এই টা কি ন্তু আমার লেখা না কিন্তু এই অভিজ্ঞতা আছে অনেকের। ত বে এখানে এ ক টা ভুল আছে। আমাদের Ethnicity বাঙ্গালি আর আম রা বাংলাদেশের নাগ রিক তাই বাংলাদেশি । বাংলাদেশে অন্য Ethnicity এর লোকেরাও বাস ক রে কিন্তু তারা বাংলাদেশি আবার বাঙ্গালিরা বিভিন্ন দেশে বাস ক রে । যেমন ভার তে যে বাঙ্গালিরা থাকে তাদের কে ব লে ভারতীয়।
এই যে সুন্দর মানেই ফরেনারদের মতন দেখতে লাগা যে একটা অপমানজনক কথা সেটা প্রথম টের পেলাম ১৭ বছর বয়সে দেশ ছাড়ার পরে। যেহেতু আমি এভারেজ বাংলাদেশী হাইটের চেয়ে একটু লম্বা, ৫’৮” আমাকে প্রবাসী বাঙালিরা বলতো তুমি এত লম্বা, বাংলাদেশী মনে হয় না, পাকিস্তানি বা ইন্ডিয়ান লাগে। তখন কম বয়সী মনে সেটা শুনে ভালোই লাগতো যে আমাকে দেখতে অন্য বাংলাদেশীদের চেয়ে আলাদা লাগে! তারপর যখন সব দেশী মানুষের সাথে মেশা শুরু করলাম তখন দেখলাম, অন্য দেশী মানুষও এই কথা বলছে, এমনকি পাকিস্তানিরাও বলছে। তখন খেয়াল করে দেখলাম যে এরা বাংলাদেশী কাদেরকে বলছে? ইন্ডিয়ান এবং পাকিস্তানিদের কাছে বাঙালি মানেই, উচ্চতা কম এবং গায়ের রং গাঢ় এরকম আনফিট মানুষ। ইন্ডিয়ান এবং পাকিস্তানিদের ধারনা লম্বা এবং গায়ের রঙ ফর্সা সুগঠিত মানুষ শুধু ওদের দেশেই আছে, বাংলাদেশের মানুষ সবার গায়ের রং কালো, পেট মোটা এবং উচ্চতা কম। তখন আমি আসলে বুঝতে পারলাম যে তোমাকে পাকিস্তানিদের মতন লাগে বা ভারতীয় লাগে বা কোরিয়ান লাগে ব্যাপারটা কতটা অপমানজনক একটা কথা। কারন উচ্চতা, চেহারা গায়ের রং আমরা আমাদের পরিবার থেকে জেনেটিকালি ধারন করি, কারো অবয়ব নিয়ে হীন মন্তব্য করা মানে শুধু সেই মানুষটাকেই না, তার পূর্বপুরুষ সবাইকে অপমান করা।
বাংলাদেশের মানুষদের গায়ের রঙ হালকা থেকে গাঢ় পর্যন্ত বিভিন্ন হয়, আবার চেহারাও ভিন্ন, কেউ আমার বাবার মতন গাঢ় বাদামি, কেউ আমার মায়ের মতন দুধে আলতা। এর পেছনে ঐতিহাসিক, জাতিগত এবং ভৌগোলিক অনেক কারণ রয়েছে। প্রাচীনকালে আর্য (হালকা চামড়া) ও দ্রাবিড় (গাঢ় চামড়া) জনগোষ্ঠীর মিশ্রণ ঘটেছে, আদিবাসী গোষ্ঠী আছে, মঙ্গোলয়েড প্রভাব আছে। তার উপরে মুসলিম শাসকরা (তুর্ক, আফগান, মুঘল, আরব) মধ্য এশিয়া ও পারস্য থেকে এসে বাংলাদেশে বসতি স্থাপন করে। আছে পর্তুগিজ ও ইংরেজ উপনিবেশের রেখে যাওয়া চিহ্ন। এছাড়া বেশি আর্দ্রতা ও রোদের কারণে কিছু অঞ্চলের মানুষ গাঢ় বর্ণের হয়। কাজেই বাংলাদেশের মানুষ মানেই সবাই দ্রাবিড় না, আমাদের গড় উচ্চতা কম হলেও সবার উচ্চতা সমান না। বাংলাদেশীদের এই বৈচিত্র্য এসেছে হাজার বছরের সংস্কৃতি, অভিবাসন ও ইতিহাসের মিশ্রণ থেকে। এই বৈচিত্র্যই আমাদের বৈশিষ্ট্য।
তোমাকে বাংলাদেশী লাগে না এমন অভিজ্ঞতা আমার একার না, পালোয়ানদের বাবারও, কারন তার উচ্চতা ছয় ফিট ১, ছোটবেলা থেকে শরীরচর্চা করে পেশীবহুল শরীর, এবং গায়ের রং সে পেয়েছে তার মায়ের মতন, গোলাপি আভা। বিয়ের পরে অন্তত হাজার বার শুনেছি, “দুলাভাই কোন দেশী?” একবার এক বাংলাদেশী অনুষ্ঠানে গিয়েছি, নতুন অনেকের সাথে পরিচয় হলো, এক ভদ্রমহিলা আমাকে এসে বললেন, “ভাইকে খুব সুন্দর বাংলা শিখিয়েছেন”। আমি আসলে বাচ্চা কোলে নিয়ে এত ভাল করে বুঝতে পারিনি কি বলতে চেয়েছেন, আমি বলছি, “কই? আমি আবার কি শেখালাম!”, পাশেই এক বড় ভাই দাঁড়িয়ে ছিলেন, তিনি উত্তর দিলেন, “ধূর! ওর বাড়ি গাজীপুর, ওকে বাংলা শেখাতে হবে কেন!”
এইরকম ঘটনা প্রচুর আছে।

তবে সীমান্ত মাঝে মধ্যে একটু রেগেও যায়, একদিন চুল কাটতে গেছে, পাকিস্তানি নাপিত বারবার জিজ্ঞেস করছে কোন দেশী, সীমান্ত ইচ্ছে করেই উত্তর দিচ্ছে না, পরে যখন বললো বাংলাদেশী, সে বললো, “কোন রেস্টুরেন্টে জব করেন?” সীমান্ত তখনও ভদ্রভাবেই উত্তর দিল “আমি রেস্টুরেন্টে জব করি না”। তখন সে বলছে, “আপনাকে দেখে তো বাংলাদেশী মনেই হয় না, আপনি মিথ্যা বলছেন, আমার অনেক বাংলাদেশী বন্ধু আছে, কেউ এমন দেখতে না, সবাই রেস্টুরেন্টে চাকরি করে”, সীমান্ত তখন অর্ধেক চুল কেটেই বের হয়ে এসেছে এই বলে যে, “বাংলাদেশে অনেক ধরনের মানুষ আছে, সবাই দেখতে একরকম না, বাংলাদেশী সবাই প্রবাসে এসে রেস্টুরেন্টে জব করে না, আর রেস্টুরেন্টে জব করা কোন হেয় করার বিষয় না।”
এই যে ইন্ডিয়ান এবং পাকিস্তানিদের বাংলাদেশীদের ছোট করে দেখার প্রবণতা এই ব্যাপারটা অত্যন্ত অস্বস্তিকর। একসময় এশিয়ান কেউ চট করে “where are you from?” জিজ্ঞেস করলেই মেজাজ খারাপ হতো, কারন তারপরেই বলবে “You don’t look Bangladeshi” ; এখন আগ বাড়িয়ে খুব গর্ব নিয়ে সব জায়গায় নিজেই বলি আমরা বাংলাদেশী। দেখ তোরা! বাংলাদেশী দেখতে কেমন হয়!
এই অভিজ্ঞতা আমার ভাইয়েরও, ও এর মধ্যে দুবাইতে কিছুদিন জব করেছে, ওর উচ্চতা ছয় ফিট তিন এবং গায়ের রং ফর্সা। ওকে নিয়ে ওর পাকিস্তানি বস অফিসে কেউ নতুন এলে বাজি ধরতো, ওকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করতো, “বলতো, এই ছেলেটা কোন দেশী?” অনেকে অনেক রকম উত্তর দিত তবে বাংলাদেশী কেউ বলতো না, আমার ভাই প্রথম প্রথম খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করতো, যে ও বাংলাদেশী শুনে সবাই এত অবাক হয় কেন? তখন ওর বস উত্তর দিল, আমার সাথে চলো, আমার ফ্যাক্টরিতে অনেক বাংলাদেশী শ্রমিক কাজ করে, আমি তোমাকে দেখাই বাংলাদেশীরা কেমন দেখতে হয়। আমার ভাই বলেছে, “আপনি আমার সাথে বাংলাদেশে চলেন, আমি আপনাকে দেখাই বাংলাদেশী কত রকমের হয়!”
আমার দুই ছেলে, বড়জন ওর বাবার রূপ পেয়েছে, গায়ের রং উজ্জ্বল, চুলগুলো ঘরের মধ্যেও লালচে। ওকে নিয়ে যখন দেশে এলাম সবার কি উচ্ছ্বাস! বাবুটা কি কিউট! একদম বিদেশী বাচ্চা! তখন আমি খুব কড়া উত্তর দিতাম, যে বাবা মা দুজনেই খাঁটি বাংলাদেশী, বিদেশী হবে কেন? ওর নানীর চুল এরকম লালচে, আর গায়ের রং চেহারা পেয়েছে বাবার। তারপর আমার ছোট ছেলে নিয়ে যখন দেশে এলাম, সবাই বলছে, “এইটা দেখতে বরিশাইল্যা লাগছে”, কারন আমার ছোট ছেলে অনেকটা ওর নানার মতন দেখতে হয়েছে, গায়ের রংটা চাপা, কুচকুচে কাল চুল, নাকটা চোয়ালটা ভাইয়ের মতন অতটা ধারালো না। মানে পরিশ্রমী বাংলাদেশী মাটির মানুষ যেমন হয় ঠিক তেমন। এত মিষ্টি! ওর মুখটার দিকে তাকালে আমি আমার বাবাকে দেখতে পাই, এর গায়ে বাংলাদেশের মিষ্টি গন্ধ। কাজেই কেউ যখন ওকে বলে বাংলাদেশী বাচ্চা সেটা ওর গায়ের রং আর চেহারা ইঙ্গিত করেই বলে কিন্তু আমি খুবই খুশী হই, এমন খাঁটি বাংলাদেশী বললে আমি গর্বিত হই, আর ফরেনারদের মতন কেউ বললেই আমি প্রচন্ড বিরক্ত হই।
তাই তো আমার ছোট ছেলেকে আমি বাংলাদেশী রূপে সাজাতে ভালোবাসি। ঠিক যেন জসীমউদ্দীনের লেখা রূপাই আমার ঘরে জন্ম নিয়েছে।
“এই গাঁয়ের এক চাষার ছেলে লম্বা মাথার চুল,
কালো মুখেই কালো ভ্রমর, কিসের রঙিন ফুল!
কাঁচা ধানের পাতার মত কচি-মুখের মায়া,
তার সাথে কে মাখিয়ে দেছে নবীন তৃণের ছায়া |
জালি লাউয়ের ডগার মত বাহু দুখান সরু,
গা-খানি তার শাওন মাসের যেমন তমাল তরু |
বাদল-ধোয়া মেঘে কে গো মাখিয়ে দেছে তেল,
বিজলী মেয়ে পিছলে পড়ে ছড়িয়ে আলোর খেল |
কচি ধানের তুলতে চারা হয়ত কোনো চাষি,
মুখে তাহার জড়িয়ে গেছে কতকটা তার হাসি।”
সন্তানকে দেয়া আমাদের সবচেয়ে বড় উপহার তাদের Ethnicity , বিশ্বের যে দেশের নাগরিক হোক না কেন এথনিসিটি সবসময় বাংলাদেশীই থাকবে, সেটা বদলাবে না। আমার বাচ্চাদের আমি নিজেদের শেকড় নিয়ে গর্ববোধ করতে শেখাচ্ছি নিজে উদাহরণ হয়ে। বিদেশী মানেই সুন্দর আর দেশী মানেই ম্নান এই ব্যাপারটা মাথায় যেন কোনদিন না ঢোকে।
No comments:
Post a Comment