Tuesday, May 13, 2025

মুগডাল আর সাথে ডিম-আলুর চোখা। Surjyani Bhattacharyya

 

|| ঘরযজ্ঞির ভোজ ||
-: দ্বিতীয় পর্ব :-

"বিয়েবাড়ির ঘরযজ্ঞি মোটামুটিভাবে শুরু হত আইবুড়োভাতের দুপুর থেকে । ঘরযজ্ঞি অর্থাৎ যে ভোজে শুধু ঘরের লোকদেরই পাত পড়বে । বিবাহিত স্টেটাসপ্রাপ্ত হওয়ার আগের শেষ ভাত খাওয়ার অনুষ্ঠানে ভাতের সাথে প্রথম পাতেই থাকত পাঁচ রকম ভাজা । আলু, পটল, কুমড়ো, কপি, বেগুন, নটেশাক, নারকোল - ঋতু অনুযায়ী ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এর মধ্যে থেকেই পাঁচটি ভাজা রান্না করে সাজিয়ে দেওয়া হত পাতে । বাঙালির ভোজ শুরু হয় তেতো দিয়ে । সজনে পাতা কুচিয়ে মটর ডাল বাটায় মেখে তার বড়া করে, বড়ির বদলে সেই বড়া অন্যান্য সবজির সাথে তেজপাতা, রাঁধুনি ফোড়ন দিয়ে আদা বাটা দিয়ে কষে সর্ষে পোস্ত আর দুধের জ্বালে রান্না করে তৈরি হত তেতোপাতার শুক্তো যার স্বাদ আজও মুখে লেগে আছে । আমাদের বাড়িতে ঘরযজ্ঞির রান্নায়, পেঁয়াজ রসুনের ব্যবহারও খুব কম হতে দেখেছি । কিন্তু মুগডাল ছিলো এর ব্যতিক্রম । আইবুড়োভাতের মুগডাল মানেই তাতে ফোড়ন দেওয়া হবে হিং, শুকনো লঙ্কা, আদা রসুন বাটা । একটু মিষ্টি স্বাদের ঘন মুগডাল পাতের কোলে কাঁসার বাটি আলো করে বসবে । তার সাথে যোগ্য সঙ্গতে থাকবে মুচমুচে মাছ ভাজা । একটু বড় আকারের মৌরলা মাছকে নুন, গন্ধরাজ লেবুর রস, আদা লঙ্কাবাটা দিয়ে ঘণ্টাখানেক মেখে রেখে, তাতে মিশবে চালগুঁড়ি আর মুসুর ডাল গুঁড়ি । তারপর একটি একটি মাছকে তুলে ডুবো তেলে ভাজলেই তৈরি হবে খুব সুন্দর মৌরলা মাছ ভাজা । সেই সময় পমফ্রেট, তপসে ইত্যাদি মাছ খুব একটা মিলত না গ্রামের বাজারে । তাই পুকুরের সহজলভ্য মাছ দিয়েই বামুন ঠাকুরের হাতযশে তৈরি হত ওই সুন্দর স্বাদের মুখ বদলানো পদ । মাছ ভাজার পরে পালা তরকারির । তরকারিতে বরাবরই এচড় চিংড়ি বা চিংড়ি মাছ দিয়ে মোচার ঘণ্ট হতে দেখেছি বাড়িতে । মাছের পদে থাকত সর্ষে পাবদা কিংবা চিংড়ি মাছের মালাইকারি অথবা আদা টমেটো ফুলকপি দিয়ে ঘি গরমমসলা ছড়ানো নিরামিষ ভেটকির ডালনা । আমরা এই ডালনাকে নিরামিষ বলতাম কারণ এতে যথারীতি পেঁয়াজ রসুন পড়তোনা । সাথে দই রুই বা কাতলা কালিয়া । আমরা কালিয়া বলতাম বটে, কিন্তু বামুন ঠাকুর ওই রান্নায় কাজু কিশমিশ বেটে মেশাতেন । সমস্ত গোটা শুকনো মশলাকে শুকনো কড়াইতে নেড়ে, শিলে পিষে তৈরি হত ভাজা মশলা, যা ছড়ানো হত কাতলা কালিয়ার উপরে । শেষপাতে থাকতো, প্লাস্টিক চাটনি । কাঁচা পেপেকে পাতলা করে স্লাইস করে চিনির শিরায় ফুটিয়ে লেবুর রস দিয়ে রান্না হতো ওই চাটনি ।কখনও তাতে মেশানো হত আমাদা । গরমকালে আবার একই ভাবে আম কুরে চাটনি রান্না করা হতো । তাতে আমাদা মেশানো হত না বটে কিন্তু জিরে শুকনো লঙ্কা ভেজে গুঁড়িয়ে ছড়িয়ে দেওয়া হত । চাটনির পর পাঁপড়ভাজা পেরিয়ে থাকত সেই বিখ্যাত ছানার পায়েস । সাথে হয় রসগোল্লা নয় দরবেশ" ।

No comments:

Post a Comment