Thursday, May 29, 2025

Sirajul Hossain এর কলাম

 


খুব ছোট বেলায় ষষ্ঠ শ্রেণীতে থাকার সময় থেকেই এই বই দুটির আমাদের বাসায় ছিল। ওমর খৈয়ামের নজরুল অনুবাদিত বইটি আমাদেরই ছিল আর শারাবান তহুরা আমাদের এক পড়িশির বাসা থেকে আনা হয়েছিল যেটা তারা মনে হয় উপহার পেয়েছিল। ঐ বয়সেই ভাই বোনেরা মিলে বইদুটো পড়ে আমরা খু্ব আনন্দ পেতাম যেহেতু সমাজে তখন অতিরিক্ত ধর্মীয় প্রদর্শনবাদ বা মোল্লাগীরিকে ভালই বিদ্রুপের চোখেই দেখা হত। মিথ্যা ও প্রদর্শনসর্বস্ব ধর্মীয় আচারের সেই বিদ্রুপ যেন শুদ্ধ ও কাব্যিক ভাষায় ফুটে উঠেছিল এই বইগুলোতে যেটার শিক্ষা আমাদের সেই শিশু মনও পেয়েছিল। সেটা ছিল এই যে, মোল্লা মসজিদের যে ধর্ম, সেটা ধর্মের প্রকৃত রূপ নয়।
যদিও ওই বয়সে এই বইগুলো, সেগুলোর লেখকদের মনের ভাব ও দর্শন ধরতেে পারার কথা নয়, আমরা সেটা পারিও নাই। তবে ধর্ম, প্রকৃতি ও জীবন সম্পর্কে জানা এবং জীবনের অভিজ্ঞতায় আমরা এখন বুঝি যে কি সর্বনাশ হয়ে গেছে এই সমাজের। এই সর্বনাশের একমাত্র কারণ মোল্লা মিলিটারি এলায়েন্স।
৭৫ এর বাংলাদেশে যা ঘটেছিল, এখন থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে ইরানে তেমন ঘটনা ঘটেছিল। জরাস্ত্রিয় সাসানিয় শাসকেরা রাষ্ট্রীয়ভাবে জরাস্ত্রিয় একেশ্বরবাদের ধর্মকে ক্রমে তরিকা ভিত্তিক আচরণসর্বস্ব করে ফেলে। তখন সেখানে আচরণের বা তরিকার ধর্ম ও ভাবের ধর্মের মানুষদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ বাড়তে থাকে। তখন সাসানিয় শাসকেরা এই বিবাদ উপলব্ধী করে, তখন তারা রাজ্যকে ইরান ও তুরান এই দুই ভাগে ভাগ করে তরিকার ধর্ম কে ইরানে রেখে ভাবের ধর্মের মানুষদের তুরানে যাবার পথ খুলে দেয় হয়। ফেরদৌসীর মহাকাব্য শাহনামা ইরান-তুরান দ্বন্দ্বের চিত্র তুলে ধরেছে, যেখানে তুরান ছিল প্রতিপক্ষ আফরাসিয়াব কর্তৃক শাসিত ভূমি এবং জনগণ।
মনোবিদ্যার দৃষ্টিকোন থেকে দেখলে বর্তমানের আফগান সীমানা থেকে তুরান ছিল মধ্য এশিয়ার, বিশেষ করে আধুনিক উজবেকিস্তান, কিরগিজস্তান এবং তুর্কমেনিস্তানের মতো অঞ্চলগুলি নিয়ে। আধুনিক ইরান বা সাসানীয় সাম্রাজ্যের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত উপজাতিদের ভূমি এবং জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী তুরান ছিল যোদ্ধা ও যাযাবরদের এলাকা। যোদ্ধা ও যাযাবররা পার্থিব সম্পত্তি অর্থাৎ জমি জমা ও অর্থের তোয়াক্কা করে না। আদর্শ ও সম্মান তাদের কাছে হাজার বিঘা জমির চেয়েও মূল্যবান। অপরদিকে কৃষি সভ্যতার স্থায়ী বাসিন্দারা নিজেদের ব্যক্তিগত জমিজমা ও সম্পত্তি রক্ষার চিন্তায় নিমগ্ন থাকে। জমিই তাদের কাছে সবচেয়ে বড় ঈশ্বর। ধর্ম সম্পত্তি রক্ষার অস্ত্র।
এই বেঁচে থাকার বা সার্ভাইভাল মনোবিদ্যা ঐ অঞ্চলে ধর্মের ধরণ পরিবর্তন করে ফেলে। ইসলাম সহ ইব্রাহিমিক ধর্মগুলোতে দেখা যায় পার্থিব সম্পত্তি, অর্থাৎ জমি জমা ও অর্থের মোহ থেকে মুক্ত হয়ে 'অদৃশ্য' বা ভাবের জগতের প্রতি মনোযোগী হতে।
সেই ভাবের জগতের ইসলাম যখন হাজার খানেক বছর আগে আবার ইরানে গিয়ে সামরিক শক্তিতে বলীয়ান হয়, ভাবের ইসলাম আবার আচরণের বা তরিকার ধর্মে রুপান্তরিত হয়।
ভারতবর্ষে যে মোঘলরা এসেছিল, তারা কিন্তু তুরান থেকেই এসেছিল। তাই তারা সাথে করে এনেছিল ভাবের ধর্ম, যেখানে মানুষে মানুষে বিভেদ নেই, আচরণের বা তরিকার কঠোরতা নেই, সূআচরণ ও খোদার প্রেম সকলের মাঝে বিতরণই ছিল লক্ষ্য। তাই এত ভারতীয় মুসলমান হয়েছিল।
সেই ইসলামকে আবার নষ্ট করছে পাক মার্কিন সামরিকতন্ত্র। যার প্রভাবে ৭৫ এর পর থেকে আমরা মোল্লা মিলিটারি এলায়েন্সে শয়তানের জাতিতে পরিণত হচ্ছি।

No comments:

Post a Comment