|
ঘর যজ্ঞি রান্নায় বামুনঠাকুরের হাতের আসল জাদু দেখতে পেতাম বৌভাতের পরের দিন দুপুরে । সেদিন সব ফেলা তোলা খাওয়ার দিন । বৌভাতের রাতে হয়তো চিংড়ি রান্না হয়েছিল । সেই চিংড়িমাছের মাথাগুলো দিয়ে রান্না হত চিংড়ির মাথার ঝালবড়া । ভেটকির ফিলে কেটে নেওয়ার পর অবশিষ্ট কাটা দিয়ে কাটাচড়চড়ি কী বেঁচে যাওয়া মাছের মুড়ো দিয়ে মুড়িঘণ্ট, ফুলকপির পাতা বাটা - এইসব খুব অকিঞ্চিৎকর অথচ সুস্বাদু রান্না হত । দুপুরের খাওয়া দাওয়া সেরে আত্মীয়রা বাড়ির পথ ধরবেন । তাদেরও নিরাশ করতেন না বামুনঠাকুর আর সীতারাম দাদারা । আদা মৌরিবাটা দিয়ে বানানো কলাইয়ের ডালের কচুরি, শুকনো মতিচুরের লাড্ডু, কিছু শুকনো ভাজাভুজি - তার সাথে তত্ত্বে আসা ফল, চিত্রকূট, প্রজাপতি সন্দেশ নিয়ে ছাঁদা বাঁধতেন তারা । তাদের রওনা করিয়ে বিদায় নিতেন আমাদের যজ্ঞিবাড়ির ভোজের জাদুকররা ।
আজ যখন দূর দেশে বসে ইউটিউবে হারিয়ে যাওয়া সব রান্নার প্রণালী দেখি, বড় মনখারাপ হয় । এই বামুন ঠাকুর, সীতারাম দাদারা ছিলেন এক একজন শিল্পী । সঠিক সংরক্ষণের অভাবে তাদের কত রান্না আজ হারিয়ে গেলো । স্মৃতি সততই বড় সুখের । আজ তাদের পাকশালা থেকে দুটো রেসিপি রইলো,
ছানার পায়েস - ফুল ফ্যাট দুধ ফুটিয়ে দই মিশিয়ে ছানা কাটিয়ে ভালভাবে জল ঝরিয়ে নিন । হাতের চাপে জলঝরানো ছানা একটু বড় দানায় ভেঙে নিন । একটি পাত্রের চিনির পাতলা রস তৈরি করে ছানার দানা মিশিয়ে কম আঁচে ফুটতে দিন । ছানা রান্না হয়ে গেলে ভেসে উঠবে । আঁচ বন্ধ করে দিন । অন্য একটি পাত্রের ফুল ফ্যাট দুধ ফোটাতে দিন । এতে মেশান এলাচ গুঁড়ি এবং চিনি, সাথে ভাঙা কাজুবাদাম । দুধ একটু ঘন হলে, ছানার টুকরো মিশিয়ে ফুটিয়ে আঁচ বন্ধ করে দিন । এই পায়েস ঠান্ডা সবচেয়ে ভালো লাগে ।
ঘি আর ফলের পোলাও - বেদানা, আনারস, নারকেল কুচো করে নিন । কুচিয়ে নিন গাজর, বিনস, মটরশুঁটি । কাজু, কিশমিশ ভিজিয়ে রাখুন । বাসমতি চাল ধুয়ে জল ঝরিয়ে শুকিয়ে নিন । কড়াইতে ঘি দিয়ে তাতে গোটা গরমশলা, তেজপাতা, জিরে ফোড়ন দিন । সমস্ত সবজি আর কুচনো ফল মিশিয়ে নাড়ুন । এতে চাল মিশিয়ে পরিমাণমতো জল দিন । কাজু কিশমিশ দিয়ে দিন । নুন মিষ্টি মেশান । জল টেনে চাল এবং সবজি সেদ্ধ হলেই তৈরি ঘি আর ফলের পোলাও ।
ছবিতে সবজি ভাত আর চিলি চিকেন 

No comments:
Post a Comment