Thursday, March 13, 2025

 বাংলাদেশ এখন একটি যৌনঅবদমিত রাষ্ট্র

আহসান হাবীব

বাংলাদেশ এখন একটি যৌনঅবদমিত রাষ্ট্র। এর প্রতিটি সদস্য বিশেষত পুরুষগণ সকলেই ভীষণভাবে যৌনতাড়িত।
এদের অবদমিত যৌনতা চেগে ওঠে যখন তারা কোন নারী দেখে। একমাত্র নারীই হচ্ছে তাদের যৌনবস্তু (Sex object)। বস্তুটি যে পোশাকই পরিধান করুক, এরা তাদের যৌন অভীপ্সা চেপে রাখতে পারে না, ফুঁসে ওঠে। ফলে দেখা মাত্র তারা নারীর প্রতি ঝাঁপিয়ে পড়ে। কেউ অশ্লীল শব্দ ছুঁড়ে মারে, কেউ শ্লীলতাহানি করে, কেউ ধর্ষণ করে।
এসব এখন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পুরুষদের নায্য অধিকার।
একটি সম্পূর্ণ রাষ্ট্র কিভাবে যৌনঅবদমিত হয়ে পড়ে, বাংলাদেশকে না দেখলে বোঝা যাবে না। কেননা এখানে যারা নারীর উপর যৌনসহিংসতা করে, তারা রাষ্ট্রের চোখে এক একটা বীর। যে সমস্ত নারী তাদের চোখের সামনে যে কোন পোশাকে হেঁটে যাক, পুরুষগণ তা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে এবং তাকে তার ইচ্ছামত পোশাকে চলাফেরা করার জন্য বাধ্য করবে। তাদের আপাত পছন্দের পোশাক হচ্ছে বোরখা। যদিও আধুনিক বোরখাও একটি ফ্যাশনদুরস্ত পোশাক হয়ে উঠেছে।
যৌনতার উপর সবচাইতে কে বেশি আধিপত্য খাটায়, নিয়ন্ত্রণ করে?
রাষ্ট্র এবং ধর্ম।
এখন কোন রাষ্ট্র যদি নিজেই ধর্ম হয়ে ওঠে, তাহলে তা সোনায়সোহাগা। বাংলাদেশ এখন একটি আগাপাছতলা ধর্মরাষ্ট্র। সূতরাং যৌনতার উপর তার নিয়ন্ত্রণ ষোলআনা। আর যৌনতা মানেই নারীর উপর পুরুষের নিরঙ্কুশ আধিপত্য।
আধিপত্য থাকলেও কেন অবদমন?
কারন, যৌনতার প্রতি রয়েছে বিশেষ বিধিনিষেধ। পাপ এবং পূণ্যের একটি মানদণ্ড হচ্ছে যৌনতা। ধর্মে এবিষয়ে যে বিধিবিধান আছে, তার ব্যতয় ঘটলে পাপ হবে এবং তার শাস্তি নরকযাপন। নরক যেহেতু একটি কঠিন শাস্তির জায়গা, তাই তার উপর ভর করে ভয়, ফলে যৌনতার যে স্বাভাবিক ব্যবহার তার উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে হয়। এই স্বনিয়ন্ত্রণ ঐ অবদমনের জন্য দায়ী। এটা গেলো ধর্মীয় দিক।
রাষ্ট্র যৌনতাকে নিয়ন্ত্রণ করে একদিকে জনসংখ্যাকে তাদের ইচ্ছামত সংখ্যায় বেধে রাখতে এবং শ্রমবাজারকে চলমান রাখতে। একটা দেশের উৎপাদনব্যবস্থা এবং শ্রমশক্তি ঘনিষ্ঠভাবে একে অপরের উপর নির্ভরশীল। যে দেশে জন্মহার বেশি, সেখানে বাচ্চা নেয়ার সংখ্যা বেধে দেয়া হয় আবার যে সব দেশে জন্মহার কম, তাদের বাচ্চা নেয়ার কোন বিধিনিষেধ থাকে না। এসব দেশ যখন শ্রমশক্তির অভাবে ভুগে, তখন তারা অধিক জনসংখ্যার দেশ থেকে শ্রমিক নেয় এবং তাদের উৎপাদন ঠিক রাখার চেষ্টা করে।
বাংলাদেশে মানবসম্পদ একটি অর্থনৈতিক টুলস, তারা বিদেশে এদের রফতানি করে। তাই দেখা যায় বাচ্চা নেয়ার সংখ্যাই এখন আর কোন বিধিনিষেধ নাই। অর্থাৎ তার সুবিধামত যৌনতার উপর বিধিনিষেধ আরোপ করে।
ফলে বাংলাদেশ উভয় দিক দিয়ে যৌনঅবদমিত। এই অবদমনের নিরঙ্কুশ পেটেন্ট হচ্ছে পুরুষ। কারণ নারীরা কেবল শস্যক্ষেত্র, এর চাষী হচ্ছে পুরুষগণ। কখন তারা বীজ বুনবে কিংবা বুনবে না, এটা তাদের ইচ্ছার ব্যাপার। তবে তাদের স্বাভাবিক ইচ্ছার বিরুদ্ধে খাড়া থাকে পাপপুণ্যের দণ্ড। ফলে তারা ভয়ে যৌনঅবদমিত হয়ে পড়ে।
বাংলাদেশ এখন যৌনঅবদনজনিত নিপীড়নের এক অপরূপ অভয়ারণ্য।

No comments:

Post a Comment