Sunday, March 23, 2025

নিটশা যে বলেছিলেন, গড ইজ ডেড, কেন বলেছিলেন?

 


মানুষকে ধর্মশূন্য করা আমার লক্ষ্য নয়। ধর্মের ক্ষতিকর দিক যেমন আছে, তেমনি এর উপকারী দিকও আছে। ধর্ম না থাকলে জানাজা, সৎকার, আভেলুত, প্রার্থনা, উৎসব, শেষকৃত্য, বিয়ে, এগুলো থাকতো না। জানাজা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মৃত্যুর পর একটি জীবকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় দেয়া, এটি মানুষ ছাড়া আর কোনো প্রাণীর ক্ষেত্রে ঘটে না। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া আমাদের কী দেয়? এমনিতে মনে হয় কিছুই দেয় না, তবে গভীরভাবে তাকালে দেখা যাবে, এটি সমাজে একধরনের ‘সেন্স অব মিনিং’ সৃষ্টি করে। প্রার্থনায় ঈশ্বরের হয়তো কিছুই যায় আসে না, কিন্তু প্রার্থনাকারীর মনে এটি বড় পরিবর্তন আনে। সমাজের যে-কালচারাল ও মোরাল ভ্যালু, তাও কিছুটা ধর্মের হাত ধরেই সংরক্ষিত হয়। ন্যায়বিচার, আইনের শাসন, অধিকার, সমতা, এগুলোর পরিচর্যায় ধর্মের ভালো ভূমিকা আছে। নিটশা যে বলেছিলেন, গড ইজ ডেড, কেন বলেছিলেন? নিটশার কথার অর্থ এই নয় যে ঈশ্বরের আর প্রয়োজন নেই, বা ঈশ্বর মারা গেছেন। বরং কথাটি তিনি বলেছিলেন আক্ষেপ করে। কারণ ওই সময়, ইউরোপে ধর্মভিত্তিক খ্রিষ্টীয় মোরালিটি দ্রুত উধাও হয়ে যাচ্ছিলো। ফলে সমাজ একেবারেই নিহিলিস্টিক ভ্যাকুয়ামের দিকে চলে যায় কিনা, এমন আশংকা তৈরি হয়েছিলো। যন্ত্রসভ্যতার ফাঁদে পড়ে মানুষ যেন মেকানিক্যাল রোবট না হয়ে ওঠে, জীবনের মানে যেন সে হারিয়ে না ফেলে, এ ভয় থেকেই নিটশা উচ্চারণ করেছিলেন— গড ইজ ডেড! শরবত দীর্ঘকাল সংরক্ষণের জন্য যেমন প্রিজার্ভেটিভ দরকার, তেমনি কোনো প্রথা, আচার, রীতি, সংস্কৃতি, এগুলো টিকিয়ে রাখার জন্যও ধর্ম দরকার। এ বিবেচনায়, ধর্ম একপ্রকার কালচারাল প্রিজার্ভেটিভ।

কিন্তু ‘ধর্ম’ কী? ধর্ম হলো ‘প্যাকেজ অব কালচার্স’ বা সংস্কৃতির সমারোহ। কিছু নির্দিষ্ট সংস্কৃতি একীভূত হয়ে যখন কালেক্টিভ প্রথা আকারে সমাজে বিরাজ করে, তখন সেটিকে ধর্ম বলে। ‘ধর্ম’ আর ‘প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম’ এক জিনিস নয়। ইসলাম, ক্রিশ্চিয়ানিটি, ইহুদীবাদ, হিন্দুত্ববাদ, এগুলো প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম। অর্গানাইজড রিলিজোন। অর্গানাইজড রিলিজোন আগ্রাসী। এর রাজনীতিক ক্ষমতা আছে। অন্য ধর্ম, অন্য মত, অন্য নবী, অন্য সংস্কৃতি, এগুলোর প্রতি প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মগুলো সহনশীল নয়।"
.
—মহিউদ্দিন মোহাম্মদ
পৃষ্ঠা ৩০-৩১, বই: মূর্তিভাঙা প্রকল্প

No comments:

Post a Comment