আফগানিস্তানের রাস্তায় কিছু লোককে দেখবেন তারা গোল গোল মাটির জিনিস বিক্রি করছে।
এগুলোর নাম তারা বলবে– 'কাংগিনা'।
প্রথম শুনলে এটা আপনার কাছে এটা অবাক লাগতে পারে।
কিন্তু এই পাত্র ভাঙলেই ভিতর থেকে রসালো আঙুর বের হবে!
শুকিয়ে কিশমিশ না বানিয়ে আঙুরকে দীর্ঘদিন তাজা রাখার একটি পদ্ধতি হলো কাংগিনা।
আফগানরা শত শত বছর ধরে আঙ্গুরকে অফ-সিজন পর্যন্ত ফ্রেশ রাখতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে আসছে।
আঙুর গ্রীষ্মকালীন ফসল।
আফগানিস্তানে প্রতি মৌসুমে আঙ্গুর টাটকা খাওয়া ও কিসমিস করার পর বাকিটা কাংগিনা পদ্ধতিতে স্টোর করা হয়। শীতকালে বিক্রেতারা কাঙ্গিনা বিক্রি করে বেশি মুনাফা আয় করে।
আফগান কৃষকরা শীতকালে কাংগিনার আঙুর ৩-৪ গুণ বেশি দামে বিক্রি করতে পারে, কারণ এই সময়ে তাজা আঙুরের সাপ্লাই প্রায় শূন্য থাকে।
ফলমূল সাধারণত দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।
আজকের বিশ্বে খাদ্য সংরক্ষণের জন্য রেফ্রিজারেশন, কেমিক্যাল প্রিজারভেটিভ, প্লাস্টিক প্যাকেজিং ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। এসব পদ্ধতিতে শক্তির অপচয় হয়, পরিবেশ দূষণ ঘটে এবং কিছু ক্ষেত্রে খাদ্যের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়।
এই অবস্থার সমাধান হলো- কাংগিনা।
কাংগিনা পদ্ধতিতে কোনো শক্তি বা রাসায়নিকের প্রয়োজন হয়না, শুধু মাটি ও খড় দিয়ে তৈরি এয়ারটাইট পাত্রই যথেষ্ট। যার মাধ্যমে, তাজা রসালো আঙুরের স্বাদ, টেক্সচার এবং পুষ্টি প্রায় ৬ মাস পর্যন্ত অক্ষুণ্ণ থাকে!
খাদ্যবিজ্ঞানে, এই পদ্ধতিকে বলা হয় 'প্যাসিভ কন্ট্রোলড অ্যাটমোসফিয়ার স্টোরেজ' (PCAS)।
কাংগিনা পদ্ধতিতে ফল সংরক্ষণের জন্য প্রথমে কাদা ও খড় মিশিয়ে বাটি তৈরি করা হয়। বাটিগুলিকে রোদে পুরোপুরি শুকানো হয়।
এরপর এগুলোর মধ্যে প্রায় ১-২ কেজি পাকা আঙুর রাখা হয়। (আঙ্গুর ধোয়া হয়না, ধুলে ফলের প্রাকৃতিক ইস্ট ও ব্যাকটেরিয়া চলে যাবে।)
তারপর আরেকটি বাটি দিয়ে ঢেকে কাদা দিয়ে সিল করে দেয়া হয়। এভাবে পাত্রটি সম্পূর্ণ এয়ারটাইট হয়ে যায়।
এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে ২০-৩০ দিন পর্যন্ত সময় লাগে।
কাংগিনা তৈরি হওয়ার পর এগুলি সূর্যের আলো থেকে দূরে শুকনো ও ঠান্ডা জায়গায় রাখা হয়।
অনেকে এগুলোকে মাটির নিচে পুঁতে রাখে।
খড় ও কাদা মিশিয়ে তৈরি পাত্রগুলোর ভিতরে সঠিক তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা বজায় থাকে। শুকনো কাদামাটির পাত্রে প্রাকৃতিকভাবেই ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাসের বিরুদ্ধে বাধা তৈরি হয়।
এই পরিবেশে আঙ্গুর পঁচে না এবং শুকিয়ে যায় না।
কাংগিনায় ফুলি রাইপ (পাকা, মিষ্টি ও রসালো) আঙুর রাখা হয়।
পাকা আঙুরে প্রাকৃতিকভাবে respiration rate বেশি থাকে (অক্সিজেন গ্রহণ ও CO₂ ত্যাগ করে)।
কাংগিনার মাটির পাত্র সিল করার পর ভিতরে Controlled Atmosphere (অক্সিজেন কম, CO₂ বেশি) তৈরি হয়, যা আঙুরের respiration rate কমিয়ে দেয়।
ফলে আঙুরের মেটাবলিজম কমে গিয়ে এটি আর পাকতে পারেনা বা নষ্ট হয়না।
ফল পাকার হরমোন ইথিলিন এর উৎপাদনও অক্সিজেনের অভাবে কমে যায়।
এভাবে আঙুর মাসের পর মাস 'স্টেবল' অবস্থায় থাকে।
স্টাডিজে দেখা গেছে, কাংগিনায় সংরক্ষিত আঙুরে ভিটামিন সি, ফেনোলিক কম্পাউন্ডস এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর পরিমাণ রেফ্রিজারেশনে রাখা আঙুরের চেয়ে বেশি সময় ধরে অক্ষুণ্ণ থাকে।
কারণ, কম অক্সিজেনের পরিবেশে ভিটামিনের অক্সিডেশন কম হয়।
কাংগিনার মতো প্রাকৃতিক পদ্ধতি শুধু আঙুর নয়, অন্যান্য ফল (যেমন আপেল, নাশপাতি) এবং কিছু কিছু সবজি সংরক্ষণের জন্যও কার্যকর হতে পারে।
No comments:
Post a Comment