Sunday, April 27, 2025

ইসলামের বিপথগামীতা -৩: “বাইরে ধার্মিক কিন্তু ভিতরে অশুচি” ইহুদি ধর্মে সঙ্কট ও যিশুর জন্ম লেখ ক সিরাজুল হোসেন

 


গত পর্বে আমরা দেখেছি কিভাবে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর আগে মধ্যপ্রাচ্যের সিরিয়া-লেভেন্ট অঞ্চলে নানা জাতি ও ছোট ছোট ধর্ম বিশ্বাসের বিভিন্ন ধারণা সহযোগে ইহুদি ধর্মের প্রাথমিক ধারণাগুলো তৈরি হল যেটা শুধুই একেশ্বরবাদী ছিল না। এর পর প্রায় হাজার বছরের নানা সংঘাত, রাজনৈতিক চাপ ও যুদ্ধ বিগ্রহের পর রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় একেশ্বরবাদী ইহুদি ধর্মের প্রতিষ্ঠা শক্ত ভিত্তি পেল যেটা আব্রাহামিক ঐতিহ্য ও ধর্মতত্ত্বের একটি প্রবাহ হিসাবে খ্রিস্ট এবং ইসলাম ধর্মের ভিত্তি হিসাব প্রতিষ্ঠিত হয়।
এই পর্বে আমরা দেখব প্রায় দুই হাজার বছর আগে জুডিয়ার বেথলেহেমে যিশু খ্রিস্টের জন্মগ্রহণের সময় সেখানকার ধর্ম, রাজনীতি ও সমাজের কি এমন পরিস্থিতি ছিল যেখানে ইহুদি ধর্মের একটি সংস্কার জরুরী হয়ে পড়ে ছিল। একটা কথা স্মরণ রাখতে হবে যে যিশু খ্রিস্ট একটি ইহুদি পরিবারে বেড়ে উঠেছিলেন এবং তিনি কোন ধর্মীয় পুস্তক রচনা করে যান নাই। ইহুদি ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ তোরাহ, যেটা হিব্রু বাইবেল নামে পরিচিত, তার ভেতরে যে পাঁচটি বই, যেগুলো হল জেনেসিস, এক্সোডাস, লেভিটিকাস, নাম্বার্স, ডিউটেরোনমি, সেগুলোই ছিল যিশু খ্রিস্টের ধর্মগ্রস্থ। নতুন কোন ধর্ম নয়, যিশু খ্রিস্ট ইহুদি ধর্মের যে কঠোর, হৃদয়হীন ও আক্ষরিক প্রয়োগ সেই সময়ে শুরু হয়েছিল, তিনি তার পরিবর্তন চেয়েছিলেন। ধর্মের লক্ষ্য তোরাহর আক্ষরিক প্রয়োগ নয় যা ঔ সময় একশ্রেনীর ধর্মপ্রচারক ফরিশীদের (Pharisees) মৌখিক তালমুদ ও তোরাহর অপব্যাখ্যা প্রয়োগ করে মানুষ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করত। যা বর্তমানের একশ্রেণীর ইসলাম প্রচারকদের ভুয়া হাদিস ও কোরানের অপব্যাখ্যা প্রচারের মত ছিল। ধর্মের লক্ষ্য তোরাহর আক্ষরিক প্রয়োগ নয়, ঈশ্বরই যে লক্ষ্য এবং ঈশ্বর যে অনিরাপত্তায় ভোগা একজন ক্ষুব্ধ শাসক নন, তিনি প্রেম ও দয়ার পিতা, সেটাই তিনি প্রচার করতে চেয়েছিলেন।
..........
.......
দুই হাজার বছর আগে খ্রিস্টের জন্মের সময় ইহুদি ধর্মে ধর্মপ্রচারক ফরিসীদের কঠোর আচার-নিষ্ঠা ও ধর্মীয় প্রদর্শনবাদীতা যে সমস্যা তৈরি করেছিল যা ধর্মকে অমানবিক ও সমাজবিচ্ছিন্ন করে সমাজে একটি বিপর্যয় তৈরি করেছিল। ধর্মকে ব্যবহার করে তারা ধর্মীয় প্রদর্শনবাদীতা ও দলবাজীর ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল। ধর্মপ্রচারক সদ্দুকীরা একটি ধর্মীয় এলিটতন্ত্র তৈরি করেছিল এবং সেগুলোকে ব্যবহার করে ধর্মপ্রচারক জেলটরা সশস্ত্র বিদ্রোহের জন্য তৈরি ছিল। বর্তমানের ইসলাম ধর্ম যেন সেই একই পরিস্থিতিতে নিমজ্জিত। নকল ও মনগড়া হাদিস এবং কোরানের বানীর উদ্দেশ্যমূলক ব্যবহার করে ধর্মীয় প্রদর্শনবাদীরা ধর্মকে কঠোর আচার-নিষ্ঠা ও শত্রু তৈরির হাতিয়ার করে ফেলেছে। যে দেখতে তাদের মত নয় সেই যেন ইসলাম বিরোধী, যারা ভিন্ন ধর্মের, তাদের যেন কোন সম্মান ও অধিকার নেই – ধর্মকে ব্যবহার করে ও অপব্যাখ্যা করে এই নাফরমানি ও ইশ্বরবিরোধীতা তারা প্রচার করে চলেছে। এবং আশ্চর্য যে রাষ্ট্রের সামরিক বেসামরিক বিভিন্ন অংশ, এই মিথ্যা এবং পাপকর্মের এজেন্ট হয়ে রাষ্ট্রীয় সহাযোগীতায় জনগনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে চলেছে। এরা সকলে শয়তানের দোসর এবং এটা চলতে থাকলে এই দেশের পতন কেউ রোধ করতে পারবে না।

No comments:

Post a Comment