Saturday, April 19, 2025

৫ই অগাস্ট ভারত কৌশলগতভাবে হেরে গেছে। (Sirajul Hossain )

 আমি সেই ৫ই অগাস্ট থেকেই দাবী করেছি যে বাংলাদেশের সরকার পরিবর্তন আসলে ভারতের একটি কৌশলগত পরাজয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা কোন পরাশক্তি, এমনকি পাকিস্তানের মত দেশেরও বাংলাদেশের সরকার পরিবর্তন বা রাজনৈতিক মেরূকরণের প্রচেষ্টার চুড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে ভারত। বাংলাদেশের মত একটি ক্ষুদ্র দেশের রাষ্ট্র বা সরকারের সক্ষমতা নেই যুক্তরাষ্ট্র বা কোন পরাশক্তির সামনে বা পেছনে থেকে যে দীর্ঘমেয়াদী চক্রান্তকে মোকাবিলা করার। এই সব চক্রান্তের চুড়ান্ত লক্ষ্য যখন ভারত, তখন এইসব চক্রান্ত থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করার দায়িত্বও ভারতের।

আগেই লিখেছি বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন ও শেখ হাসিনাকে বিতাড়নের মূল কারণ ভবিষ্যত চীন-যুক্তরাষ্ট্র সংঘাতে এগিয়ে থাকতে চীনের জ্বালানী নিরাপত্তায় আঘাত হানা। যেটা করা হবে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে মিয়ানমারের কিয়াকফিউ বন্দরে ও নৌ ঘাটিতে আঘাত হানা - আরাকান আর্মিকে সহায়তা করে পরোক্ষভাবে। এটা ছিল প্রাথমিক লক্ষ্য যেটা যুক্তরাষ্ট্রের একটি সামরিক লক্ষ্য।
এখানে আর একটি দ্বিতীয় লক্ষ্য ছিল এবং সেটি হচ্ছে ধর্মীয় দলগুলোকে উসকে দিয়ে বাংলাদেশে ইসলামী খিলাফত কায়েম করে, তাদের সশস্ত্র করে, তার সাথে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের যুক্ত করে ভারতের সেভেন সিস্টার্স রাজ্যগুলোতে অনুপ্রবেশ করিয়ে সেই রাজ্যগুলোকে অস্থিতিশিল করা এবং সেগুলোকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করা। এটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ডিপ স্টেট ও জর্জ সরোস বাহিনীর দীর্ঘ সময়ের রাজনৈতিক লক্ষ্য যেটা বাস্তবায়নে কাজ করছিল সিআইএ ও পাকিস্তানের আইএসআই।
৫ই অগাস্ট তাই ভারত কৌশলগতভাবে হেরে গেছে। ক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে বিগত আওয়ামী সরকারের উপর গোস্মা করে বসে ছিল মোদি সরকার। ভারতের বাঘা বাঘা সব নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং সমর বিশেষজ্ঞরা জানত না যে বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে একটি মার্কিন পুতুল সরকার আসলে সেটা ভারতের জন্য কি হতে পারে? ৫ই অগস্টের আগে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীতে কি ঘটছে জানত না ভারতীয় ইনটেলিজেন্স?
যদি আমরা ধরেও নেই যে ৫ই অগস্টের ঘটনা ভারতের একটি অসচেতন দুর্ঘটনা। কিন্তু তার পর কি করছে ভারত? গত আট মাসে তাদের কৌশল কি? মিয়ানমারের রাখাইনে আরাকান আর্মির যে অগ্রগতি সেটা ভয়ানক হয়েছে গত আট মাসে। ভারত জানত না যে আমেরিকা এই সুযোগটা হাতছাড়া করবে না? ট্রাম্প-মোদি বন্ধুত্ব বর্তমান পরিস্থিতিতে আমেরিকার চীনকে কায়দা করার সুযোগ হাতছাড়া করার জন্য যথেষ্ট কি? ভারত কি জানত না যে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার নিজেদের বাঁচাতে আমেরিকার যে কোন চাওয়ার সামনে পশ্চাৎদেশ পেতে বক্র হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা পরিবর্তন ও ট্রাম্প সরকারের নীতি পরিবর্তনের জন্য এবং তুলশী দিদির কল্যানে আপাতত দ্বিতীয় লক্ষ্যটি মুলতবি মনে হচ্ছে যে কারণে পাকিস্তান একটু পর্দার অন্তরালে এবং আমাদের সামরিক বাহিনীও খিলাফতিদের প্রশ্রয় দিচ্ছে না। যদিও প্রশাসনকে জামাতীকরণ, জেল থেকে সন্ত্রাসী মুক্ত করা, এবং মব ভায়োলেন্স বজায় রাখা - সমাজকে এরকম সন্ত্রাসীকরণ থেমে নেই। এটিকেই কি ভারত বিজয় ভেবে আপ্লুত? বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন ও শেখ হাসিনাকে বিতাড়নের মূল কারণ যেটা, বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে মার্কিন রসদ (এবং অস্ত্র) যদি বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে তৃতীয় দেশের সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে যাবার চ্যানেল তৈরি হয় সেটা ভারতের ভবিষ্যত নিরাপত্তার জন্য কেমন হবে?
যৌনকর্মের যেমন নানা রকম ধরণ আছে, যুদ্ধের বা প্রক্সি যুদ্ধেরও আছে। কখনও সেটা হঠাৎ মনে হওয়া কুইকি, কখনও ঝটিকা আবেগের ওয়াইল্ড সেক্স আবার কখনও ধীর লিঙ্গারিং রোমান্টিক সেক্স। কখন আমরা কি করব সেটা কখনই আমাদের একার ইচ্ছার উপর নির্ভর করে না। নিজের ইচ্ছা এবং পার্টনারের ইতিবাচক রেসপন্সের উপরই নির্ভর করে সেটার ধরণ কেমন হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ঝটিকা, পাকিস্তানের কুইকির প্রতিক্রিয়ায় ভারত যেন ধীর লিঙ্গারিং কৌশলে খেলছে। আবার এমনও হতে পারে ভারতের আসলে কোন কৌশলই নেই তাই সে ধীর ও নিষ্ক্রীয়। হয়ত বিগত আওয়ামী সরকারের মত তারাও রাজনৈতিক প্রজ্ঞাবিহীন একটি শিখন্ডি সরকার। এভাবে খেললে ৫ই অগাস্টের মত তাই ভারত কৌশলগতভাবে আবার হেরে যাবে বলেই মনে হয়।

No comments:

Post a Comment