Wednesday, June 11, 2025

কালো জাদুর প্রভাব ও পরিত্রাণের উপায়

 


কালো জাদু হলো এক ধরনের প্রাচীন তন্ত্রমন্ত্র বা অপতান্ত্রিক পদ্ধতি, যার মাধ্যমে অশুভ শক্তিকে আহবান করে জীবজগতের ক্ষতি সাধনের চেষ্টা করা হয়। এটি এমন একটি ঘৃণিত কাজ, যা ব্যক্তির নৈতিকতা, বিশ্বাস ও মানবিকতাকে ভেঙে দেয়। সাধারণত হিংস্র উদ্দেশ্যে, কারো ক্ষতি সাধনের লক্ষ্যে বা নিজ স্বার্থে এই জাদু প্রয়োগ করা হয়।

জাদুটোনা এগুলো নতুন কিছু নয়, বরং যুগের পর যুগ, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে একশ্রেণির নিকৃষ্ট লোক এর সঙ্গে জড়িত ছিল এবং আছে।

সুলাইমান (আ.)-এর যুগে জাদুবিদ্যার প্রচলন ছিল। তবে তিনি জাদুকর ছিলেন না। তাঁর মৃত্যুর পর কিছু শয়তান জাদুর বই মাটির নিচে লুকিয়ে রেখে মানুষের নিকট গুজব ছড়িয়ে দেয় যে এই বইগুলো সুলাইমান আলাইহিসসালামের শক্তির উৎস। সাধারণ মানুষ তখন বইগুলো বের করে এবং এগুলো শিখে এই নিকৃষ্ট কাজে জড়িয়ে যায়।
কিছু মানুষ জিন ও শয়তানের মাধ্যমে কিছু অলৌকিক বা ভেলকি দেখাতো। তা দেখে অন্যরাও আকৃষ্ট ও অভিভূত হয়ে যেত।

কালো জাদুর প্রভাব ও পরিণতি

এই জাদুর প্রভাবে সুস্থ-সবল মানুষ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে, চিকিৎসায় কোনো ফল না-ও আসতে পারে, মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এমনকি এটি একটি পরিবার বা একটি চাকরি, ব্যবসা বা সামাজিক সম্পর্ক ধ্বংস করে দিতে সক্ষম।

বাড়তে পারে শত্রুতা, ঘটতে পারে অস্বাভাবিক আচরণ বা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটানো, কাউকে অসুস্থ বা উন্মাদ করে তোলা, ব্যবসা বা সৌভাগ্য বন্ধ করে দেওয়া, অন্যের প্রতি ঘৃণা বা ভালোবাসা জাগানো ছাড়াও আরো অস্বাভাবিক কিছু দেখা দেয় মানুষের আচরণে।

ইসলামে কালো জাদুর অবস্থান

ইসলাম ধর্মে কালো জাদু তথা ক্ষতিকর তন্ত্রমন্ত্র সম্পূর্ণরূপে হারাম এবং কুফরি কাজ হিসেবে চিহ্নিত। এই পাপ কাজে লিপ্ত ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে এটি করে, তবে সে ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত হয়। ইসলামের দৃষ্টিতে এমন ব্যক্তির জন্য অনুশোচনা ও তাওবা একান্ত প্রয়োজন নতুবা ইসলামী আইন অনুযায়ী কঠোর দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার যোগ্য সে।

নবী করিম (সা.) বলেন, তোমরা সাতটি ধ্বংসকারী জিনিস থেকে বেঁচে থাকো১. আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা, ২. জাদু করা, ৩. অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা, ৪. সুদ খাওয়া, ৫. এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করা, ৬. যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন করা, ৭. নিরপরাধ নারীর প্রতি অপবাদ দেওয়া।

(সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৮৬৪)

আধুনিক সময়ে কালো জাদুর বিস্তার

বর্তমানে অনেক আলেমের মতে, সমাজে কালো জাদুর ব্যবহার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। এ থেকে মুক্ত থাকতে আমাদের কিছু নির্দিষ্ট আমল ও কোরআনি দোয়ার চর্চা করা প্রয়োজন, যার মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব।

জাদু থেকে রক্ষার করণীয় কিছু আমল

১. সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার করে সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়া।

(আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৮২)

২. এই দোয়া পাঠ করা—‘বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদুরু মাআসমিহি শাইউন ফিল আরদি ওয়ালা ফিসসামা, ওয়াহুয়াস্ সামিউল আলীম।

(মুসতাদরাক হাকেম, হাদিস : ১৯৩৮)

৩. ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পড়া। (বুখারি, হাদিস : ২৩১১)

৪. ঘুমানোর আগে সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়ে ফুঁ দিয়ে সারা শরীরে হাত বুলানোদিনে তিনবার। (বুখারি, হাদিস : ৫০১৭)

৫. সকাল-সন্ধ্যায় দোয়া পড়া—‘আল্লাহুম্মা আফিনি ফি বাদানি, আল্লাহুম্মা আফিনি ফি সামই, আল্লাহুম্মা আফিনি ফি বাসারি। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৯০)

৬. আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাক পাঠ করা।

(মুসলিম, হাদিস : ২৭০৯)

নবী করিম (সা.)-এর ওপর জাদু ও তাঁর ঝাড়ফুঁকের দোয়াটি পাঠ করা। প্রিয় নবী (সা.)-এর ওপরও একবার কালো জাদু প্রয়োগ করা হয়েছিল। তখন ফেরেশতা জিবরাইল (আ.) তাঁকে নিম্নোক্ত দোয়াটি শিখিয়েছিলেন :

বিসমিল্লাহি আরকিকা। মিন কুল্লি শাইয়িন ইউজিকা। ওয়া মিন শাররি কুল্লি নাফসিন আও আইনিন হাসিদিন, আল্লাহু ইয়াশফিক। বিসমিল্লাহি আরকিক।

(সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২১৮৬)

সুরা ফাতিহা সুরা শিফা নামে পরিচিত। এটি আরোগ্যের জন্য উপযোগী।

জাদু, কুফরি ও শয়তানের ফাঁদ থেকে বাঁচতে হলে ঈমান ও পবিত্রতার সঙ্গে থাকতে হবে এবং আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে হবে।

No comments:

Post a Comment