Friday, March 21, 2025

 

বাংলাদেশের পরিণতি ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনের মতো হতে পারে।


ফিলিস্তিনকে আমি ভূখণ্ড হিশেবে দেখি না। প্যাটার্ন হিশেবে দেখি। বাংলাদেশের পরিণতি ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনের মতো হতে পারে। ফিলিস্তিন হওয়ার যাবতীয় লক্ষণ দেশটিতে আছে। আপনি হামাসের দিকে তাকান। হামাস ইসরায়েলের ‘রাইট টু এক্সিস্ট’ স্বীকার করে না। তারা বিশ্বাস করে, যেকোনো ইসরায়েলি নাগরিককে হ*ত্যা করা বৈধ। তাদের হাতে পরমাণু অস্ত্র থাকলে বহু আগেই তা ইসরায়েলের উপর প্রয়োগ করতো। এমনিতে ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষ শান্তিকামী। অনেকটা বাংলাদেশের সাধারণ কৃষক শ্রমিকের মতো। কিন্তু হামাস এরকম নয়। হামাসের সাথে বাংলাদেশের ফেসবুকী ইসলামপন্থীদের সাদৃশ্য আছে। হামাস যে-মনোভাব ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পোষণ করে, সে-মনোভাব বাঙালি ফেলামপন্থীরা ভারতের বিরুদ্ধে পোষণ করে। হামাসের কিছু আধাশিক্ষিত ধর্মবন্দী বুদ্ধিজীবী আছে, যাদের বুদ্ধিতে ক্লিনটনের ক্যাম্প-ডেভিড প্রোপোজাল ইয়াসির আরাফাত প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। ক্লিনটন বহু পরিশ্রমে ইসরায়েলকে সেটিতে রাজি করিয়েছিলেন। কিন্তু আরাফাতের হঠকারিতায় তা নস্যাৎ হয়। গাধা জল ঘোলা করে খায়। প্রত্যাখ্যানের ২ বছর পর আরাফাত বলেছিলেন, আমরা ক্যাম্প-ডেভিড প্রপোজালে রাজি। কিন্তু ততোদিনে ইসরায়েলে নতুন সরকার ক্ষমতায়। তারা জানিয়ে দেয়, আমরা আর ক্লিনটনের প্রপোজাল মানি না। ক্যাম্প-ডেভিডের চেয়ে ভালো সমাধান ফিলিস্তিনের সামনে আর আসে নি।

বাঙালি ফেলামপন্থীরা যেমন রাতদিন স্বপ্ন দেখে, একদিন ভারতীয়দের কচুকাটা করে ইন্ডিয়া দখল করবে, হামাসও তাই দেখে। এ অবস্থায় ইসরায়েল কী করবে? আপনি আমার ‘রাইট টু এক্সিস্ট’ স্বীকার না করলে আমি কী করবো? আপনি বাংলাদেশে বসে হামাসের জন্য দরদ দেখাচ্ছেন। কিন্তু খোদ ফিলিস্তিনের মানুষ হামাসের সাথে নেই। ফাতাহর সাথে তাদের রক্তারক্তি পুরোনো। এই অকল্পনীয় দুরবস্থার জন্য হামাস দায়ী, হামাসের হঠকারিতা দায়ী, এটা পুরো আরব বিশ্ব জানে। আরব বিশ্ব কী করবে? আরবরা ফিলিস্তিনের জন্য কম করে নি। যখনই সৌদি আরব বা দুবাই কোনো সমাধানের উদ্যোগ নেয়, তখনই ইরানের বুদ্ধিতে হামাস কিছু রকেট ছাড়ে। ছেড়ে এরা লুকায় হাসপাতালে, ইশকুলে, এবং বিপন্ন করে শিশুদের জীবন। নারীদের জীবন। হামাস ভালো করেই জানে, ইসরায়েল তাদেরকে টার্গেট করলে সিভিলিয়ান ক্যাজুয়াল্টি অনিবার্য। তারপরও বারবার তারা এ কাজ করে। বাঙালি ফেলামপন্থীদের হাতে আগামীকাল কিছু গোলাবারুদ তুলে দিন। পরশুই ভারতের উপর তা মেরে জনগণের ভেতর লোকাবে, এবং ভারত পাল্টা হামলা চালালে জীবন দিতে হবে জনগণকে।
আপনারা ফিলিস্তিনের জন্য উদ্বিগ্ন হচ্ছেন, ঠিক আছে, সারা বিশ্বই উদ্বিগ্ন, কিন্তু আপনার প্রিয় দেশ বাংলাদেশেও যে হামাস-মানসিকতার লোক বাড়ছে, এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়াটাও জরুরী। রক্ত দেবো, শহীদ হবো, জীবন দেবো, এ ধরণের লোক থেকে এখনই সাবধান না হলে, ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনের ভাগ্য বাংলাদেশকেও বরণ করতে হতে পারে।
অনেকে আরবদের মোনাফেক ডাকছেন, কারণ আরবরা তাদের বুদ্ধিতে ইসরায়েলের উপর হামলে পড়ছে না। হামলে পড়লে কী হয়, তা তো ৬৭ সালে দেখেছি। এতোগুলো মুসলিম রাষ্ট্র একসাথে হামলে চালিয়েও পুঁচকে ইসরায়েলের সাথে ৭ দিন টিকতে পারে নি। ইসরায়েল যে-ভূখণ্ড দখল করে রেখেছে, তার বড় অংশ ৬৭ সালে আরবদের পরাজিত করে দখল করেছিলো। যুদ্ধ, বোমা, বন্দুক, এগুলোর সামনে তো যুক্তি-তর্ক, দার্শনিক তত্ত্ব অকার্যকর। বাঙালি ফেলামপন্থীদের বুদ্ধিতে আরেকটি আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ হলে যে ইসরায়েল পুরো ফিলিস্তিন দখল করবে না, বা অন্যকোনো গুরুত্বপূর্ণ আরব অঞ্চল দখল করবে না, আণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে না, তার নিশ্চয়তা কী? হামাস ইরানের গুঁটি। ইরান হামাসের হয়ে যুদ্ধ করেনা কেন? জর্ডান, কাতার, দুবাই, সৌদি, তারা কেন করবে? যুদ্ধ তো বলপ্রয়োগের ব্যাপার। বলপ্রয়োগ মানেই দখল। ফিলিস্তিন সঙ্কটের সমাধান হোক, এ কামনা আন্তরিকভাবে করি। মানুষের দুর্দশা কোনো উপভোগ্য বিষয় নয়। কিন্তু বাংলাদেশকে যারা ফিলিস্তিন বানাতে চায়, তাদের ব্যাপারে এখনই সতর্ক হতে হবে।”
.
—মহিউদ্দিন মোহাম্মদ

No comments:

Post a Comment