৫ই আগস্ট এর বাংলাদেশের সরকার পরিবর্তন ও সেটার আগে পরে ভারতের কৌশলগত অবস্থান নিয়ে আলাপ করতে গেলেই বহু মানুষ ভারতের সামরিক প্রস্তুতিকে সামনে টেনে আনে। তাদের বক্তব্য হল এই ভারত সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করল বলে! এই তো চিকেন নেক এলিফ্যান্ট নেক হয়ে যাচ্ছে আগামী সপ্তাহেই! অনেকে আবার এর মধ্যেই রংপুর-দিনাজপুর এবং চট্টগ্রামকে ভারতের ভেতরে ঢুকিয়ে মানচিত্র প্রস্তুত করে ফেলেছেন।
জর্জ সোরোস এবং মার্কিন ডিপ স্টেটের ইউক্রেন মডেলে রচিত হয়েছে সেই পরিকল্পনা। বাংলাদেশে নানা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও মিলিশিয়া তৈরি করে এর মধ্যেই এর ভিত্তি রচিত হয়েছে। ভারত যদি বাংলাদেশে কোনো ধরনের আক্রমণ করে ঠিক তখনই পাকিস্তান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে ভারতের বিরুদ্ধে প্রক্সি যুদ্ধ শুরু করবে। সেটা বর্তমানের ট্রাম্প সরকার শুরু না করলেও পরবর্তি সরকার করবে। এসব পরিকল্পনা দীর্ঘমেয়াদী। যেটা হল বৃহৎ দেশগুলোর পার্শ্ববর্তী ছোট দেশগুলোকে অস্থিতিশীল করে সেখানে জেলেনস্কির মত যুদ্ধবাজ পুতুল সরকার বসিয়ে বৃহৎ দেশগুলোকে যুদ্ধে উস্কানি দেওয়া।
জর্জ সোরোস এবং মার্কিন ডিপ স্টেটের বড় মাপের বিশ্ব পরিকল্পনা হল একদিকে যেমন ছায়া যুদ্ধের মাধ্যমে তাদের সামরিক প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রগুলোকে ধ্বংস করা যেমন রাশিয়া। অপরদিকে তাদের ব্যবসায়িক বা শিল্প উৎপাদনের প্রতিদ্বন্দ্বীদেরও ধ্বংস করা, যেমন চীন বা ভারত। সেই কারণে তাইওয়ানকে ব্যবহার করে চীন ও বাংলাদেশকে ব্যবহার করে ভারতকে ধ্বংস করা তাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা স্পষ্ট।
অনেকে ভাবতে পারেন যে ভারত যখন দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক এবং কৌশলগত মিত্র, তখন তারা এটা কেন করবে? আসলে জর্জ সোরোস ও মার্কিন ডিপ স্টেটের একটি ভয়ংকর বিশ্ব পরিকল্পনা আছে। ঠিক যে পরিকল্পনায় মধ্যপ্রাচ্যে সকল মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে দুর্বল করে যে জায়োনিস্ট মহাপরিকল্পনা নিয়ে তারা ইসরায়েলের কর্তৃত্ব স্থাপন করে ফেলেছে প্রায়, সেই একই নীলনকশা তারা সারা দুনিয়ার উপরে প্রয়োগ করতে চায়।
সেই লক্ষ্যেই তারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনে রঙিন বিপ্লব করে এবং ঠিক বাংলাদেশের মতই ইউক্রেনের নির্বাচিত সরকারপ্রধানকে বিতাড়ন করে সন্ত্রাসী ও যুদ্ধবাজ রাশিয়া বিরোধীদের ক্ষমতায় বসায়। তারা ইউক্রেনে বসবাসরত রুশ ভাষাভাষী ইউক্রেনীয়দের হত্যা, নির্যাতন ও বাড়িঘর ধ্বংস, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি করতে থাকে ঠিক যেমন বর্তমানের বাংলাদেশে হিন্দু ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষদের উপর করা হচ্ছে যারা ভারত বিরোধী নয়। ইউক্রেনে বসবাসরত রুশ ভাষাভাষীদের উপর অবিরাম এই নির্যাতন রাশিয়াকে বাধ্য করে ঐ অঞ্চলগুলো দখলে নিতে এবং এটাই সুযোগ করে দেয় জর্জ সোরোস ও মার্কিন ডিপ স্টেটের নীলনকশা বাস্তবায়নে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে।
ইউক্রেনে যা ঘটেছে, বাংলাদেশে যা ঘটছে এবং ভবিষ্যতে তাইওয়ানে যা ঘটবে, এগুলো সবই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইস্যু তৈরি করে ক্রম প্রসারমান বিপর্যয়ের একটি চেইন অব ইভেন্ট তৈরি করা যেটাতে বৃহৎ রাষ্ট্রের শক্তিই ব্যবহৃত হয় তার নিজেকে ধ্বংস করতে। এটি অনেকটা ক্যান্সারের মত যেখানে শরীরের নিজের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাই নিজের কোষের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে যায়।
এই পরিস্থিতিতে ভারতকে যুদ্ধের দিকে প্ররোচিত করাই যখন শত্রুর লক্ষ্য তখন ভারতের আগাম যুদ্ধের চিন্তা আত্মঘাতী। ভারতের প্রয়োজন শুরুতেই কৌশলগত ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় সমস্যার মূলোৎপাটন যেখানে বাংলাদেশে বেশিরভাগ মানুষ এখনও যুদ্ধ চায় না। কিন্তু ভারত যদি কোনো যুদ্ধ শুরু করে, তখন এই হিসাব পাল্টে যাবে এবং আন্তর্জাতিক চক্রান্তকারীরা এবং বাংলাদেশের অবৈধ সরকার সেটাই চাইছে।
No comments:
Post a Comment