Friday, March 28, 2025

রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে প্রোপাগান্ডা

 

রবীন্দ্রনাথকে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠি যতটা ঘৃণা করত,ততটাই ঘৃণা করে আল বটর বাহিনী এবং এক শ্রেণির উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠি।

রবীন্দ্রনাথ আমার জানামতে কখনো ইসলাম ধর্মকে সরাসরি আক্রমণ করেনি৷ রবীন্দ্রনাথ বঙ্গভঙ্গকে মনে করতেন ব্রিটিশদের 'ডিভাইড এন্ড র্যুল' পলিসি,যেখানে রবীন্দ্রনাথ চাননি ধর্মের নাম দিয়ে দেশ ভাগ হোক,তিনি হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের কথা বলতেন যার কারণে সেসময়ে তার নেতৃত্বে হিন্দু মুসলিমদের মধ্যে রাখী পরানো হয়।
রবীন্দ্রনাথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধীতা করেছিলেন এমন কোন অখাট্য দলিল ও নেই। উলটো ইতিহাস বলে রবীন্দ্রনাথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধীতা নয়,বরঞ্চ তিনি বিরোধী ছিলেন কিভাবে/কোন প্রসেসে ঢাবি প্রতিষ্ঠিত হবে সেবিষয়ে।
ব্রিটিশরা ধর্মের আড়ালে ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ করে যা ১৯১১ সালে ব্যর্থ হয়। ব্রিটিশ সরকার মুসলিমদের খুশী করতে উদ্যোগ নেয় ঢাবি প্রতিষ্ঠার কিন্তু, এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য ঢাকা ও পূর্ববঙ্গের জনগণের কাছ থেকে 'চাঁদা' ও জমিদারদের কাছ থেকে 'অনুদান' আদায় করা হয়। মূলত ঢাকা কলেজ ও জগন্নাথ কলেজের জমিদারি তহবিলের অর্থ ব্যবহার করা হয়, যা নিয়ে রবীন্দ্রনাথ আপত্তি করেছিলেন।
রবীন্দ্রনাথ এক চিঠিতে লিখেছিলেন
> "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যে অর্থ নেওয়া হচ্ছে, তা যদি প্রকৃতপক্ষে শিক্ষার কল্যাণে ব্যয় হয়, তবে আমি তাতে আপত্তি করব না। কিন্তু, এটি জনগণের ওপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা অনৈতিক।"
অর্থাৎ,রবীন্দ্রনাথ চেয়েছিলেন ঢাবির জন্য তহবিল সরাসরি ব্রিটিশ সরকার দিক। কিন্তু আল বটর বাহিনী এই তথ্যকে সম্পূর্ণ আড়াল করে মানুষকে বুঝাল রবি ঠাকুর ঢাবির বিরোধী ছিলেন!
উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা আওরঙ্গজেবকে নিয়ে যেমন প্রোপাগান্ডা চালায় তেমনি এদেশের আল বটর গোষ্টি পাকিস্তানিদের ভাষাতেই রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে তেমন ই প্রোপাগান্ডা চালাতে থাকে যুগ যুগ ধরে।
ধর্মীয়ভাবে বিতর্কিত হতে পারে এমন অনেক লেখাই লিখেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। নিজের পুত্রদের নামের সাথেও তিনি হিন্দুয়ানী নাম জুড়ে দেন কিন্তু এদেশের মানুষ আর আল বটর ভালোবাসে কাজী নজরুল ইসলাম কে। কোনভাবে রবীন্দ্রনাথের নাম যদি মোহাম্মদ অমুক তমুক হত তাহলে এই উগ্র ইসলামপন্থীরা তাকেও ভালোবাসত।
মূলত রবীন্দ্রনাথ নজরুল বাংলার দুই মহীরূহ যারা আজীবন মানবতার জয়গান গেয়েছেন,ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে বলেছেন,হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের কথা বলেছেন,বলেছেন মানবতা-সাম্য আর একতার কথা। এই মহাপুরুষেরা সমৃদ্ধ করেছেন আমাদের প্রিয় মাতৃভাষা বাংলাকে,করেছেন এই ভাষার ভিত্তি মজবুত।
স্বাভাবিকভাবেই,উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্টি আর আল বটর মেনে নিতে পারেনি সনজীদা খাতুনের শেষবিদায়ে রবীন্দ্রনাথের আগমণ।

No comments:

Post a Comment