠবে। লোকটা কি তার সততা ধরে রাখতে পারবে। লোকটাকে কোনো একটা কাল্পনিক দুর্নীতিতে জড়িয়ে দোষারোপ করা হলে লোকটা একা যতই বলুক সে সত্যবাদী। যারা দুর্নীতিবাজ ও সংখ্যায় বেশি তারা কি তাকে সত্যবাদী বলবে। কখনোই না। বরং সেলাকটা মন্দ লোকদের সাক্ষ্য-প্রমাণে অসৎ হবে, আর অসৎ লোকেরা মন্দ করেও সৎ থাকবে। ঠিক উল্টো ঘটনাটা আমরা চাই। সেটা কিভাবে সম্ভব তা ভেবে দেখা দরকার। হুমায়ুন আজাদ জীবনের গভীর উপলব্ধি থেকে বলছেন, এখানে অসৎ লোকেরা জনপ্রিয়, সৎ মানুষেরা আক্রান্ত। এই ভাবনার পরিবর্তন ঘটুক। সততার শক্তি জেগে উঠুক আপন শক্তিতে। কেননা সত্যই সৃষ্টি। সৃষ্টি যেখানে দাঁড়ায় সেখানেই নতুন সভ্যতা গড়ে ওঠে।

লেখক : অধ্যাপক, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর

Saturday, December 5, 2020

 

আজকের ভাবনা

৫/১২/২০২০

কিয়াক টা অব স্থা



আজ একজন মেয়ে আসছে দেশ থেকে, যার টেলিফোনে বিয়ে হয়েছে, জাপানে  ওর হাজবেন্ড এর বাড়ীতে আসতে আসতে রাত ১০টা ১১টা বাজবে, তখন আবার মুসলিম রীতি তে বিয়ে পড়ান হবে। তারপর জাঁকজমক ভাবে বিয়ের অনুষ্ঠান হবে কিছুদিন পর।

আসলে আমরা পড়েছি মহা ফাঁপড়ে কারণ 

আজকে উপহার নিয়ে যাব, না যেদিন আসল

অনুষ্ঠান হবে, সেদিন নিয়ে যাব। আজকে নিয়ে গেলে আবার অন্যদিন ও নিতে হবে।

এখানে শুধু ফুলের ও অনেক দাম, যা দিয়ে ভাল একটা উপ হার হয়ে যায়। আবার আমরা নিয়ে গেলাম কিন্তু অন্যরা আনল না, তখন আবার ক থা হবে। স বচেয়ে মজার ব্যাপার হল, এদের কে আমরা চিনি না। একজন প রিচিত আমাদের স ঙ্গে ক রে নিয়ে যাচ্ছে।

কিয়াক টা অব স্থা ??


Friday, December 4, 2020

 


 

ইনস্ট্যান্ট ফর্সা ত্বক পেতে কফি



ত্বককে ইনস্ট্যান্ট ফর্সা করতে কফি অনেক কার্যকরী; যে কোন ধরনেই কফি দিয়েই তা এই কাজ টি করা সম্ভব। প্রধানত দুই পদ্ধতিতে কফি কে চেহারায় ব্যাবহার করা যেতে পারে।

পদ্ধতি ১: এক চামচ কফি পাউডারের সাথে হাফ চামচ পানি (পানির পরিবর্তে তরল দুধ ব্যাবহার করা যেতে পারে) দিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিতে হবে। মিশ্রণটি অন্তত পাঁচ মিনিট মুখে ম্যাসাজ করতে হবে। তারপর কুশুম গরম পানি দিয়ে মুখটিকে ধুয়ে নিতে হবে।

পদ্ধতি ২: এ পদ্ধতিটি যাদের মুখের ত্বক অনেক বেশি রুক্ষ তাদের জন্য অনেক বেশি কার্যকর।

এক চামচ কফি পাউডার, এক চামচ দানাদার চিনি, হাফ চামচ তরল দুধ এবং এক স্লাইস লেবুর রস দিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নীটে হবে। খেয়াল রাখতে হবে মিশ্রণটি জেনো খুব বেশী পাতলা হয়ে না যায়; যদি খুব বেশী পাতলা হয়ে যায় তাহলে অবশ্যই অল্প করে কফি পাউডার যোগ করতে হবে। মিশ্রণটি স্ক্রাবের মত মুখে কমপক্ষে পাঁচ থেকে সাত মিনিট ম্যাসাজ করতে হবে।

তবে অবশ্যই ভালো ফলাফলের জন্য স্ক্রাব গুলো সপ্তাহে অন্তত দুই থেকে তিন বার ব্যাবহার করতে হবে। আর অবশ্যই ত্বকের যত্নে স্ক্রাবের মত কাজ গুলো রাতেই কোড়া ভালো, অতঃপর মুখের উপযুক্ত কোন ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিতে হবে।

 

ভাস্কর্য থাকবে নাকি থাকবে না?

তসলিমা নাসরিন

গড় রেটিং: 4.3/5 (7 টি ভোট গৃহিত হয়েছে)

ভাস্কর্য থাকবে নাকি থাকবে না?

বাংলাদেশে হঠাৎ ভাস্কর্য পতনের আন্দোলন হচ্ছে কেন? আসলেই কি এ আন্দোলন ভাস্কর্য পতনের আন্দোলন নাকি সরকার পতনের আন্দোলন? দুধকলা দিয়ে কালসাপ পুষলে একদিন সেই কালসাপ তোমাকে ছোবল দেবে- সেটির চমৎকার প্রমাণ আমরা দেখতে পাচ্ছি।

সব মুসলিম দেশেই ভাস্কর্য আছে। বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়ার ভাস্কর্য নিয়ে কোনো মুসলিমের সমস্যা হচ্ছে না। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম জনগোষ্ঠীর অর্থাৎ ভারতের মুসলিমদেরও কোনো ভাস্কর্য নিয়ে সমস্যা হচ্ছে না। ইরান, সৌদি আরব, পাকিস্তান ইত্যাদি কট্টর মুসলিম দেশেও ভাস্কর্য নিয়ে সমস্যা হচ্ছে না। মিসরে প্রাক-ইসলাম যুগের মূর্তিপূজকদের স্ফিংস আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে, এ নিয়েও মিসরের কোনো মুসলিমের সমস্যা হচ্ছে না। শুধু বাংলাদেশের মুসলিমদের সমস্যা হচ্ছে। ভাস্কর্য নিয়ে কিন্তু জিহাদি জঙ্গি গোষ্ঠী আইসিসদের সমস্যা হতো, তাহলে কি বাংলাদেশে যারা ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার দাবি করছে, তারা আইসিস-মানসিকতার? তালিবানি মানসিকতার? তালিবানরা আফগানিস্তানের বিখ্যাত বামিয়ান বুদ্ধকে উপড়ে ফেলেছে। মেসোপটেমিয়ার প্রাচীন ভাস্কর্যগুলো হাজার বছর ধরে ছিল, আইসিসরা গুঁড়ো করে দেওয়ার আগ পর্যন্ত। বাংলাদেশের মোল্লারা হুমকি দিয়েছে, রাস্তায় রাস্তায় লাশ পড়বে, রক্তে ভেসে যাবে রাজপথ যদি কোনো ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়। তারা যে ব্যানারেই আজ বাংলাদেশে হুমকি দিক না কেন, তাদের হুমকি পক্ষান্তরে জঙ্গি-আইসিসের হুমকি ছাড়া অন্য কিছু নয়। গুলশানে হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর শেখ হাসিনা-সরকার যেভাবে বাংলাদেশ থেকে জঙ্গি নির্মূলের উদ্যোগ নিয়েছিলেন, সেভাবে ফের জঙ্গি নির্মূলের, সেই কালসাপ নিধনের সময় এসেছে। এদের আস্ফালন না কমাতে পারলে দেশকে আসলেই এরা রক্তে ভাসিয়ে দেবে, লাশের পর লাশ ফেলবে, গুলশান হোলি আর্টিজানের চিত্র হয়ে উঠবে গোটা বাংলাদেশের চিত্র।

একের পর এক এদের অন্যায় দাবি মেনে নিয়ে এদের মাথায় চড়িয়েছে সরকার, আর সেই ফল আজ ভোগ করছে গোটা বাংলাদেশ। আমি নিশ্চিত, সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে থেমেসের ভাস্কর্যটি যদি সেদিন মোল্লাদের দাবির কারণে না সরাতো, তাহলে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে আজ কোনো সমস্যা হতো না। দুষ্ট লোকের দাবি, বিশেষ করে গণতন্ত্রবিরোধীদের দাবি কখনও মেনে নিতে হয় না। এই মোল্লাগুলো এমন ভাব করছে যেন ইসলাম ধর্মটি তাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি, যেন তাদের ইসলামের দূত বানিয়ে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে। দিনরাত এই লোকগুলো শেরেক করছে। এক ওয়াজ ব্যবসায়ী তো বলে বসল, ‘অমুক মার্কায় ভোট দেওয়া মানে আল্লাহ আর আল্লাহর নবীকে ভোট দেওয়া’! আরেকজন বলল, ‘মামুনুল হককে অপমান করা মানে আল্লাহকে অপমান করা, আল্লাহর নবীকে অপমান করা’! এদের ওয়াজে এদের ভাষণে এদের কীর্তিকলাপে এরাই কিন্তু আসলে নিরবধি ইসলামের অবমাননা করে চলেছে। এই কালসাপদের ভয় পাওয়ার কিচ্ছু নেই, এই অপশক্তিকে নির্মূল করাই দেশ বাঁচানোর, এমনকি ইসলাম বাঁচানোর একমাত্র উপায়। এদের হাতে দেশ বা ইসলাম কোনোটি গেলে দুটোরই সর্বনাশ এরা করে ছাড়বে।
বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্মের, বিভিন্ন বিশ্বাসের মানুষ বাস করে। হিন্দু হলেও সব হিন্দুর বিশ্বাস এক রকম নয়। একই রকম মুসলমান হলেও সব মুসলমানের চিন্তা এক রকম নয়। কেউ উদার, কেউ কট্টর, কেউ আরবের পোশাক পরে, কেউ দেশি পোশাক পরে, কেউ বোরখা পরে, কেউ হিজাব পরে, কেউ আবার বোরখা হিজাব কিছুই পরে না, কেউ পাঁচ বেলা নামাজ পড়ে, কেউ আবার নিয়মিত নামাজ পড়ে না, - কিন্তু তারা সবাই মুসলমান। কট্টর বা উগ্রবাদীদের ইসলামই সত্যিকারের ইসলাম, সেটিই সবাইকে পালন করতে হবে, এই ধারণা ভুল। কট্টরপন্থিরাই বেহেস্তে যাবে, অন্যরা সবাই দোযখে যাবে, এই ধারণাও ভুল। শেষ বিচারের দিনে, যদি সেরকম কোনো অলৌকিক বিচার ব্যবস্থা থেকে থাকে, তবে শেষ বিচারের মালিকই বিচার করবেন। বিচারে তিনি নামাজ রোজা আর জিহাদকে মূল্য দেবেন বেশি, নাকি সততা এবং উদারতাকে মূল্য দেবেন, তা তিনিই জানেন। বাংলাদেশের মুসলমানরা অন্যের ক্ষতি না ক’রে, অন্যের অধিকার লংঘন না করে, যে যার বিশ্বাস নিয়ে থাকলে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

এক সময় কত মানুষের কত বিশ্বাস নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে, গোপনে গোপনে সেই বিশ্বাসকে তাদের জিইয়ে রাখতে হয়েছে! পরিস্থিতির ভিত্তিতে পৃথিবীর সব ধর্ম-পালনে পরিবর্তন এসেছে। বহুঈশ্বরবাদী ধর্মের রমরমা অবস্থার মধ্যে একদা একেশ্বরবাদী ধর্মের প্রবর্তন হয়েছিল। ইহুদি এবং খ্রিস্টানদের বাইবেলেও বহুঈশ্বরবাদী মূর্তিপূজকদের বিরুদ্ধে লেখা হয়েছে। ধর্ম প্রতিষ্ঠার স্বার্থে প্রতিকূল পরিবেশে ধর্ম প্রচারকরা মূর্তিপূজকদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার প্রস্তাব করেছিলেন। পরবর্তীকালে অনুকূল অবস্থায় সেই ধর্মের অনুসারীরা ধর্ম প্রচারকদের সেই আদি প্রস্তাব মানেনি। এতে ধর্মের কোনো অপমান হয়নি, বরং অপমান থেকে ধর্ম রক্ষা পেয়েছে। আজ তো কোনো ইহুদি বা খ্রিস্টান মূর্তি ভেঙে দিতে হাতুড়ি শাবল হাতে নেবে না। তবে মুসলিমদের মধ্যে কেন এই প্রবণতা? সাধারণ মুসলিমদের মধ্যে নয়, কট্টরদের মধ্যেই সাধারণত এই প্রবণতা দেখা যায়, কিন্তু কট্টররাই বা কেন হাতুড়ি শাবল নেয় বা নিতে চায়? এর উত্তর খুব সহজ। তারা ধর্মকে আর ধর্ম হিসেবে দেখতে চায় না, তারা একে রাজনীতি হিসেবে দেখে। তারা দেশ নয় শুধু, তারা ধর্ম দিয়ে বিশ্ব শাসন করতে চায়। তাদের এই লেলিহান বাসনা অনেক সময় তাদেরই পুড়িয়ে ছাই করে।

মক্কার মূর্তিপূজকদের মূর্তি ভাঙার নির্দেশ দিয়েছিলেন ইসলামের নবী। ইসলামের প্রতিষ্ঠার জন্য তা তখন তিনি জরুরি মনে করেছিলেন। কিন্তু ইসলাম আজ প্রতিষ্ঠিত। পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম আজ ইসলাম। যে অবস্থায় মূর্তি ভাঙা হয়েছিল, সেই অবস্থাটি বর্তমান বিশ্বে নেই। তাই কোনো মুসলিম দেশেই মূর্তিপূজা নিয়ে কোনো সমস্যা হয় না। এ ক্ষেত্রে গণতন্ত্রের প্রয়োজনে ইসলামের এই উপদেশটিই মেনে চলতে হয় ‘যার যার ধর্ম তার তার কাছে, ইসলামে কোনো জবরদস্তি নেই’।

বাংলাদেশের মাদ্রাসা-পাস মোল্লারা ঘোষণা দিয়েছে তাদের দৌড় আর মসজিদ পর্যন্ত নয়, তাদের দৌড় পার্লামেন্ট পর্যন্ত। এ বিরাট হুমকি বটে। তারা আজ দেশ শাসনের স্বপ্ন দেখছে। কী যোগ্যতা তাদের আছে দেশ শাসন করার? গণতন্ত্র সম্পর্কে যাদের কোনো ধারণাই নেই, তারা কী করে দেশ শাসন করবে। মোল্লাতন্ত্র বা জিহাদি আদর্শ দিয়ে দেশ শাসন এই একবিংশ শতাব্দীতে চলবে না। সে কারণেই আইসিসকে সারা বিশ্ব মিলে নির্মূল করেছে। পৃথিবীটা বাংলাদেশ নয়। পৃথিবীর একটি ক্ষুদ্র অংশ বাংলাদেশ। এই পৃথিবীকে চলমান রাখার পেছনে, সভ্য এবং শিক্ষিত করার পেছনে সব দেশের সব ধর্মের সব সংস্কৃতির সব রকম বিশ্বাসের মানুষের অবদান আছে। সবাইকে অস্বীকার করে শুধু নিজের ধর্ম এবং সংস্কৃতিকে শ্রেষ্ঠ মনে করে, আমিই বেহেস্তে যাব, বাকিরা নরকে যাবে, এই মানসিকতা নিয়ে বেশি দূর এগোনো যায় না। সবার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন, সবার অধিকারকে, এমনকি বিধর্মী ও নাস্তিকের অধিকারকে মর্যাদা দেওয়া গণতন্ত্রের আদর্শ। এই আদর্শকে অস্বীকার করলে বিশ্বে কোনো স্থান নেই।

কাবার কালো পাথরকে মুসলমানরা চুমু খেয়ে বা একটু স্পর্শ করে ধন্য হয়, বিশ্বাস করে এতে তাদের মঙ্গল হয়, পাথরই শুষে নেয় তাদের পাপ, তারা পাপমুক্ত হয়। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা উমর ইবনে আল-খাত্তাব সেই কালো পাথরকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, ‘আমি জানি তুমি একটা পাথর, তুমি মানুষের অপকারও করতে পার না, উপকারও করতে পার না, যদি আমি নবীকে না দেখতাম তোমাকে চুম্বন করতে, তাহলে আমিও তোমাকে চুম্বন করতাম না।’ তাহলে জিনিসটা ভাস্কর্য, বা মূর্তি বা পাথর সেটা বিষয় নয়, বিষয় হলো মুসলমানের মনন। তাহলে যাদের কাছে এখন ভাস্কর্য, মূর্তি বা পাথর বিষয় হয়ে উঠছে, তাদের কাছে নিশ্চিতই মননের মূল্য নষ্ট হচ্ছে।

ইসলাম ধর্মটিকে ধর্ম হিসেবে রাখার দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকে। রাজনীতির সঙ্গে ধর্ম মেলালে, বা ধর্মের সঙ্গে রাজনীতি মেলালে তার পরিণাম কখনও শুভ হয় না। কারণ এর ফলে মন্ত্রী হয়ে যায় মোল্লা, আর মোল্লা হয়ে যায় মন্ত্রী।

বাংলাদেশে আদিকাল থেকে ভাস্কর্য আর মূর্তি দুই-ই ছিল। আইসিস-মানসিকতার ঠাঁই বাংলাদেশে হলে শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা উপমহাদেশেরই অকল্যাণ। আমি প্রচলিত ধর্মে নয়, মানববাদে বিশ্বাস করা মানুষ। আমি পুজো করি না, কারও পায়ে মাথাও ঠেকাই না। কিন্তু আমি বাংলাদেশের লালনের পাদদেশে ফুল দেবো, কারণ লালনের জাতপাতের বিরুদ্ধে লেখা মানবতার পক্ষে লেখা গানগুলোকে আমি মহান বলে মনে করি। এর মানে এই নয় তাঁকে আমি পুজো করছি, এর মানে এই - তাঁকে আমি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করছি। আমি শহিদ বেদিতে, স্মৃতিসৌধের বেদিতে ফুল দেব। যুগে যুগে আমরা ফুল অর্পণ করেই শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে আসছি। উপমহাদেশের সুফি-সাধকদের মাজারে মোমবাতি দিয়েও মানুষ যুগে যুগে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে আসছে। যুগে যুগে নমস্যদের পায়ের ধুলো মাথায় নিয়ে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে আসছে। ভারতীয় উপমহাদেশের ইসলাম পালন আর আরব দেশের ইসলাম পালনে ভিন্নতা তো থাকবেই। এই ভিন্নতা যারা বোঝে না, তারা ইতিহাস বোঝে না।

শেষ কথা, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য শেখ হাসিনাকে স্থাপন করতেই হবে, এতেই যদি এতদিন কালসাপ পোষার দায়মুক্তি ঘটে তাঁর।

লেখক : নির্বাসিত লেখিকা